বাংলাদেশে ১৫ বছর ও তদুর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রতিদিন গড়ে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে ৪৪২ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। আর পরোক্ষ ধূমপানে শিকার ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ বলে জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. খালেদা ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ঢাবির মুজাফফর আহমেদ চেীধুরী মিলনায়তনে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দ্য রুরাল পূয়র-ডব়্প আয়োজিত তামাক বিরোধী যুব সমাবেশ এসব তথ্য দেন তিনি। ‘তরুণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত শক্তিশালী করা প্রয়োজন’ শীর্ষক সমাবেশে অংশ নেয় ঢাকা আহছানিয়া মিশন, নারী মৈত্রী এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট্রের চেয়ারম্যান ডা. আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন জানান, বাংলাদেশে ৬৮ শতাংশ মানুষ অসংক্রামক রোগে মারা যায়, যার ৫১ শতাংশের পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ তামাক। ধূমপানের ফলে হৃদরোগ, ক্যানসার, স্ট্রোকসহ নানা মারাত্মক রোগ হয়।
তিনি আরও বলেন, ৩৫ বছরের কম বয়সিদের মৃত্যুহারও আশঙ্কাজনকভাবে বেশি, যার পেছনেও তামাক বড় ভূমিকা রাখে। তাই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় উপদেষ্টা পরিষদ কমিটিকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি জরুরি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. খালেদা ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে ১৫ বছর ও তদুর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করে, পঙ্গুত্ববরণ করে বছরে প্রায় ৪ লাখ মানুষ এবং পরোক্ষ ধূমপানে শিকার ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মকে তামাকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করতেই হবে।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডব়্প-এর প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর জেবা আফরোজা। তামাক নিয়ন্ত্রণে ডব্লিউএইচও এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রণীত খসড়ার সংশোধনীগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি।
এগুলো হলো: অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সকল প্রকার পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে কিশোর ও তরুণদের রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, তামাকপণ্যের সকল প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক নাসরিন আক্তার ডলি বলেন, সম্প্রতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিশুদের উপর করা এক স্যালাইভা পরীক্ষায় ৯৫ শতাংশ শিশুর শরীরে উচ্চ মাত্রায় নিকোটিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তরুণদের ধূমপান থেকে মুক্ত রাখতে তামাক কোম্পানি কূটকৌশলের মাধ্যমে যেন আইনের ফাঁক দিয়ে বের হতে না পারে এ জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্যদের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিইউপি, ঢাকা কলেজ, গভ. বাংলা কলেজ, খিলগাঁও মডেল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
উপস্থিত তরুণরা বলেন, দেশের ৪৯ শতাংশ যুবসমাজ যদি তামাকের ক্ষতিকর ছোবল থেকে রক্ষা না পায়, তাহলে দেশের ভবিষ্যৎও অনিবার্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। খুচরা সিগারেট বিক্রি বন্ধ করা গেলে তরুণদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা অনেকটাই কমে আসবে। কারণ তামাক কোম্পানিগুলোর মূল লক্ষ্যই হলো তরুণ প্রজন্ম—তাদের একবার এই চক্রে ফেলে দিতে পারলেই নিকোটিনের আসক্তিতে তারা দীর্ঘমেয়াদে বন্দি হয়ে পড়ে।
সমাবেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশের জোর দাবি জানায় তারা।
তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রজ্ঞা, বিএনটিটিপি, বিসিসিপি, টিসিআরসি, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, নাটাব, এইড ফাউন্ডেশন, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি, প্রত্যাশা, পিপিআরসি, মানস, তাবিনাজ, ডাস এবং বিটিসিএ।
আপনার মতামত লিখুন :