রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৫, ০৭:০২ পিএম

মানসিক চাপ ও উদ্বেগের কারণে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়?

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৫, ০৭:০২ পিএম

ছবি - সংগৃহীত

ছবি - সংগৃহীত

মানসিক চাপ বা উদ্বেগ শুধু মনের ভেতর সীমাবদ্ধ থাকে না- এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে শরীরের প্রতিটি অংশে, বিশেষত আমাদের ত্বকে। ত্বক, যা শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ, সেটিই হয়ে ওঠে আমাদের মানসিক অবস্থার এক নিঃশব্দ প্রতিফলন। নিউরোসায়েন্টিস্ট ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মারিয়াম ম্যাটার তার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই এই সত্যটি উপলব্ধি করেছেন।

ছোটবেলা থেকেই তিনি অত্যন্ত সুড়সুড়ি-সংবেদনশীল ছিলেন, কিন্তু নিকটজন মৃত্যু ও কোভিড-১৯ মহামারির শুরুর পর তিনি লক্ষ্য করেন- যে কোনো ধরনের স্পর্শই তার কাছে অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে। অপ্রত্যাশিত স্পর্শে উদ্বেগ, অস্থিরতা এমনকি স্বামীর সঙ্গেও শারীরিক ঘনিষ্ঠতা এড়িয়ে চলা- এসবই তার জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়ায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, উদ্বেগ বা মানসিক চাপ শরীরের ‘লড়াই-অথবা-পালাও’ (Fight or Flight) প্রতিক্রিয়াকে সক্রিয় করে। এ সময় শরীরে নিঃসৃত হয় কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন নামের স্ট্রেস হরমোন, যা হৃদস্পন্দন, শ্বাস-প্রশ্বাস ও রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়। এই হরমোনের প্রভাবে শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং ত্বক হয়ে ওঠে সংবেদনশীল। কখনো দেখা দেয় হঠাৎ গরম লাগা, চুলকানি বা ত্বকে জ্বালাপোড়া অনুভব।

মারিয়াম জানান, তার ত্বকের অস্বাভাবিক সংবেদনশীলতা ছাড়াও অতীতে পরীক্ষার সময় চোখের পাতায় হালকা একজিমা দেখা দিয়েছিল। আগে কখনো এমন হয়নি।

এ বিষয়ে ফার্মাসিস্টরা জানান, এটি আসলে অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে হওয়া একজিমার ফ্লেয়ার আপ। কিছুদিন সংবেদনশীল ত্বকের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের পর সমস্যাটি নিয়ন্ত্রণে আসে।

তার আরেকটি অভিজ্ঞতা হলো ফর্মিকেশন- একটি অদ্ভুত অনুভূতি যেখানে মনে হয় ত্বকের ওপর বা নিচে ছোট পোকামাকড় হামাগুড়ি দিচ্ছে। ‘প্রথমবার এমনটা অনুভব করলে আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়ি,’ বলেন মারিয়াম। ‘পরে বুঝতে পারি, এটি আসলে আমার উদ্বেগের শারীরিক প্রকাশ।’ ফর্মিকেশন শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ Formicare থেকে, যার অর্থ ‘পিঁপড়া হামাগুড়ি দেওয়া’।

রাতের বেলা ঘুমানোর সময়ও উদ্বেগের প্রভাব দেখা দেয়। অস্থির পা সিন্ড্রোমের কারণে ঘুমানোর আগ মুহূর্তে পা নাড়ানোর প্রবল ইচ্ছা হয়, যেন শরীরে অজানা শক্তি জমে আছে। এই অস্থিরতা ঘুমে বাধা দেয়, আর ঘুম না হলে উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়- ফলে তৈরি হয় এক চক্রবদ্ধ সমস্যা।

উদ্বেগের আরেকটি শারীরিক প্রকাশ হলো সাইকোজেনিক চুলকানি, যা শারীরিক নয় বরং মানসিক কারণেই সৃষ্টি হয়। গুরুত্বপূর্ণ মিটিং, সাক্ষাৎকার বা উপস্থাপনার আগে তার বাহুতে অস্বস্তিকর চুলকানি দেখা দেয়। আঁচড়াতে গিয়ে কখনও লাল দাগ পড়ে যায়, যা পরিস্থিতিকে আরও বিব্রতকর করে তোলে।

চাপ ও উদ্বেগ ত্বকের আরেক সাধারণ সমস্যা ব্রণকেও বাড়িয়ে দেয়। স্ট্রেস হরমোনের কারণে ত্বকের তেল উৎপাদন বেড়ে যায়, ছিদ্র বন্ধ হয়ে ব্যাকটেরিয়া জমে- ফলস্বরূপ দেখা দেয় ফোলা, লালচে ব্রণ। ‘পরীক্ষার সময় বা জীবনের বড় পরিবর্তনের সময়ে আমার মুখ ক্রিসমাস ট্রির মতো জ্বলে উঠত,’ বলেন মারিয়াম। ‘তখনই বুঝতাম, আমার মন ঠিক নেই।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সম্পর্কটি একমুখী নয়। ত্বকের রোগ যেমন একজিমা, সোরিয়াসিস বা ব্রণ মানসিক চাপ বাড়াতে পারে, আবার মানসিক চাপও এসব ত্বকের সমস্যাকে তীব্র করে তোলে। এতে গড়ে ওঠে এক দুষ্টচক্র-চাপ→ ত্বকের সমস্যা→ আত্মবিশ্বাসের অভাব→ আরও চাপ।

মানসিক সুস্থতা এবং ত্বকের স্বাস্থ্যের এই গভীর সংযোগ আমাদের মনে করিয়ে দেয়-ত্বকের যত্ন নিতে হলে মনকেও যত্ন নিতে হবে। চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম, ধ্যান, পর্যাপ্ত ঘুম, থেরাপি বা কাউন্সেলিং কার্যকর হতে পারে। আর যদি উদ্বেগ বা ত্বকের সমস্যা দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে, তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Link copied!