আপনি যখন এক কামড়ে একটি মুচমুচে আপেল খান, তখন আপনার চোয়ালের পেশি শক্ত হয়ে দাঁতের ফাঁকে ফলটিকে চেপে ধরে। আবার যখন সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠেন, তখন নিতম্বের একটি বড় পেশি- যার নাম গ্লুটিয়াস ম্যাক্সিমাস- আপনাকে মাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে ওপরে তুলতে সাহায্য করে। এই সময়, আপনার হৃদপিণ্ড ছন্দে ছন্দে স্পন্দিত হয় এবং সারাদিনই রক্ত সঞ্চালন করে চলে। এই প্রতিটি পেশিই শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করে, কিন্তু প্রশ্ন হলো- মানবদেহের সবচেয়ে শক্তিশালী পেশী আসলে কোনটি?
এই প্রশ্নের একক কোনো উত্তর নেই। কারণ ‘শক্তি’ বলতে আপনি কী বোঝাচ্ছেন, সেটাই ঠিক করে দেবে কোন পেশী সবচেয়ে শক্তিশালী। টাফ্টস ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের অধ্যাপক সারাহ গিলিল্যান্ড বলেন, ‘যদি আমরা মোট বল বা টর্ক বিবেচনা করি, তাহলে বড় পেশীগুলোকে সবচেয়ে শক্তিশালী বলা যায়। কিন্তু যদি শক্তি মাপা হয় পেশীর আকারের তুলনায়, তাহলে অনেক ছোট পেশীও সেই তালিকায় উঠে আসতে পারে।’
সাউথ ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডমিনিক ডি’আগোস্টিনো বলেন, ‘বিজ্ঞানীরা সাধারণত পেশীর সর্বোচ্চ বল উৎপাদন ক্ষমতাকেই শক্তি হিসেবে বিবেচনা করেন। কখনো কখনো তারা সহনশীলতা, অর্থাৎ কোন পেশী কতক্ষণ ধরে কাজ করতে পারে, সেটাও গুরুত্ব দিয়ে দেখেন।’
শরীরের সবচেয়ে বড় পেশী হলো গ্লুটিয়াস ম্যাক্সিমাস, যা নিতম্বের পেছনে অবস্থিত। দাঁড়ানো, সিঁড়ি বাওয়া কিংবা দৌড়ানোর সময় এই পেশী শরীরকে ভারসাম্য ও গতি দেয়। এর বড় আকৃতি ও দ্রুত-টুইচ ফাইবারের ঘনত্বের কারণে এটি বিশাল টর্ক উৎপাদন করতে পারে। একইভাবে, উরুর সামনের দিকে থাকা চারটি পেশীর গ্রুপ- যাকে কোয়াড্রিসেপস বলা হয়। এটি হাঁটু সোজা করতে কাজ করে এবং শক্তির দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে যেহেতু এটি একক পেশী নয়, বরং একটি দল, তাই তাদের শক্তি আলাদাভাবে পরিমাপ করা কঠিন।
একটি ছোট কিন্তু অবিশ্বাস্য শক্তিশালী পেশী হলো মাসেটার, অর্থাৎ চোয়ালের চিবানোর পেশী। এর আকার ছোট হলেও, এটি এমনভাবে চোয়ালে বসানো যে এক কামড়ে প্রায় ৯০ কেজি পর্যন্ত জোর প্রয়োগ করতে পারে। এই কারণেই অনেকে একে আকারের তুলনায় সবচেয়ে শক্তিশালী পেশী হিসেবে বিবেচনা করেন।
শক্তি মানে যদি হয় ধৈর্য ও সহনশীলতা, তাহলে হৃদপিণ্ড অবশ্যই সবার উপরে। এটি প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ বার স্পন্দিত হয় এবং প্রায় ৯,৫০০ লিটার রক্ত পাম্প করে। এমনকি ঘুমের সময়ও এর কার্যক্রম বন্ধ হয় না। এদিকে, জিহ্বা সারাক্ষণ খাবার মিশ্রিত করে, কথা বলায় সাহায্য করে এবং লালা গিলে নেওয়ার কাজ করে চলে। চোখের পেশী তো একেবারেই ব্যস্ত; মাত্র এক ঘণ্টা পড়াশোনার সময়েই প্রায় ১০,০০০ বার নড়াচড়া করে!
সর্বশেষে বলা যায়, মানবদেহের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী পেশী’ নির্ভর করে আপনি শক্তির কোন দিকটিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তার উপর। সবচেয়ে বেশি জোর প্রয়োগ করলে গ্লুটিয়াস ম্যাক্সিমাস এগিয়ে, আকারের তুলনায় জোর চাইলে মাসেটার সেরা, আর সহনশীলতা চাইলে হৃদপিণ্ডের জুড়ি মেলা ভার। তাই শরীরের প্রতিটি পেশীরই নিজস্ব শক্তি রয়েছে- কাজ বুঝে সেরার মুকুটটা ঘুরে ফিরে তাদের মাথায় ওঠে।