আমাদের দুর্ভাগ্য যে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত নিম্নমানের। শিক্ষার বর্তমান অবস্থার জন্য রাজনীতিবিদ-আমলারাই দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা কর্তৃক এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন তিনি৷
মহাসচিব বলেন, ‘এত বড় একটা অভ্যুত্থানের পর বিশাল একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে দেশটাকে আবার সুন্দর করে গড়ে তুলবার। কিন্তু আমরা যখন চারদিকে দেখছি যে আমাদের রাজনীতিবিদরা ঐক্য হারিয়ে ফেলছেন, চারদিকে দেখছি একটা অনৈক্যের সুর, তখন আমরা অনেকেই হতাশ হচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘এখানে শিক্ষার ওপর খুব কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা বিএ পাস করি, এমএ পাস করি, চাঁদপুরের গ্রাম থেকে অথবা আমার ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রাম থেকে। সে ঘুরে বেড়ায় কোনো কাজ পায় না। কারণ বিএ পাস, এমএ পাসকে চাকরি দিতে পারেন না। কিন্তু সে যদি বিএসসি পাস করত অথবা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে একটা ডিপ্লোমা নিতে পারত ইলেকট্রিসিটির ওপর অথবা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর অথবা অন্যান্য বিষয়ের ওপর, তাহলে কিন্তু তার চাকরি কেউ আটকাতে পারত না। এই যে নীতির ব্যাপারটা এখানেই রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘রাজনীতির মধ্যে যদি সৌন্দর্য না আনা যায়, সততা না আনা যায়, রাজনীতির মধ্যে যদি স্বপ্ন পূরণ করবার ও লক্ষ্যে দৌড় দেবার ইচ্ছা তৈরি করা না যায়—রাজনীতি কখনোই সুন্দর হবে না। ক্ষমতায় এসে সম্পদ তৈরি করার মানসিকতা থাকলে মানুষের ঘৃণা ছাড়া কিছু অর্জন হয় না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন, রাস্তায় আছেন বেতনের জন্য। এটা তো অনেক ভালো হতে পারত যদি আমরা পুরোপুরি এটাকে পরিবর্তন করে শুধুমাত্র অতি মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষা এবং আমাদের বেশিরভাগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা যদি ভোকেশনাল অ্যান্ড টেকনিক্যাল ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করতে পারতাম তাহলে আমরা সবচেয়ে লাভবান হতে পারতাম।’
মহাসচিব বলেন, ‘আজ কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা নাই, তার কোনো ইনস্টিটিউট নাই। ভোকেশনাল সেন্টারগুলো নাই। আমরা এগুলো তৈরি করি না। আমরা বিএ পাস, এমএ পাস তৈরি করছি। তাহলে এই তরুণরা বিকশিত হবে কিভাবে?’
মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন একটা ক্রান্তিকাল চলছে, ট্রানজিশনাল পিরিয়ড, খুব অস্থিরতা আছে। এখানে তো সব জেন জি। ওদের চিন্তা, ওদের ভাবনা এবং আমাদের চিন্তা-ভাবনার মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। কারণ বয়স, প্রজন্মের যে পার্থক্য এটা অস্বীকার করার তো উপায় নেই।'
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন ওরা ওই যে ছোট্ট সেট (মোবাইল সেট), সেই সেটের মধ্যে গোটা পৃথিবীকে পেয়ে যায়। অনেকেই ওরা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি জানে এটা আমাদের বুঝতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই জানাটা, এটাকে ব্যবহার করে মঙ্গলখাতে নিয়ে যেতে হবে, ধ্বংসের দিকে নয়। আজ গোটা পৃথিবীতে কিন্তু অস্থিরতা। সব মিলিয়ে আমরা যদি মানব কল্যাণে কাজ করি, সব মিলিয়ে আমরা যদি সুন্দর পৃথিবী তৈরির জন্য কাজ করি সবাই মিলে তাহলেই আমরা সেটাকে সুন্দর করে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।’
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন ক্রেস্ট ও সনদপত্র।
বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরার সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মোবারক হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান মো. সবুর খান, বিএনপির সমাজ কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমার প্রধান সম্পাদক হারুন অর রশিদ, শিক্ষাবিদ এম এ সাজ্জাদ, জমিরুল আকতার, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের আহ্বায়ক কবীর হোসেন, সদস্য সচিব কাজী শওকত হোসেন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা মহানগর উত্তরের অধ্যাপক সরকার মাহবুব আহমেদ শামীমসহ কৃতি শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।