শীতকাল গ্রামের প্রকৃতিতে আনে এক অনন্য মাধুর্য। কিন্তু এই ঋতু কেবল শীতের বাতাস আর কুয়াশার গল্প নয়, এটি গ্রামীণ কৃষকদের জন্য কর্মচাঞ্চল্যে ভরা একটি মৌসুম। মাঠে ফসল তোলার ব্যস্ততা, শীতকালীন সবজি চাষের তাগিদ, এবং নিজের জীবনধারা টিকিয়ে রাখার সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে তারা দিন কাটায়।
শহিদুল ইসলাম, একজন চল্লিশোর্ধ কৃষক। যার গ্রামে কৃষিকাজের অভিজ্ঞতা প্রায় তিন দশকের বেশি। তিনি বলেন, ‘শীতকালে আমাদের কাজের চাপটা বেশি থাকে। ধানের মৌসুম শেষ হলে শীতকালীন শাক-সবজি চাষ করতে হয়। আলু, বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজর; এসব ফলাতে খুব মনোযোগ দিতে হয়। শীতের সকালে যখন কুয়াশা ভেদ করে মাঠে যাই, তখন প্রকৃতির একটা আলাদা স্বাদ পাই। কিন্তু খেতের ফসলের দেখভাল করাটা সহজ নয়।’

শীতকালীন কৃষিকাজের শুরু হয় হেমন্তে ফসল তোলার পর। ধান কাটার পর জমি প্রস্তুত করতে হয়। মাটি চাষ, সারের প্রয়োগ এবং বীজ বপনের কাজগুলো চলে শীতের শুরুতেই। অনেক কৃষক ছোট ছোট পারিবারিক জমিতে শাক-সবজি ফলান। তাদের কাছে এগুলো নিজের পরিবারের জন্য এবং বাজারে বিক্রির জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ। শীতকালে গ্রামের সকাল শুরু হয় কুয়াশায় ঢাকা মাঠঘাট দিয়ে। গৃহিণীরা সকালের খাবার তৈরির পর কৃষকেরা বের হন খেতের দিকে। শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সকালটা খুব ঠান্ডা থাকে। অনেক সময় কুয়াশার কারণে কিছুই ঠিকঠাক দেখা যায় না। তবে শীতের সকালে খেতে কাজ করার মজাই আলাদা। খেত থেকে সদ্য তোলা আলু বা শাক-সবজি নিয়ে বাজারে যেতে হয়। কিছুটা কষ্ট হলেও এই সময়ে বিক্রির সুযোগ ভালো থাকে।’
শীতকালীন সবজিগুলো দ্রুত বড় হয়। আলু, টমেটো, লাউ, শিম, বাঁধাকপি ইত্যাদি চাষ করে গ্রামের সাধারণ মানুষ। এসব ফসলের পরিচর্যা পরিশ্রমের দাবি করে। আবার শীতের রাতে তাপমাত্রা কমে গেলে ফসলের ক্ষতি হতে পারে। শহিদুল ইসলামের মতে, ‘শীতের রাতে ঠান্ডা এমনভাবে জমে যে কখনো ফসলেরও ক্ষতি হয়ে যায়। মাঝে মাঝে পোকামাকড়ের আক্রমণও হয়। তখন কীটনাশক দিতে হয়। তবে খুব বেশি দিতে চাই না, কারণ তাতে ফসলের মান নষ্ট হয়।’
শীতকাল কৃষকের জন্য আশার ঋতু হলেও এই সময়টায় অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। সেচের জন্য পানি, চাষাবাদে প্রয়োজনীয় পুঁজি, এবং সময়মতো ফসল বিক্রি করতে না পারা; এসব সমস্যা কৃষকদের জীবনযাত্রাকে জটিল করে তোলে।

শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমাদের প্রধান সমস্যা হলো, ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়া। বাজারে মাঝখানের দালালরা বেশি লাভ করে, আর আমরা কষ্ট করেও ঠিকঠাক দাম পাই না। শীতকালে ফসল ভালো হলেও যদি বাজার ঠিক না থাকে, তাহলে সব পরিশ্রম বিফলে যায়।’
তবে এই সংগ্রামের মধ্যেও শীতকালীন পিঠাপুলির উৎসব আর সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো কৃষকদের জীবনে আনন্দের রং নিয়ে আসে। নতুন ফসল তোলার পর এই সময়টায় গ্রামের মানুষের মুখে হাসি ফোটে। শীতকাল গ্রামীণ কৃষকের জন্য কর্মব্যস্ততার সঙ্গে আনন্দমাখা একটি ঋতু। প্রকৃতির শীতলতার সঙ্গে লড়াই করে তারা নিজেদের জীবিকা এবং সমাজের খাদ্য চাহিদা পূরণে নিরলস কাজ করে যায়। শহিদুল ইসলামের মতো অসংখ্য কৃষকের পরিশ্রমই এ দেশের খাদ্য নিরাপত্তার মূল ভিত্তি। তাই তাদের সমস্যা সমাধানে সবার সচেতনতা এবং সহায়তা প্রয়োজন।

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
       -20251031160223.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন