রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২৫, ১০:১৮ পিএম

ডেনিম: ফ্যাশনের জৌলুসের আড়ালে এক বেদনার গল্প( DO NOT PUBLISH)

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২৫, ১০:১৮ পিএম

ডেনিম: ফ্যাশনের জৌলুসের আড়ালে এক বেদনার গল্প( DO NOT PUBLISH)

আজকের দিনে ডেনিম আমাদের স্টাইল স্টেটমেন্ট ও ফ্যাশনের অন্যতম প্রধান উপাদান। রাস্তাঘাটে, অফিসে, ক্যাফেতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায়-প্রায় সব জায়গায় ছড়িয়ে আছে ব্লু জিন্সের রাজত্ব। কেউ ডেনিম পরে ভাবেন নিজেকে আলাদা করার জন্য, কেউ ভাবেন সাহসিকতার প্রতীক হিসেবে। কিন্তু ডেনিমের ইতিহাস অন্যরকম এক ব্যথাদায়ক অধ্যায় বহন করে, যা অনেকের অজানা।

ডেনিম শব্দটির উৎস ফরাসি ‘ডি নীমস’ থেকে, যার অর্থ ‘নীমস শহর থেকে আসা’। নীমস হলো ফ্রান্সের একটি শহর, যেখানে তৈরি হত মোটা ও টেকসই সুতি কাপড়, যাকে বলা হত ‘সার্জ ডি নীমস’ অর্থাৎ নীমস শহরের সার্জ কাপড়। পরে ‘সার্জ ডি নীমস’ থেকে সংক্ষিপ্ত হয়ে ‘ডেনিম’ নামে পরিচিত হয়। ডেনিম কাপড়ের বৈশিষ্ট্য ছিল টেকসই ও মোটা বুনন, যা প্রধানত কাজের পোশাক হিসেবে ব্যবহৃত হত।

তবে ডেনিমের উৎপত্তি ও এর পেছনের করুণ ইতিহাস জানতে গেলে আমাদের যেতে হয় পশ্চিম আফ্রিকায়। নাইজেরিয়া, ঘানা, সিয়েরা লিওন, লিবেরিয়া ও গাম্বিয়ার মতো দেশে একসময় দাসশ্রেণীর মানুষদের জন্য নির্ধারিত ছিল মোটা, রুক্ষ ও টেকসই কাপড়, যাকে ডেনিম, রুক্ষ লিনেন বা মোটা সুতি বলা হতো। তখন এটি ছিল শৃঙ্খলের প্রতীক। দাসদের দেওয়া হত এই কাপড়, যাতে তারা ক্ষেত-খামারে, কারখানায় ও গৃহস্থালির কঠোর পরিশ্রমে টিকে থাকতে পারে।

প্রকাশ্যে এই কাপড়কে ‘নিগ্রো কাপড়’ বলা হত, যা তাদের আলাদা করে চিহ্নিত করার জন্য ব্যবহার করা হত। তাদের পোশাক বেছে নেওয়ার অধিকার ছিল না; মালিকেরা ঠিক করত কে কী পরবে। তাদের পরানো হত এই মোটা কাপড়, যাতে সহজে ছিঁড়ে না যায় এবং দীর্ঘদিন টিকে থাকে।

ডেনিম ব্যবহারের পেছনে কাজের সুবিধার অজুহাত ছিল, কিন্তু মূল উদ্দেশ্য ছিল দাসদের সামাজিকভাবে আলাদা করে রাখা। যেন এক নজরে বোঝা যায় কে স্বাধীন, কে দাস। এই পোশাক তাদের ওপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া হত, যা তাদের মুক্তচিন্তা ও আত্মবিশ্বাসকে ধ্বংস করার কৌশল ছিল।

অদ্ভুত হলেও সত্য, আজকের জনপ্রিয় ব্লু ডেনিমের নীল রংয়ের উৎস পশ্চিম আফ্রিকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। ইন্ডিগো গাছ থেকে নীল রং তৈরি ও কাপড়ে রঙ বসানোর জটিল প্রক্রিয়া শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তাদের সামাজিক ও পারিবারিক ঐতিহ্যের অংশ ছিল। তবে দুঃখের বিষয়, এই দক্ষতা ও ঐতিহ্য দাস মালিকেরা শোষণ করেছিল। দাসদের দিয়ে নামমাত্র মূল্যে ইন্ডিগো চাষ ও রং তৈরির কাজ করানো হতো।

১৮৭৩ সালে লিভাই স্ট্রস ও জ্যাকব ডেভিস ব্লু জিন্সের পেটেন্ট নেন, যার ফলে ডেনিম প্যান্ট টেকসই ও কার্যকরী হয়। ধীরে ধীরে এটি শ্রমিক, কাউবয় ও অন্যান্য কঠোর পরিশ্রমী মানুষের পোশাক হয়ে ওঠে।

ডেনিম শুধু পোশাক নয়, এটি এক ধরনের সামাজিক চিহ্ন হয়ে ওঠে। শিল্পী, কবি, সঙ্গীতজ্ঞরা এটি গ্রহণ করেন নিজের স্বাতন্ত্র্য প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে। বর্ণবাদ, বৈষম্য ও দাসত্বের বিরুদ্ধে যেসব মানুষ লড়াই করেছেন, তাদের প্রতীক হয়ে ওঠে ডেনিম।

পরবর্তীতে সঙ্গীত, চলচ্চিত্র, রাজপথসহ নানা জায়গায় ডেনিম হয়ে উঠে বিক্ষোভ ও পরিবর্তনের ভাষা। এটি স্বাধীনতা, প্রতিবাদ ও আত্মপরিচয়ের শক্তিশালী প্রকাশভঙ্গি হিসেবে জায়গা করে নেয়

আজ আমরা ডেনিমকে ভালোবাসি, স্টাইলের অংশ বানাই। কিন্তু ডেনিমের প্রতিটি সেলাই, প্রতিটি রঙের ফোঁটায় লুকিয়ে আছে এক ভুলে যাওয়া ইতিহাস। যারা আজ ডেনিম পরে নিজেদের প্রকাশ করেন, তারা হয়তো জানেন না-এই পোশাক একসময় ছিল দাসত্বের শেকল, যেখানে পছন্দ করার অধিকার ছিল না। তাদের ঘামে, যন্ত্রণায় গড়ে উঠেছিল এই কাপড়, তাদের নাম আজ অবিচারিকভাবে ভুলে যাওয়া।

তথ্যসূত্র: পিবিএস ‘রিভেটেড: দ্য হিস্ট্রি অফ জিন্স’, হিস্ট্রি ডট কম, লিভাইসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, ওয়াইয়ার্ড ডট কম, উওউবি ডট ওআরজি।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!