প্রচলিত অ্যালার্জির ওষুধ ডাইফেনহাইড্রামিন (ব্র্যান্ডনেম: বেনাড্রিল) ব্যবহার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক ও গবেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাদের মতে, এই ওষুধ এখনো ব্যাপকহারে ব্যবহৃত হলেও, এটি অনেক পুরনো যা বর্তমান সময়ের। যা ক্ষতিকর এবং একাধিক নিরাপদ ও কার্যকর বিকল্পের তুলনায় অনেক পিছিয়ে।
ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হসপিটালের অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞ ড. আন্না উলফসন বলেন, ‘প্রতিদিনই ক্লিনিকে দেখি কেউ খাদ্যজনিত অ্যালার্জিতে ডাইফেনহাইড্রামিন খাচ্ছেন। অথচ সঠিক প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত ছিল এপিনেফ্রিন প্রয়োগ।
তার মতে, বেনাড্রিলের মতো ওষুধ ঘুম ঘুম ভাব আনায় রোগীরা ভুলবশত অ্যালার্জির জটিলতা বা শ্বাসকষ্টের লক্ষণ উপেক্ষা করতে পারেন, যা প্রাণঘাতী হতে পারে।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জনস হপকিন্স ও ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির এক যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডাইফেনহাইড্রামিন চেয়ে লোরাটাডিন (ক্ল্যারিটিন), সেটিরিজিন (জিরটেক), ও ফেক্সোফেনাডিন (অ্যালেগ্রা) অনেক বেশি নিরাপদ ও কার্যকর।
এই ওষুধগুলো দ্বিতীয় প্রজন্মের অ্যান্টিহিস্টামিন, যেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক কম, বিশেষত শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য। ডাইফেনহাইড্রামিন যেখানে মাথা ঝিমঝিম, বিভ্রান্তি ও স্মৃতিভ্রংশের সম্ভাবনা তৈরি করে, সেখানে এসব বিকল্প ওষুধের সেই ঝুঁকি নেই।
ডাইফেনহাইড্রামিন শিশুদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি
গবেষণায় দেখা গেছে, ডাইফেনহাইড্রামিন শিশুদের ক্ষেত্রে ঘুমের বদলে অতিরিক্ত চঞ্চলতা, অজ্ঞান হওয়ার ঝুঁকি এমনকি মৃত্যু ঘটাতে পারে। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার ‘বেনাড্রিল চ্যালেঞ্জ’ নামক ট্রেন্ডে অংশগ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক শিশুর মৃত্যু ঘটে।
টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু চিকিৎসক ড. মানুয়েলা মারি বলেন, ‘ডাইফেনহাইড্রামিন কখনোই ঠান্ডা-কাশির জন্য নয় এবং ঘুমের ওষুধ হিসেবে তো নয়ই।’
এ ওষুধ ১৯৪৬ সালে অনুমোদন পেলেও আজকের দিনে এর ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি এবং কার্যকারিতা কম। তবুও যুক্তরাষ্ট্রে এখনো বছরে ১৫ লাখের বেশি প্রেসক্রিপশনে এ ওষুধ দেওয়া হয়।
তবে গবেষকরা বলছেন, অন্তত এটিকে ‘কাউন্টারের পেছনে’ সরিয়ে আনা উচিত যেন ফার্মাসিস্টরা বিকল্প ওষুধ সাজেস্ট করতে পারেন।
বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ: অ্যালার্জি বা চুলকানিতে: সেটিরিজিন (Zyrtec), লোরাটাডিন (Claritin), শিশুদের ঠান্ডা বা নাক বন্ধে: স্যালাইন ড্রপ ও ন্যায্য সাকশন। খাদ্যজনিত অ্যালার্জিতে: এপিনেফ্রিন (EpiPen) — প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে