রবিবার, ০৫ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৫, ০৭:২৯ পিএম

‘বকশিশ’ যেভাবে ঘুষে পরিণত হলো

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৫, ০৭:২৯ পিএম

বকশিশ। ছবি- সংগৃহীত

বকশিশ। ছবি- সংগৃহীত

‘বকশিশ’ শব্দটি সবার কাছেই পরিচিত। বাংলা একাডেমি অভিধান অনুযায়ী, এর অর্থ পারিতোষিক, পুরস্কার, উপহার কিংবা পাওনার অতিরিক্ত কিছু দেওয়া। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি তার পরিশ্রম বা দায়িত্বের বাইরেও কিছু পেলে সেটিকে বলা হয় বকশিশ। তবে এর একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো, এটি স্বেচ্ছায় দেওয়া হতে হবে—চাপ প্রয়োগ করে নয়।

বকশিশ প্রথার ইতিহাস নিয়ে স্পষ্ট কিছু জানা না গেলেও ধারণা করা হয়, ষোড়শ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে এটি প্রথম চালু হয়। সে সময় ছাত্র, ব্যবসায়ী ও পর্যটকরা বিভিন্ন কর্মকর্তাকে উপঢৌকন দিয়ে নিজেদের অবস্থান সহজ করতেন। পরে এটি ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

বকশিশের প্রকৃত স্বরূপ হলো, স্বেচ্ছায় খুশি হয়ে কাউকে কিছু দেওয়া। কেউ খুশি হয়ে দেয়, কেউ আবার খুশি রাখার জন্য আগেভাগেই দিয়ে রাখে। কখনো নিজে খুশি হয়, আবার কখনো অন্যকে খুশি করতেই বকশিশ দেওয়া হয়। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিষয়টি ভিন্ন। এখন অনেক ক্ষেত্রেই বকশিশ দিতে হয় বিরক্ত হয়ে, যেখানে খুশির ছিটেফোঁটাও নেই।

বর্তমানে বকশিশের বিস্তার এতটাই ব্যাপক যে, জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর ছায়া পড়েছে। অফিসে কোনো কাজ করাতে গেলে ‘বকশিশ’ ছাড়া তা সম্পন্ন হওয়া যেন অসম্ভব হয়ে উঠেছে। প্রকাশ্যে ঘুষ না বললেও এটিকে ‘ভদ্র ভাষায়’ বকশিশ বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একবার একটি সরকারি অফিসে কাগজ সত্যায়নের জন্য গেলে গেটেই বলা হলো, ‘আজকে লাগলে ৫ হাজার, ৭ দিন পরে লাগলে ১ হাজার।’ অর্থাৎ, প্রয়োজনীয় টাকা না দিলে আপনি ভেতরেই ঢুকতে পারবেন না। এটি ঘুষেরই নামান্তর, শুধু নামে ভদ্রতা।

হোটেল বা রেস্তোরাঁয় খাওয়ার পর ওয়েটারকে ‘টিপস’ না দিলে আপনাকে অভদ্র ভাবা হয়। গাড়ি পার্কিং করে সালাম দেওয়া পার্কিং কর্মচারীর কাছেও কিছু না দিলে মুখ কালো করে তাকিয়ে থাকে। গাড়ি ভাড়া করলেও নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে আলাদা করে ড্রাইভার ও হেলপারদের বকশিশ দিতে হয়। না দিলে তারা রাগ করে, আর কম দিলে নিতেও চায় না। তারা বললেও ‘খুশি হয়ে দেন’, বাস্তবে না দিলে আপনি খারাপ মানুষ!

প্রশাসনের অবস্থা আরও করুণ। ট্রাফিক পুলিশকে ৫-১০ টাকা দিলে সিগন্যাল ছেড়ে দেয়। কোনো সময় ইচ্ছাকৃতভাবে জ্যাম সৃষ্টি করে আদায় করা হয় টাকা। থানায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিকে খাবার দিতে হলেও দিতে হয় টাকা। হাসপাতালেও এই চিত্র ব্যতিক্রম নয়। স্ট্রেচার নিতে গেলেও কর্মচারীদের ‘বকশিশ’ না দিলে হয়রানি হয়। এমনকি পশুর হাটেও কিছু লোকজন থাকেন, যাদের ‘খুশি’ না করলে আপনার কেনাকাটাও ব্যাহত হতে পারে।

উচ্চপর্যায়ের বকশিশ প্রথাও এখন প্রতিষ্ঠিত। কেউ চাকরি থেকে অবসর নিয়ে পেনশন তুলতে গেলে সেখানে নির্দিষ্ট ফাইল ঘোরানো, সুপারিশ করানো, অনুমোদন আনার পেছনে ‘বকশিশের’ বড় একটি অংশ চলে যায়। অনেক ক্ষেত্রে ৭ লাখ টাকা পেনশন তুলতে ১ লাখ পর্যন্ত বকশিশ দিতে হয়। এটা কি তাহলে আর খুশির বহিঃপ্রকাশ, নাকি এটি রীতিমতো চাঁদাবাজি?

এই সমাজে এখন বকশিশ না দেওয়া মানে আপনি ‘অভদ্র’, ‘অসামাজিক’। আর কম দিলে আপনি ‘কৃপণ’। এর ফলে একধরনের সামাজিক ও মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। অনেকেই চান না, কিন্তু পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করে। ফলে বকশিশ এখন আর ইচ্ছাধীন নয়, বরং একধরনের অনৈতিক প্রথায় রূপ নিয়েছে।

এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার একমাত্র উপায় হলো মানসিকতার পরিবর্তন, সমাজের সংস্কার এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ। শুধু আইন দিয়ে এই অভ্যাস বন্ধ হবে না, প্রয়োজন মানুষকে সচেতন করা এবং মূল্যবোধে পরিবর্তন আনা।

একসময় বকশিশ ছিল আন্তরিকতার প্রতীক। আজ তা হয়ে দাঁড়িয়েছে অনিয়ম ও দুর্নীতির সামাজিক মোড়ক। এখান থেকে মুক্তির পথ কঠিন হলেও অসম্ভব নয়—শুধু প্রয়োজন আমাদের সদিচ্ছা ও সম্মিলিত সচেতনতা।

Link copied!