তামাক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে উদ্বেগজনক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একাধিক প্রতিবেদন এবং গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (জিএটিএস) অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের উচ্চ হার কেবল জনস্বাস্থ্যকেই ঝুঁকির মুখে ফেলছে না, বরং দেশের অর্থনীতিতেও ফেলছে এক বিশাল বোঝা।
জিএটিএস’র ২০১৭ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সী ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ (প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ) কোনো না কোনো ধরনের তামাক ব্যবহার করেন। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধূমপানের চেয়ে ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের (যেমন জর্দা, গুল, সাদাপাতা) ব্যবহার বেশি। দেশে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করে, যা মোট তামাক ব্যবহারকারীর প্রায় ৫৮ শতাংশ।
তুলনামূলক চিত্রে দেখা যায়, ধোঁয়াবিহীন তামাক (এসএলটি) ব্যবহারের হার বাংলাদেশে ২০ দশমিক ৬ শতাংশ, যা পাকিস্তানের (৭ দশমিক ৭ শতাংশ) চেয়ে বেশি হলেও ভারতের (২১ দশমিক ৪ শতাংশ) চেয়ে কিছুটা কম। তবে বাংলাদেশে মোট তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৫৮ দশমিক ৪ শতাংশ ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করেন। একটি উল্লেখযোগ্য ও অস্বাভাবিক প্রবণতা হলো, বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের হার (২৪ দশমিক ৮ শতাংশ) পুরুষদের (১৬ দশমিক ২ শতাংশ) চেয়ে বেশি। এছাড়াও, শহরাঞ্চলের (২৯ দশমিক ৯ শতাংশ) তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় (৩৭ দশমিক ১ শতাংশ) তামাকের ব্যবহার বেশি।
তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য এক ভয়াবহ সংকটের মুখে। তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে দেশে প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এছাড়া এই মরণ নেশার কারণে বছরে প্রায় ৪ লাখ মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে।
জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও তামাকের প্রভাব মারাত্মক। বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির এক গবেষণা অনুযায়ী, তামাক ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসা এবং উৎপাদনশীলতার ক্ষতি বাবদ দেশের অর্থনীতিতে বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা (৩ দশমিক ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), যা দেশের মোট জিডিপির ১ দশমিক ৪ শতাংশের সমান। উদ্বেগজনকভাবে, এই বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি তামাক খাত থেকে অর্জিত রাজস্বের চেয়ে অনেক বেশি।