বর্তমানে ইউটিউব কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের অন্যতম জনপ্রিয় আয়ের মাধ্যম। তবে নিয়ম মেনে না চললে যে কেউ হারাতে পারেন ইউটিউব মনিটাইজেশন সুবিধা। ফলে ভিডিও থেকে আর কোনো আয় হবে না। তাই ইউটিউবের নীতিমালা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। জেনে নিন, কোন কোন কারণে ইউটিউবের মনিটাইজেশন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
কী কী কারণে এই ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন আসুন জেনে নেই।
ইউটিউবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে তার কমিউনিটি গাইডলাইন মেনে চলা। স্প্যাম, যৌন উদ্দীপক কনটেন্ট, শিশুদের ঝুঁকিতে ফেলে এমন ভিডিও, হেট স্পিচ, সাইবার বুলিং কিংবা হয়রানিমূলক কিছু থাকলেই মনিটাইজেশন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
কপিরাইট লঙ্ঘন
অন্যের ভিডিও, অডিও, ছবি বা যেকোনো কনটেন্ট অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে ইউটিউব সেটি কপিরাইট লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করে। একাধিক কপিরাইট ক্লেইম বা স্ট্রাইক পেলে মনিটাইজেশন স্থগিত বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
কমিউনিটি গাইডলাইন ভঙ্গ
ইউটিউবের নিজস্ব কমিউনিটি গাইডলাইন রয়েছে, যার মধ্যে অশ্লীলতা, সহিংসতা, ঘৃণা ছড়ানো, মিথ্যা তথ্য প্রচার ইত্যাদি নিষিদ্ধ। এসব নীতিমালা ভঙ্গ করলে মনিটাইজেশন হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়।
স্প্যাম বা বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট
ইউটিউবে ভুয়া ভিডিও, ক্লিকবেইট থাম্বনেইল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এভাবে দর্শকদের ঠকানোর চেষ্টা করলে ইউটিউব মনিটাইজেশন বন্ধ করে দিতে পারে।
আগ্নেয়াস্ত্র–সম্পর্কিত ভিডিও
যেকোনো ধরনের অস্ত্র প্রদর্শন, তার ব্যবহার শেখানো কিংবা প্রশংসা করা ভিডিওর মাধ্যমে ইউটিউব মনিটাইজেশন বন্ধ করে দিতে পারে।
সহিংসতা নয়, সংবেদনশীলতা হোক অস্ত্র
রক্তপাত, শারীরিক আঘাত কিংবা নির্যাতনমূলক ভিডিও দেখানো হলে ইউটিউব সেই কনটেন্ট মনিটাইজ করার অনুমতি দেয় না। সহিংস কনটেন্টের আশ্রয় না নিয়ে অন্যভাবে প্রকাশ করাই উত্তম।
মাদক ও তামাকবিষয়ক কনটেন্ট
মাদক বা তামাকজাত পণ্যের প্রচার বা দেখানো কনটেন্ট সরাসরি ইউটিউবের নীতিমালা ভঙ্গ করে। এমনকি অবহেলাতেও যদি এসব বিষয় ঢুকে পড়ে, তাও হতে পারে বড় ঝুঁকি।
অশালীন ভাষা ব্যবহারে সাবধান
ভিডিওতে অশ্লীল বা অশালীন শব্দের ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রেই মনিটাইজেশন বন্ধের কারণ হতে পারে। তাই ভাষা নির্বাচনেও থাকতে হবে সচেতন।
বারবার কমিউনিটি স্ট্রাইক পাওয়া
একাধিকবার কমিউনিটি গাইডলাইন বা কপিরাইট স্ট্রাইক পেলে ইউটিউব চ্যানেল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই এতে মনিটাইজেশনও বন্ধ হয়।
ভুয়া ভিউ বা সাবস্ক্রাইবার বৃদ্ধি
বট বা অস্বাভাবিক পদ্ধতিতে ভিউ বা সাবস্ক্রাইবার বাড়ানোর চেষ্টা করলে ইউটিউব মনিটাইজেশন স্থগিত করতে পারে। এ ধরনের কার্যকলাপ ইউটিউবের নীতিমালার পরিপন্থী।
পুনরাবৃত্ত বা নিম্নমানের কনটেন্ট
বারবার একই ধরনের ভিডিও বা অল্প পরিবর্তন করে পুরোনো কনটেন্ট আপলোড করলে ইউটিউব সেটিকে রিপিটেটিভ কনটেন্ট হিসেবে ধরে নেয়। এতে মনিটাইজেশন বাতিল হতে পারে।
ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামের শর্ত ভঙ্গ
মনিটাইজেশন চালু রাখতে ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামের শর্ত মানা বাধ্যতামূলক। যেমন- ৪ হাজার ঘণ্টা ওয়াচ টাইম, ১ হাজার সাবস্ক্রাইবার, অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন ইত্যাদি। কোনো শর্ত পূরণ না করলে বা পরে বাতিল হলে মনিটাইজেশন বন্ধ হতে পারে।
ইউটিউবে আয় করার স্বপ্ন অনেকের। কিন্তু স্বপ্ন পূরণ করতে হলে নিয়ম মেনে পথ চলতেই হবে। তাই যেকোনো কনটেন্ট
দেওয়ার আগে নিজেই ভাবুন এটি কি ইউটিউবের নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না। মনে রাখবেন, গন্তব্যে পৌঁছানোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে পথচলার ধরন।ইউটিউব মনিটাইজেশন ধরে রাখতে হলে অবশ্যই নিয়ম-নীতি মেনে চলা জরুরি। কনটেন্টের মান, মৌলিকত্ব এবং দর্শকদের প্রতি সম্মান বজায় রাখলেই দীর্ঘদিন ইউটিউব থেকে আয় করা সম্ভব।
আপনার মতামত লিখুন :