বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও আবার বাড়তে শুরু করেছে মারণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। হচ্ছে মৃত্যুও। আক্রান্তের হার যখন এমন ঊর্ধ্বমুখী তখন হাসপাতালগুলোতে নেই আগের মতো মোকাবিলায় কোনো প্রস্তুতি। প্রতিদিনই জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। এদের মধ্যে কে করোনায় আক্রান্ত আর কে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত, তা আলাদা করার জন্য নেই করোনার প্রয়োজনীয় টেস্ট কিট। টিকা আমদানিতেও এখনো নেওয়া হয়নি কার্যকর কোনো উদ্যোগ।
কয়েকটি হাসপাতালে জ্বরের রোগীর চাপ এত বেশি যে, বাড়াতে হয়েছে ওয়ার্ডও। বিশেষ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (মিটফোর্ড), কুর্মিটোলার মতো হাসপাতালগুলোতে হু হু করে বাড়ছে জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তির সংখ্যা। ডেঙ্গুর ভরা মৌসুমে করোনার এ ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ শঙ্কা জাগাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।
সরেজমিনে হাসপাতাল পরিস্থিতি:
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সরেজমিনে রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালটিতে ভর্তি রয়েছে প্রায় ৩০০ জন জ্বরে আক্রান্ত রোগী। এদের মধ্যে ১০০ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হলেও বাকিরা ঠিক কোন জ্বরে ভুগছে তা পরীক্ষা করার সুযোগ নেই। কারণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে এখনো এসে পৌঁছায়নি করোনার টেস্ট কিট।
জ্বরের রোগী বাড়ায় চিকিৎসায় আরেকটি ওয়ার্ড বাড়ানো হচ্ছে জানিয়ে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মেজবাহুর রহমান বলেন, রোগীর ভর্তি ক্রমাগত বেড়েই চলছে। গত মে মাসে আমাদের এখানে এক হাজারের মতো জ্বরের রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তই বেশি ছিল।
কিন্তু সেটা চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনেই ৫০০-এর বেশি হয়ে গেছে। রোগী আরও বাড়বে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। কিন্তু ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা করা গেলেও করোনা রোগী কারা তা নির্ণয় করা যাচ্ছে না কিটের সংকটে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আমরা যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছে, খুব শিগগির ব্যবস্থা করবে।
একই অবস্থা রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেরও (মিটফোর্ড)। রাজধানীর গেণ্ডারিয়া থেকে এখানে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন রহমত উল্লাহ। ডেঙ্গু পরীক্ষা করে নেগেটিভ এসেছে। এখন করোনা পরীক্ষা করানোর কথা চিকিৎসকরা বলেছেন। কিন্তু কোথায় করোনা পরীক্ষা করানো যাবে তা বুঝতে না পেরে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন বলে জানান তিনি।
তবে একটি সিটও ফাঁকা নেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডগুলোতে। বরং একেকটা সিটে দুই থেকে তিনজন করেও রোগী ভর্তি রয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও অন্য ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত কি না তা পরীক্ষা করার জন্য পর্যাপ্ত কিটের প্রয়োজন জানিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমাদের এখানে শুধু ডেঙ্গু বা করোনা রোগী নয়, সারা দেশের বিভিন্ন জটিল রোগী আসে প্রতিদিন।
সম্প্রতি জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি। আমরা সেবা দেওয়ার সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। রোগী যদি আরও বাড়ে, তাহলে ওয়ার্ড বাড়ানোর পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে। কিন্তু যদি করোনা পরীক্ষার কিট না পাই, তাহলে পরীক্ষা করব কীভাবে?
জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালেও। হাসপাতালটিতে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদাভাবে ডেঙ্গু কর্নার থাকলেও করোনা রোগীদের জন্য নেই কোনো বিশেষ ব্যবস্থা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালটির একজন চিকিৎসক বলেন, করোনার যখন দেশব্যাপী ভয়াবহ সংক্রমণ ছিল, তখনো আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিয়েছি। এখন যেহেতু কারিগরি সব প্রস্তুতি আমাদের নেই, সেহেতু এখনো পরীক্ষা শুরু হয়নি। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে খুব শিগগির আমাদের সব ধরনের সেবা প্রদান করার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। আমরা সেই মোতাবেক প্রস্তুতি নিচ্ছি।
নেই আলাদা করোনা ওয়ার্ড:
শুধু ঢাকা মেডিকেল বা মুগদা মেডিকেল নয়, করোনার জন্য আলাদা কোনো ওয়ার্ড বর্তমানে কোনো হাসপাতালেই নেই। ক্ষোভ প্রকাশ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, আমরা চিকিৎসকরাই আতঙ্কে রয়েছি। জ্বরের রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। যেহেতু পরীক্ষার সুযোগ নেই, সেহেতু ডেঙ্গু বা করোনা রোগীদের আলাদা করা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব আবারও সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
গত সোমবার আইসিডিডিআরবির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশে ওমিক্রনের দুটি নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি ও এক্সএফসির আবির্ভাব হয়েছে, যা সম্প্রতি কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। এই বছরের এপ্রিলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রথম শনাক্ত হওয়া এই জেএন.১ গ্রুপের ভ্যারিয়েন্ট এখন বেশ কয়েকটি অঞ্চলে শনাক্ত করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, এই বছরের মে মাসে কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, কুমিল্লা, খুলনা, যশোর, সিলেট, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও দিনাজপুরে অবস্থিত আইসিডিডিআরবির হাসপাতালভিত্তিক ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভিল্যান্স স্টাডি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে এই ভ্যারিয়েন্ট ৭ শতাংশ ছিল। আতঙ্কিত হওয়ার কারণ না থাকলেও আইসিডিডিআরবি পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলেও জানানো হয়।
এমন পরিস্থিতিতে পাঁচ বছর আগের বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ রূপ নেওয়া করোনাভাইরাস ফের নতুন রূপে ফিরে আসছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বাংলাদেশে বাড়তি সতর্কতা জোরদার করা হয়েছে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পরামর্শ দিয়েছে সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরুরি সতর্কবার্তা:
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক বিশেষ বার্তায় জানায়, বিশ্বের বেশ কিছু দেশে কোভিড-১৯-এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট জেএন.১-এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এমতাবস্থায় উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে যেমন হাসপাতাল/চিকিৎসাকেন্দ্র এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের সতর্ক হিসেবে মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হলো। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের চতুর্থ ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলো। সার্জারি অথবা অন্য কোনো রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে শুধু কোভিড-১৯ লক্ষণ বা উপসর্গ থাকলে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হলো।
করোনা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরুরি সতর্কতা জারি
গত সোমবার রাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. হালিমুর রশিদ স্বাক্ষরিত সতর্ক বার্তায় বলা হয়, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে করোনার নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট, বিশেষ করে ওমিক্রন এলএফ ৭, এক্সএফজি, জেএন-১ ও এনবি ১.৮.১-এর সংক্রমণ বাড়ছে।
এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশের সম্ভাব্য সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারত ও অন্যান্য সংক্রামক দেশ এবং বাংলাদেশ থেকে ভারত ও অন্যান্য সংক্রামক দেশে ভ্রমণকারী নাগরিকদের জন্য দেশের সব স্থল, নৌ, বিমানবন্দরের আইএইচআর ডেস্কে নজরদারি জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি ঝুঁকি মোকাবিলায় কিছু কার্যক্রম নিতে হবে।
দেশে প্রবেশপথের জন্য নির্দেশনা:
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থল, নৌ, বিমানবন্দরগুলোতে আইএইচআর-২০০৫ স্বাস্থ্য ডেস্কগুলোকে সতর্ক থাকা, হেলথ স্ক্রিনিং ও সার্ভেইল্যান্স জোরদার করার কথা বলা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের পয়েন্টস অব এন্ট্রিগুলোতে থার্মাল স্কান্যার বা ডিজিটাল হ্যান্ড হেল্ড থার্মোমিটারের মাধ্যমে নন-টাচ টেকনিকে তাপমাত্রা নির্ণয় করতে হবে। চিকিৎসাকাজে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ মাস্ক, গ্লাভস ও রোগ প্রতিরোধী পোশাক মজুদ রাখার কথাও বলা হয়।
ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য রোগ প্রতিরোধ নির্দেশনাগুলো প্রচার করার তাগিদ দিয়ে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারত ও অন্য আক্রান্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকার জন্য।
সবার জন্য সাধারণ পরামর্শ:
করোনার ভয়াবহতার সময় যেসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, এবারও এসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে বারবার প্রয়োজনমতো সাবান দিয়ে হাত ধোয়া (অন্তত ২০ সেকেন্ড), নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার, আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরে থাকা, অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ না করা, হাঁচি-কাশির সময় বাহু বা টিস্যু অথবা কাপড় দিয়ে নাকমুখ ঢেকে রাখার কথা বলা হয়েছে।
সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে করণীয়:
যদি কারো মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে তাদের ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে মারাত্মক অসুস্থ হলে অবশ্যই নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করার কথা বলা হয়েছে। রোগীর নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজন হলে আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করার কথাও বলা হয় (০১৪০১-১৯৬২৯৩)।
ভারত ভ্রমণে বিশেষ সতর্কবার্তা:
গত ২৪ ঘণ্টায় প্রতিবেশী দেশ ভারতে নতুন করে ৩৭৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর ফলে দেশটিতে সাম্প্রতিক সময়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছয় হাজার ১৩৩ জনে পৌঁছেছে। একই সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। তাই দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে আবারও নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকার সব স্থল, নৌ এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কড়া স্ক্রিনিংসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছে।
বাস্তব পরিস্থিতি:
করোনাকাল পেরিয়ে পুরোপুরি স্বাভাবিক এখন বিশ্ব। তাই এসব স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই দেখা যায় না কারো মধ্যেই। জনসমাগম তো দূরে থাক, হাসপাতালেও কাউকে মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায় না।
এ ছাড়া করোনার প্রকোপ সাম্প্রতিক সময়গুলোতে কম থাকায় হাসপাতালগুলোতেও করোনা রোগীদের চিকিৎসায় আলাদা কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি জানিয়ে ৩৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের প্রতিষ্ঠানপ্রধান ডা. আয়েশা আক্তার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমরা সবাই মিলে ২০২০ সাল থেকে প্রায় ২০২৩ সাল পর্যন্ত করোনার একটা কঠিন সময় পার করেছি। তখন রোগীদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল আমাদের। এখনো যদি রোগী বাড়ে আমরা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করব। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আলাদা ওয়ার্ড বা টিকাদানের কোনো নির্দেশনা এখনো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয় থেকে আমরা পাইনি।
একই অবস্থা ঢাকা মেডিকেলেরও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, এখন তো করোনা ওয়ার্ড বলতে আর কিছু নেই। সব কিছু স্বাভাবিক। তবে যেহেতু পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে রোগী বাড়ছে, সেহেতু আমরা মনে করছি, আমাদেরও প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা:
করোনা পরিস্থিতির বিষয়ে হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, করোনা বা কোভিড-১৯ আবার বাড়তে শুরু করেছে। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ভাইরাসজনিত জ্বর, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত জ্বর, পানিবাহিত সংক্রমণজনিত জ্বর (যেমন টাইফয়েড) ইত্যাদি চলমান রয়েছে।
এগুলোর সাথে করোনা যুক্ত হওয়াতে ভোগান্তি ও জীবনহানির সম্ভাবনা বেড়ে গেল। আমাদের পাশের দেশ ভারতে করোনা সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। করোনা ওমিক্রন ধরনের কয়েকটি উপধরন দ্বারা এবার সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। এই উপধরনগুলোর ছড়িয়ে পড়া বা মানুষকে আক্রান্ত করার ক্ষমতা বেশি। তবে রোগের তীব্রতা তৈরির ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত কম।
তবে যেকোনো সময় এই চরিত্রের পরিবর্তন হতে পারে। বয়স্ক মানুষ, দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগে আক্রান্ত মানুষ, শিশু, গর্ভবতী নারী এবং নানা কারণে যাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ শক্তি কম তারাই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
এ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, জনাকীর্ণ স্থানে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য জ্বরের ধরনটি শনাক্ত হওয়া জরুরি। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব করোনাসহ সব ধরনের জ্বরকে নিবিড় নজরদারিতে রাখা এবং জনসাধারণকে সময়ে সময়ে গাইড করা।
ডা. লেলিন বলেন, করোনা জ্বর নিয়ে ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু মানুষ আতঙ্ক ছড়াছে এসব গুজবে কান দেওয়ার দরকার নেই। এখনো দেশে করোনা বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
অধিদপ্তরের প্রস্তুতি:
সম্প্রতি আবারও করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমরা ডেঙ্গুটা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। জানেন যে, ডেঙ্গুর সংক্রমণ ইতিমধ্যে ৫ হাজার ছাড়িয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালগুলোতে আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড করার যখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, তখন করোনার এই ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ। আমরা সংক্রমণের গতি পর্যবেক্ষণ করছি। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে। এখন জনগণের সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি। জনসমাগমে যেন আমরা অবশ্যই মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারি, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। আর জ¦র হলে সঙ্গে সঙ্গ পরীক্ষা করাতে হবে। ডেঙ্গু না করোনা নিশ্চিত না হয়ে তো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে না। এতে রোগী আরও খারাপ হবে।
আপনার মতামত লিখুন :