গ্রামবাংলার বিশেষ এক স্বাদের নাম খেজুরের রস। প্রাকৃতিকভাবে সংগৃহীত এই রস শুধু মুখরোচক পানীয় নয়, বরং পুষ্টিগুণেও ভরপুর। ভোরের প্রথম আলো ফোটার আগেই গাছিদের সংগ্রহ করা টাটকা খেজুরের রস শরীর ও মনকে চাঙ্গা করে তোলে। আমাদের খাদ্য সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়ার পাশাপাশি এটি স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও বেশ উপকারী।
আজ জানবো খেজুরের রসের নানা উপকারিতার কথা-
১. প্রাকৃতিক শক্তিদায়ক
খেজুরের রস প্রাকৃতিক চিনি ও শর্করা সমৃদ্ধ। এটি তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায় এবং শীতের সকালে এক কাপ রস ক্লান্তি দূর করে শরীরকে চাঙ্গা করে তোলে।
২. পুষ্টির আধার
খেজুরের রসে ভিটামিন বি, সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামসহ নানা খনিজ উপাদান রয়েছে। এসব উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৩. হজমে সহায়ক
খেজুরের রসে থাকা প্রাকৃতিক এনজাইম হজমের জন্য উপকারী। এটি অন্ত্রের গঠন মজবুত করে এবং পেটের গ্যাস বা বদহজমের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
খেজুরের রসে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান শরীরে টক্সিন জমতে বাধা দেয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত পান করলে সর্দি-কাশির প্রকোপও কমে।
৫. হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
রসে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম হাড়ের গঠন মজবুত করতে সাহায্য করে। বয়স্কদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী।
৬. রক্তশূন্যতা নিরাময়ে সহায়ক
খেজুরের রসে আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত পান করলে রক্তের হিমোগ্লোবিন মাত্রা বাড়ে।
৭. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি
প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন থাকায় খেজুরের রস ত্বক সুস্থ রাখে, উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ত্বকের বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করে।
৮. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
খেজুরের রস নিয়মিত পান করলে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
খেজুরের রস কখন খাওয়া ভালো?
খেজুরের রস খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায় এবং এতে জীবাণু জন্ম নেওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই সকালে ভোরে সংগ্রহের পরপরই খাওয়া সবচেয়ে ভালো। খালি পেটে বা সকালের নাশতার আগে খেলে এটি হজমের জন্য উপকারী এবং দ্রুত শক্তি জোগায়।
খেজুরের রস খাওয়ার সতর্কতা
১/ দীর্ঘক্ষণ সংরক্ষণ করতে হলে অবশ্যই ফুটিয়ে নিতে হবে।
২/ বেশি ঠান্ডা রস বা বরফ মিশিয়ে খেলে সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা হতে পারে।
৩/ রসে প্রাকৃতিক চিনি বা গ্লুকোজ বেশি থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়।
৪/ ছোট শিশু, গর্ভবতী নারী এবং গুরুতর অসুস্থ রোগীদের ক্ষেত্রে সতর্কভাবে খাওয়াতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উত্তম।
৫/ রাস্তার পাশের বা ঢেকে না রাখা রস দূষিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পরিচ্ছন্নভাবে সংগ্রহ করা ও নিরাপদ পাত্রে রাখা রসই খাওয়া উচিত।
আপনার মতামত লিখুন :