ঢাকা মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট, ২০২৫

ঘোড়া কেন দাঁড়িয়ে ঘুমায়

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২৫, ১১:৪৭ এএম
ঘোড়া দাঁড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। ছবি- সংগৃহীত

ঘোড়াদের আমরা বেশিরভাগ সময় মাঠে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। এমনকি ঘুমানোর সময়ও তারা মাটিতে শোয়ার বদলে দাঁড়িয়ে থাকে। রাতেও দেখা যায়- ঘোড়ারা মাথা নিচু করে, চোখ আধা বন্ধ রেখে একপ্রকার ‘দাঁড়িয়ে ঘুমায়’। কিন্তু কেন এমনটা করে তারা? মাটিতে শুয়ে ঘুমানো কি ওদের পক্ষে আরামদায়ক নয়?

আসলে ঘোড়ার এই ঘুমের ধরন তাদের বেঁচে থাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।

ঘোড়া তৃণভোজী প্রাণী- ঘাস-পাতা খেয়ে বাঁচে। প্রাকৃতিক পরিবেশে এদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় বাঘ, সিংহ, চিতা, হায়নার মতো শিকারী মাংসাশী প্রাণীরা। তাই ঘোড়ার শরীর গঠিত হয়েছে এমনভাবে, যাতে বিপদ দেখামাত্র দ্রুত পালাতে পারে।

যদি ঘোড়া মাটিতে শুয়ে ঘুমায়, তাহলে শিকারীর আক্রমণ থেকে বাঁচতে সময় নষ্ট হবে। শোয়া অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়াতে কিছুটা সময় লাগে, আর এ সুযোগেই শিকারীরা আক্রমণ করতে পারে। তাই ঘোড়া দাঁড়িয়ে ঘুমায়- যাতে যেকোনো সময় দৌড়াতে পারে। এটি তাদের একটি আত্মরক্ষার উপায়।

ঘোড়ার ঘুম দুই ধরনের- ১. হালকা ঘুম- এই ঘুম ঘোড়া দাঁড়িয়ে থেকেই ঘুমাতে পারে। ২. গভীর ঘুম বা রেম স্লিপ- এই ঘুমে যেতে হলে ঘোড়াকে শুতে হয়।

গভীর ঘুমেই ঘোড়া স্বপ্ন দেখে, শরীর পূর্ণ বিশ্রাম পায়। গবেষণায় দেখা গেছে, একটি পূর্ণবয়স্ক ঘোড়ার দিনে অন্তত ২৫ মিনিটের মতো গভীর ঘুম প্রয়োজন হয়।

তবে সব সময় ঘোড়া মাটিতে শুয়ে ঘুমাতে চায় না। যদি নিরাপত্তাহীনতা থাকে, তাহলে তারা কেবল দাঁড়িয়ে হালকা ঘুম নেয়। বন্য পরিবেশে এক দল ঘোড়ার মধ্যে কিছু ঘোড়া ঘুমায়, বাকিরা পাহারায় থাকে।

ঘোড়ার দেহে রয়েছে একটি বিশেষ শারীরিক গঠন, যার নাম ‘স্টে অ্যাপারেটাস (Stay Apparatus)’।

এটি মূলত পায়ের রগ (টেন্ডন) ও সন্ধি-তন্তুর (লিগামেন্ট) বিশেষ গঠন, যা ঘোড়াকে পেশির শক্তি খরচ না করেই দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করে। ফলে তারা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও ক্লান্ত হয় না।

আমরা যেমন কোনো কিছুর সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়ালে কম শক্তি খরচ হয়, তেমনি ঘোড়ার শরীর নিজেই নিজের ভার ধরে রাখতে পারে।

যদি ঘোড়া দীর্ঘ সময় গভীর ঘুম না পায়, তাহলে তা শরীরের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঘোড়া কখনো কখনো ক্লান্ত হয়ে দাঁড়ানো অবস্থাতেই পড়ে যায়। ঘুমের অভাবে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু ঘোড়াই নয়, আরও কিছু বড় তৃণভোজী প্রাণী যেমন- হাতি, জিরাফ, বাইসন, জেব্রা।

তারাও কিছু সময় দাঁড়িয়ে ঘুমাতে পারে। তবে তারা গভীর ঘুমের জন্য বেশিরভাগ শুয়ে থাকে।