বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


এস ডি সুব্রত

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২৪, ০৩:০১ পিএম

নিবন্ধ: দুর্গাপূজার ইতিহাস ও তাৎপর্য

এস ডি সুব্রত

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২৪, ০৩:০১ পিএম

নিবন্ধ: দুর্গাপূজার ইতিহাস ও তাৎপর্য

১৮০৯ সালে চিত্রশিল্পী সেবক রাম (১৭৭০-১৮৩০) অঙ্কিত পেইন্টিং ইন পাটনা স্টাইল সূত্র : উইকিপিডিয়া কমন্স

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে উদযাপিত হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। দেবী দুর্গা হলেন- দুর্গতিনাশিনী অর্থাৎ সকল দুঃখ দুর্দশার বিনাশকারী। পুরাকালে দেবতারা মহিষাশুরের অত্যাচারে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। তখন ব্রহ্মা বিষ্ণু ও মহেশ্বরের শরীর থেকে আগুনের মতো তেজোরশ্মি একত্রিত হয়ে বিশাল আলোকপুঞ্জে পরিণত হয়। ওই আলোকপুঞ্জ থেকেই আবির্ভূত হলেন- দেবী দুর্গা। দিব্য অস্ত্রে সজ্জিত দেবী দুর্গা অসরকুলকে বধ করে স্বর্গ তথা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে শান্তি স্থাপন করেন। দেব দুর্গা মহামায়া, মহাকালী, মহালক্ষ্মী, মহাসরস্বতী, শ্রীচন্ডী প্রভৃতি নামে পরিচিত। সর্ব শক্তির আধার আদ্যশক্তি হলেন মা দুর্গা। মা দুর্গা নামের মধ্যেই তার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি দুর্গ নামো এক দৈত্যকে বধ করে দুর্গা নামে খ্যাত হন। মা দুর্গা শত্রুর কাছে, পাপীর কাছে যেমন ভয়ঙ্কর তেমনি সন্তানের কাছে তিনি স্নেহময়ী। কবিগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়...
‘ডান হাতে তোর খড়গ জ্বলে
বা হাত করে শঙ্কা হরণ
দুই নয়নে স্নেহের হাসি
ললাটনেত্র আগুনবরণ।’
দুর্গাপূজা কেবলমাত্র পুষ্প বিল্বপত্রের এবং ঢাক ঢোলের পূজা নয়। এ পূজা মানবতার এক বিরাট মিলন উৎসব। মাতৃ আরাধনায় যারা রত থাকেন তাদের উদ্দেশ্যে শ্রী শ্রী ঠাকুর বলেন...
‘মা সবারই মা, কাউকে ছেড়ে দিয়ে নয়। কাউকে বাদ দিয়ে নয়, কাউকে পরিত্যাগ করে নয়’। তিনি জীবজগতের একত্ব বিধান এক রূপ। যুগে যুগে দেবী দুর্গা অসুরদের বিনাশ করেন। দুর্গাপূজা কবে কখন শুরু হয়েছিল তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। দুর্গাপূজার শুরু নিয়ে নানা মতভেদ রয়েছে। ভারতো দ্রাবিড় সভ্যতার দ্রাবিড়  জাতির মধ্যে মাতৃদেবীর পূজার প্রচলন ছিল। আর্য সভ্যতায় প্রাধান্য ছিল দেবতাদের। আর্য সভ্যতায় প্রাধান্য ছিল দেবীদের। দেবীরা পূজিত হতেন আদ্যাশক্তির প্রতীকরূপে। প্রায় ২২ হাজার বছর পূর্বে ভারতের প্যালিওলিথিক জনগোষ্ঠী থেকে দেবী পূজার প্রচলন। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতায় তা আরও গ্রহণযোগ্য ও বিস্তৃত হয়ে উঠে। মাতৃপ্রধান পরিবার মায়ের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়, এই মতানুসারে দেবী হলেন শক্তির রূপ। শাস্ত্রমতে কালী বিশ্বসৃষ্টির আদিকারণ। মহাভারত অনুসারে দুর্গা বিবেচিত হন কালী শক্তির আরেক রূপে। বৃহধর্ম পুরাণ ও কালিকা পূরাণ মতে রাম রাবণের যুদ্ধের সময় শরৎকালে দুর্গাকে পূজা করা হয়েছিল। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে শরৎকালে দেবতারা ঘুমিয়ে থাকেন। তাই এই সময় পূজার যথাযথ সময় নয়। এই দুই পূরাণ অনুসারে রামকে সাহায্য করার জন্য ব্রহ্মা দুর্গার বোধন ও পূজা করেছিলেন।
মারকেন্দ্রীয় পুরাণ মতে চেদী রাজবংশের রাজা সুবায়া খ্রিস্টের জন্মের ৩০০ বছর আগে উড়িষ্যায় দুশেরা নামে দুর্গাপূজা প্রচলন করেছিলেন। মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যে দুর্গাপূজার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। মৈথিলী কবি বিদ্যাপতির দুর্গাভক্তি তরঙ্গিনীতে দুর্গা বন্দনা পাওয়া যায়। ১৫১০ সালে কুচবংশের রাজা বিশ্বসিংহ কুচবিহারে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। ১৬১০ সালে কলকাতার বারিশার রায় চৌধুরী পরিবার প্রথম দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
ওড়িষ্যার রামেশ্বরপুরে একই স্থানে ৪০০ বছর ধরে সম্রাট আকবরের আমলে থেকে  দুর্গাপূজা হয়ে আসছে। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে এ পূজার ঐতিহ্যবাহী বারোয়ারি বা কমিউনিটি পূজা হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। দক্ষিণ এশিয়ায় এটাকে শরৎকালের বার্ষিক মহাউৎসব হিসাবে ধরা হয় বলে ইহাকে শারদীয় উৎসবও বলা হয়। বাংলাদেশে শারদীয় দুর্গাপূজা ব্যাপক আয়োজনের মধ্যদিয়ে পালিত হয়। বাংলাদেশের সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ১৮ শতকে মঠবাড়িয়া নবরত্ন মন্দিরে ১৭৬৭ সালে প্রথম দুর্গাপূজা হয় বলে লোকমুখে শোনা যায়। ইতিহাসবিদ দানীর মতে  পাচ শ’ বছর আগে রমনার কালীমন্দির নির্মিত হয়েছিল এবং সেখানে কালীপূজার সাথে দুর্গাপূজাও হতো।
কারও মতে রাজশাহীতে তাহেরপুরে রাজা কংস নারায়ণ  প্রথম দুর্গাপূজা করেন এদেশে।
ব্রহ্ম বৈবর্ত পুরাণ মতে দুর্গাপূজার প্রথম প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ। দ্বিতীয় বার দুর্গাপূজা করেন স্বয়ং ব্রহ্মা। তয় বার দুর্গাপূজা আয়োজন করেন মহাদেব। বিংশ শতকের শুরুর দিকে বাংলাদেশে দুর্গাপূজা সমাজের বিত্তবান এবং অভিজাত হিন্দু পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমান শতাব্দীর শুরুর দিকে দুর্গাপূজা তার সার্বজনীনতা পায়। ১৯৪৭ এর দেশবিভাগের পর এককভাবে দুর্গাপূজা ব্যয় সাপেক্ষ হয়ে উঠে। বাংলাদেশে বিত্তশালী হিন্দু দের প্রভাব প্রতিপত্তি কমতে থাকে। ফলে একক দুর্গাপূজা থেকে প্রথমে বারোয়ারী বা কমিউনিটি দুর্গাপূজা এবং পরে সার্বজনীন দুর্গাপূজার প্রচলন শুরু হয়। সার্বজনীন দুর্গাপূজার প্রচলন হওয়ার পর থেকে এই পূজা জনপ্রিয়তা লাভ করে। বিগত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের দুর্গাপূজায় সব ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। সমাজের সব মানুষের অংশগ্রহণে যে পূজা করা হয় তাই সার্বজনীন পূজা। দুর্গাপূজা এখন মূলত সার্বজনীন পূজা। এখন এ পূজা আর বিত্তশালী হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সম্প্রদায়ের  সীমানা ছাড়িয়ে পূজা এখন জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দুর্গাপূজা ঘিরে গড়ে উঠে মৈত্রীর  বন্ধন। ঈশ্বরের মাতৃরূপের নাম  দুর্গা। মহিষাসুরকে বধ করে দেবী দুর্গা সমাজে শান্তি ফিরিয়ে এনেছিলেন। মহাদেবের  বাসগৃহ কৈলাস হতে দে বী দুর্গা  প্রতিবছর পিত্রালয়ে বেড়াতে আসেন। 
দুর্গাপূজা হলো- অন্যায়কে প্রতিহত করে ন্যায় প্রতিষ্ঠার দিন। বিজয়া দশমী ঐক্যের প্রতীক। প্রতিমা বিসর্জনের পর অনেকে পূর্ব শত্রুতা ভুলে পরস্পর আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়। আমাদের সমাজে যেভাবে অন্যায় অবিচার অনাচার অনৈতিকতা দুর্নীতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এ দুর্গতি থেকে পরিত্রাণের জন্য মা দুর্গার আশীর্বাদ আজ বড় প্রয়োজন। মা দুর্গা যেন আমাদের সমাজে বিরাজমান অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতি  থেকে মুক্ত করে সুস্থ , সুন্দর  মানবিক পৃথিবী  ধরণী উপহার দেন এই প্রার্থনা।


লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক, সুনামগঞ্জ।
 

আরবি/ আরএফ

Link copied!