ঢাকা শুক্রবার, ৩০ মে, ২০২৫

অনলাইনে এনআইডির ভুল সংশোধন করবেন যেভাবে

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২৫, ০৮:০৯ পিএম
প্রতীকী ছবি

জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) নিজের নাম, মা-বাবার নাম, ঠিকানাসহ যেকোনো ভুল ঘরে বসেই সংশোধন করে নিতে পারবেন। এ জন্য অনলাইনে নিজেই আবেদন করে মাত্র ৩৪৫ টাকা ফি দিয়ে ৭ দিনের মধ্যেই পেয়ে যেতে পারেন সংশোধিত এনআইডি কার্ড।

এনআইডিতে ভুল কীভাবে সংশোধন করা যায়; সেজন্য কীভাবে আবেদন করতে হয়, কী কী ডকুমেন্ট লাগে এবং আবেদনের ফি কীভাবে পরিশোধ করবেন- চলুন জেনে নেয়া যাক।

প্রথমেই ফোনের ক্রম ব্রাউজারে গিয়ে https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ লিঙ্কে প্রবেশ করতে হবে। এই লিঙ্কের মাধ্যমে আপনি সরাসরি ঢুকে যাবেন এনআইডি পোর্টালে।

এখানে অনেকগুলো অপশন থাকবে। এরমধ্যে > রেজিস্ট্রার করুন < অপশনে ক্লিক করুন। এখান থেকে এনআইডি নম্বর, জন্ম তারিখ দিয়ে প্রয়োজনীয় ঘরগুলো পূরণ করে, বর্তমান ঠিকানা সিলেক্ট করে এবং মোবাইল নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে।

অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়াটি শেষ করতে হলে আপনাকে গুগল প্লে স্টোর থেকে NID wallet নামে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করে ফোনে ইন্সটল করে নিতে হবে।

NID wallet অ্যাপ ইন্সটল করে সেটাতে ঢুকলে চেহারা স্ক্যান করার অপশন দেবে। ফেস স্ক্যান অপশনে ঢুকলে ফোনের ওয়েব ক্যামেরা ওপেন হয়ে যাবে। ফেস স্ক্যান করার পরবর্তী ধাপে > বিস্তারিত প্রোফাইল < অপশনে ঢুকতে হবে। সেখানে > এডিট < অপশন পাবেন। এখানে এনআইডির যেকোনো তথ্য এডিট অর্থাৎ সংশোধন, সংযোজন কিংবা বিয়োজন করা যাবে। প্রয়োজনীয় সংশোধনী করার পর > পরবর্তী < অপশনে ক্লিক করলে পুরনো এবং সংশোধিত নতুন তথ্য পাশাপাশি দেখা যাবে। এখান থেকে ভালোভাবে দেখে নিতে হবে সংশোধিত তথ্য সঠিক আছে কি না। সঠিক থাকলে নির্ধারিত ফি দিতে হবে।

সহজে ফি দেয়ার জন্য সরাসরি চলে যান আপনার মোবাইলের বিকাশ অ্যাপে। সেখানে > পে বিল < অপশনে গেলে নিচের দিকে > NID Service সরকারি ফি < নামে অপশন পাবেন। এখানে গিয়ে আবেদনের ধরন সিলেক্ট করতে হবে।

যেহেতু এনআইডির ভুল সংশোধনের জন্য ফি দেবেন, তাই > NID Info Correction < অপশনটি সিলেক্ট করুন। এরপর নিচে এনআইডি নম্বরটা বসিয়ে দিন। এবার সামনে এগুলোই অটোমেটিক ৩৪৫ টাকা ফি বাবদ দেখাবে। বিকাশের গোপন পিন নম্বর দিয়ে পেমেন্ট করে দিন।

এবার ব্রাউজারে গিয়ে আগের পেজটি রিফ্রেশ করলেই ৩৪৫ টাকা ডিপোজিট দেখাবে। এখন পরবর্তী ধাপে গিয়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো আপলোড করে দিন।

এনআইডি কার্ডে কোন ধরনে ভুল সংশোধনের জন্য কী কী ডকুমেন্ট লাগে?

মনে রাখতে হবে আপলোডকৃত ফাইলের সাইজ ১০০ কিলোবাইটের মধ্যে থাকতে হবে।

নিজের নাম পরিবর্তনের জন্য যেসব ডকুমেন্ট লাগে

ডাক নাম বা অন্য নামে নিবন্ধিত হলে সংশোধনের জন্য আবেদনের সাথে যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হবে:
এস.এস.সি/সমমান সনদের সত্যায়িত ফটোকপি,
বিবাহিতদের ক্ষেত্রে স্ত্রী/স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি,
ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সম্পাদিত এফিডেভিট এবং
জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের কপি।

পরবর্তীতে ব্যক্তিগত শুনানির সময় কাগজপত্রের মূল কপিসহ উপস্থিত হতে হবে।

পিতা/স্বামী/মাতার নাম সংশোধনের জন্য যেসব ডকুমেন্ট লাগে

আবেদন পত্রের সাথে যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হবে:
এস.এসসি/সমমান সনদ,
নাগরিকত্ব সনদ,
জন্ম সনদ,
চাকরির প্রমাণপত্র,
পাসপোর্ট,
নিকাহনামা এবং
পিতা/স্বামী/মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি।

আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত দলিলাদি অবশ্যই সত্যায়িত হতে হবে।

সাধারণত, প্রাপ্তি স্বীকারপত্রে উল্লিখিত তারিখে সংশোধিত পরিচয়পত্র বিতরণ করা হয়।

বিবাহ বা বিবাহ-বিচ্ছেদের কারণে সংশোধনের জন্য যেসব ডকুমেন্ট লাগে

বিবাহের কারণে স্বামীর নাম অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলে কাবিননামা ও স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি দাখিল করতে হবে।
বিবাহ-বিচ্ছেদের কারণে স্বামীর নাম বাদ দিতে চাইলে তালাকনামার সত্যায়িত কপি দাখিল করতে হবে।

দলিলাদি দাখিলের সময় একটি প্রাপ্তি স্বীকারপত্র দেয়া হয়। ওই কাগজে উল্লিখিত তারিখেই সাধারণত সংশোধিত পরিচয়পত্র বিতরণ করা হয়।

পিতা/মাতার নাম পরিবর্তনের জন্য যেসব ডকুমেন্ট লাগে

পিতা/মাতার নাম পুরোপুরি পরিবর্তন করতে হলে আবেদনের সাথে যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হবে:
এসএসসি/এইচএসসি/সমমান পরীক্ষার সনদপত্র/রেজিস্ট্রেশন কার্ড,
পিতা/মাতার পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি,
পিতা-মাতা মৃত হলে অন্যান্য ভাইবোনের পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি এবং
অন্য কোনো গ্রহণযোগ্য কাগজের সত্যায়িত কপি।

এক্ষেত্রে প্রকল্প কাৰ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে সাক্ষাত দিতে যেতে হতে পারে।

জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য যেসব ডকুমেন্ট লাগে

যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম এসএসসি/সমমান তাদের জন্মতারিখ সংশোধনের ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার সনদপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি জমা দিতে হবে।

বয়সের পার্থক্য অস্বাভাবিক না হলে প্রাপ্তি স্বীকারপত্রে উল্লিখিত তারিখে সংশোধিত পরিচয়পত্র বিতরণ করা হয়।
অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সনদের মূল কপি দেখাতে হতে পারে কিংবা ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশ নিতে হতে পারে।

যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনূর্ধ্ব এসএসসি/সমমান তাদের জন্মতারিখ সংশোধনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু তারিখের আগের তারিখের

সার্ভিস বুক/এমপিও’র কপি,
ড্রাইভিং লাইসেন্স,
জন্ম সনদ,
নিকাহনামা এবং
পাসপোর্টর কপি প্রভৃতি দাখিল করতে হবে।

এক্ষেত্রে প্রকল্প কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/প্রকল্প পরিচালক কর্তৃক সাক্ষাতকার গ্রহণ করা হয়। তারা যদি প্রয়োজন মনে করে তাহলে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে সরেজমিনে তদন্তও করা হয়।

ঠিকানা সংশোধনের জন্য যেসব ডকুমেন্ট লাগে

ঠিকানা পরিবর্তনের বিষয়ে ফরম-১৩/ফরম-১৪ এ সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে হবে।
প্রকল্প অফিসে ভোটার এলাকা পরিবর্তন ছাড়া শুধু ঠিকানায় নম্বর বা বানান ভুল থাকলে তা সংশোধন করা হয়।
এজন্য পরিবারের কোনো সদস্যের পরিচয়পত্রের কপি,
গ্যাস/বিদ্যুৎ/টেলিফোন বিলের কপি, কর আদায়ের কপি এবং
চেয়ারম্যান/ওয়ার্ড কমিশনারের প্রত্যয়নপত্র ইত্যাদি দাখিল করতে হবে।

হারানো পরিচয়পত্রের ডুপ্লিকেট ইস্যু

পরিচয়পত্র হারানোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানায় ভোটার নম্বর বা আইডি নম্বর উল্লেখ করে জিডি করতে হবে। এরপর সেই জিডির কপিসহ সাদা কাগজ অথবা সরবরাহকৃত ছকে আবেদনপত্র নির্দিষ্ট কাউন্টারে জমা দিয়ে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র গ্রহণ করতে হবে।

প্রাপ্তি স্বীকারপত্রে উল্লিখিত ডুপ্লিকেট পরিচয়পত্র বিতরণ করা হয়। নম্বর ভুল হলে ডুপ্লিকেট পরিচয়পত্র ইস্যুকরণে সময় বেশি লাগতে পারে।
 
ডকুমেন্টগুলো আপলোড করা হয়ে গেলে আবেদনটি সাবমিট করে দিতে হবে।

সংশোধিত পরিচয়পত্র বিতরণ

সংশোধিত নতুন এনআইডি রেডি হয়ে গেলে নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে আপনার ফোনে একটি এসএমএস পাঠানো হবে। আপনি সশরীরে নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে এটি সংগ্রহ করে নিতে পারেন। অথবা বাসায় বসেও পোর্টাল থেকে এটি ডাউনলোড করে নিতে পারেন।

বিতরণের জন্য নির্ধারিত তারিখের ৭ (সাত) দিনের মধ্যে কাউন্টার হতে সংশোধিত পরিচয়পত্র গ্রহণ করা না হলে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।