রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়ীতে পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের তিন দিন পর ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত হওয়া বরগুনার যুবক খালিদ হাসান সাব্বির (২৯) দাফন সম্পন্ন হয়েছে নিজ গ্রামে। বরগুনা ছেড়ে চাকরিতে যোগদানের মাত্র দেড় মাসের মধ্যে আগুনে পুড়ে নিভে গেলেন পরিবারের একমাত্র সন্তান খালিদ। পুরো গ্রাম শোকাহত সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল সমাজসেবক খালিদের মৃত্যুতে।
সোমবার (২০ অক্টোবর) সকাল ৫টায় খালিদের মরদেহ বরগুনা নিয়ে আসা হয়। বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর বান্দরগাছিয়া মাদ্রাসা মাঠ সকাল ১১টায় তার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
খালিদ ছিলেন এলাকায় সকলের প্রিয়পাত্র। তিনি বরগুনায় থাকাকালে শিশু-কিশোর সংগঠন 'খেলাঘর'-এর একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পাশাপাশি, খালিদ বিডিক্লিন বরগুনা জেলা টিমের সদস্য হিসেবে শহরের পরিচ্ছন্ন রাখা ও জনসচেতনতামূলক অসংখ্য সামাজিক কাজে নিয়মিত অংশ নিতেন। এলাকার ও পরিচিতদের মধ্যে একজন সংস্কৃতিমনা, মিশুক এবং সমাজসেবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
একমাত্র ছেলের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না খালিদের বাবা সাবেক সেনাসদস্য মনিরুল ইসলাম জমাদ্দার। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেটা মাত্র মাসখানেক আগে বরগুনা থেকে ঢাকায় গেল।’
‘গত মঙ্গলবার অগ্নিকাণ্ডের খবরের পর খালিদের কোনো খবর না পেয়ে সন্তানের খোঁজে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গ, ফায়ার সার্ভিস কার্যালয় এবং রূপনগর থানা এলাকায় পাগলের মতো ঘুরেছি। হাসপাতালের মর্গে গিয়ে দেখি, মরদেহগুলো এতটাই বিকৃত যে, নিজের সন্তানকেও চেনার উপায় নেই। শুধু ডিএনএ পরীক্ষার ভরসায় ছিলাম। এমন মৃত্যু যেন আর কারও ভাগ্যে না জোটে।’
খালিদের স্ত্রী বলেন, ‘ওই দিন আমার সাথে তেমন কোনো কথা না হলেও মেসেজ আদান-প্রদান হয়। দুপুরের দিকে আমাদের পরিচিত এক লোক ফোন করে জানান, খালিদের পাশের ভবনে আগুন লেগেছে। তারপর থেকে ফোন দিলে খালিদকে আর পাওয়া যায় না। তারপরেই আমরা সাথে সাথে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিই।’
খালিদের ফুপা বলেন, ‘আগুন লাগার সময় খালিদ অফিসের তিনতলায় ছিল। আগুন লাগার খবর পেয়ে নিচে আসলেও সে বের হতে পারেনি। কারণ প্রধান ফটকে তালা লাগানো ছিল। তিনি আরও দাবি করেন, আমাদের দাবি, কে বা কারা তালা লাগাল তা তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনা হোক। যারা এভাবে তালা দিয়ে কর্মীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিল, তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।’
খালিদের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে বরগুনার সামাজিক সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, খালিদের মৃত্যুতে সামাজিক অঙ্গনে এক গভীর শূন্যতা সৃষ্টি হলো।