বর্তমানে ইউটিউব ও ফেসবুক থেকে আয় একটি জনপ্রিয় এবং কার্যকর উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু অনেক সময় কোনো কারণে চ্যানেল বা পেজের মনিটাইজেশন বন্ধ হয়ে যায়, যা একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের জন্য হতে পারে অত্যন্ত হতাশার বিষয়। তবে চিন্তার কিছু নেই, কারণ নিয়ম মেনে এবং কিছু ধাপ অনুসরণ করে আপনি পুনরায় মনিটাইজেশন ফিরিয়ে আনতে পারেন।
মনিটাইজেশন কেন বন্ধ হয়?
মনিটাইজেশন চলে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো প্ল্যাটফর্মের কমিউনিটি গাইডলাইন, কপিরাইট নীতি এবং কনটেন্টের গুণমান সম্পর্কিত সমস্যা। নিচে কয়েকটি মূল কারণ তুলে ধরা হলো:
কমিউনিটি নির্দেশিকা লঙ্ঘন করা। কপিরাইট আইন ভঙ্গ করা বা অন্যের কন্টেন্ট ব্যবহার করা। বারবার অসৎ কৌশলে ভিউ, লাইক বা সাবস্ক্রাইবার বাড়ানোর চেষ্টা। ভুল তথ্য বা বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট পোস্ট করা।
হেট স্পিচ, সহিংসতা বা নগ্নতা সম্পর্কিত কনটেন্ট। এইসব কারণ ইউটিউব বা ফেসবুক কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হলে তারা মনিটাইজেশন সুবিধা বাতিল করতে পারে।
কীভাবে মনিটাইজেশন ফিরে পাবেন?
কনটেন্ট পর্যালোচনা করে সমস্যার উৎস খুঁজে বের করুন
প্রথমেই আপনার চ্যানেল বা পেজের কনটেন্ট গুলো খুঁটিয়ে দেখুন। কোন ভিডিও বা পোস্টটি মনিটাইজেশন নীতিমালা ভঙ্গ করেছে তা চিহ্নিত করুন। ইউটিউব বা ফেসবুক সাধারণত ইমেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেয় সমস্যার ধরণ।
কপিরাইট বা কমিউনিটি স্ট্রাইক থাকলে তা ঠিক করুন । যদি কপিরাইট স্ট্রাইক থাকে, তাহলে: ভিডিও মুছে ফেলুন বা তার মধ্যে থাকা কপিরাইট কনটেন্ট সরিয়ে দিন।ইউটিউবের Dispute ফরম ব্যবহার করে আপিল করতে পারেন, যদি আপনি মনে করেন আপনার কনটেন্টে কোনো সমস্যা ছিল না।
কমিউনিটি স্ট্রাইক থাকলে:
ভিডিওর ক্যাপশন, টাইটেল, থাম্বনেইল বা কনটেন্ট পরিবর্তন করুন।আপত্তিকর কনটেন্ট সরিয়ে নিন।রিগুলার কনটেন্ট আপলোড করুন ।নিয়মিত মানসম্মত এবং ইউনিক ভিডিও/পোস্ট তৈরি করুন। এতে করে চ্যানেলের সক্রিয়তা বাড়বে এবং পুনরায় মনিটাইজেশন পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
টু-স্টেপ অথেনটিকেশন চালু রাখুন
নিরাপত্তার জন্য সবসময় দুই স্তরের অথেনটিকেশন চালু রাখুন। এটি আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং বা নিরাপত্তা ইস্যু থেকে রক্ষা করবে।
সোশ্যাল কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ভালোভাবে পড়ুন
আপনি যেই প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট দিচ্ছেন, যেমন ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম সেগুলোর কমিউনিটি গাইডলাইন ও পার্টনার প্রোগ্রামের শর্তাবলি ভালোভাবে পড়ুন এবং বুঝে কনটেন্ট তৈরি করুন।
কমিউনিটি নির্দেশিকা ও কপিরাইট স্ট্রাইক সমাধান করুন:
ইউটিউব বা ফেসবুকের কমিউনিটি গাইডলাইন ভালোভাবে পড়ুন।
যদি কোনো স্ট্রাইক থাকে, তার বিরুদ্ধে যথাযথভাবে আপিল করুন।
ভবিষ্যতে যেন এমন কিছু না ঘটে, সে জন্য কনটেন্ট প্ল্যান রিভিউ করুন।
চ্যানেলের/পেজের কনটেন্ট পর্যালোচনা করুন:
ভিডিও বা পোস্টে কোনো বিতর্কিত বিষয় থাকলে তা মুছে ফেলুন।
কপিরাইট লঙ্ঘন হয় এমন কোনো সাউন্ড, ক্লিপ বা ছবি সরিয়ে ফেলুন।
পুনরায় মনিটাইজেশনের জন্য আবেদন করার ধাপ
ইউটিউব:
সব নিয়ম পূরণ করুন: অন্তত ১,০০০ সাবস্ক্রাইবার এবং ৪,০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম থাকতে হবে।
চ্যানেল রিভিউ করুন: চ্যানেলের ব্যানার, থাম্বনেইল, ‘About’ সেকশন প্রফেশনালভাবে সাজান।
মনিটাইজেশন ট্যাবে গিয়ে আবেদন করুন: সব শর্ত পূরণ হলে ‘Monetization’ ট্যাবে গিয়ে পুনরায় আবেদন করতে পারবেন।
সময় দিন: ইউটিউব সাধারণত ১-২ সপ্তাহের মধ্যে চ্যানেল পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত জানায়।
ফেসবুক:
Creator Studio ব্যবহার করুন: ফেসবুকের Creator Studio-তে গিয়ে ‘Monetization’ অপশনে ক্লিক করুন।
Eligibility চেক করুন: ‘In-Stream Ads’, ‘Stars’, ‘Subscriptions’ ইত্যাদি অপশনের জন্য আপনার পেজ কতটা উপযুক্ত তা যাচাই করুন।
সমস্যা থাকলে সমাধান করুন: কোনো কনটেন্ট কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ভঙ্গ করছে কিনা তা চেক করে ডিলিট বা এডিট করুন।
Appeal করুন (যদি সম্ভব হয়): অনেক সময় ‘Appeal’ করার সুযোগ থাকে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন করলে পর্যালোনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে।
কিছু বাস্তবিক টিপস
নিজস্ব কনটেন্ট তৈরি করুন: সর্বদা নিজের ভিডিও, সাউন্ড এবং লেখা ব্যবহার করুন।
ক্লিকবেইট এড়িয়ে চলুন: দর্শকদের আকৃষ্ট করতে ভুল তথ্য বা বিভ্রান্তিকর শিরোনাম ব্যবহার করবেন না।
নিয়মিত ভিডিও-পোস্ট দিন: কনসিস্টেন্সি বজায় রাখলে প্ল্যাটফর্ম আপনাকে ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করে।
দর্শকের কমেন্টের উত্তর দিন: ব্যবহারকারীদের সাথে ইন্টার্যাকশন বাড়াতে হবে।
ট্রেন্ডিং টপিক এড়িয়ে নয়, বরং বুদ্ধিমত্তার সাথে ব্যবহার করুন: নতুন ট্রেন্ডে অংশ নিন, তবে শালীনতা ও গাইডলাইন মেনে। মনিটাইজেশন ফিরে পাওয়ার সময়সীমা ইউটিউবের ক্ষেত্রে ৩০-৯০ দিনের মধ্যে পুনরায় আবেদন করার সুযোগ থাকে। ফেসবুকে, নিয়ম ভঙ্গের ধরণ অনুযায়ী কখনো কখনো ৩০ দিন পর অথবা সরাসরি ‘Review Request’ করতে বলা হয়।
মনিটাইজেশন ফেরত পেতে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
কনটেন্টে কোনো রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা সামাজিকভাবে স্পর্শকাতর বিষয় উপস্থাপন করলে তা নিরপেক্ষ ও ভদ্রভাবে করুন।ইউজার এনগেজমেন্ট বাড়াতে কমেন্টের উত্তর দিন, লাইভ আসুন, কমিউনিটি ট্যাব ব্যবহার করুন।SEO অনুসারে টাইটেল, ট্যাগ, ডিসক্রিপশন দিন।ইউটিউব বা ফেসবুক থেকে দেওয়া মনিটাইজেশন ইমেইলটি ভালোভাবে পড়ুন এবং সেখানকার নির্দেশনা অনুসরণ করুন।
মনিটাইজেশন ফিরে পাওয়ার সফল উদাহরণ
অনেক কন্টেন্ট ক্রিয়েটর যেমন টেক ব্লগার, ট্রাভেল ভ্লগার, রান্নার চ্যানেল মালিকরা শুরুতে মনিটাইজেশন হারিয়েও পরে ফিরে পেয়েছেন শুধুমাত্র সঠিক কৌশল এবং ধৈর্যের মাধ্যমে।
মনিটাইজেশন হারানো কোনোভাবেই ক্যারিয়ারের শেষ নয়। এটি একটি সাময়িক চ্যালেঞ্জ মাত্র। আপনি যদি নিয়ম-কানুন মেনে কাজ করেন এবং নিজের চ্যানেল বা পেজকে একটিভ রাখেন, তাহলে মনিটাইজেশন ফিরে পাওয়া খুবই সম্ভব। কনটেন্টের মান উন্নত করা, নিয়মিত আপলোড, এবং গাইডলাইন মেনে চলা এই তিনটি মূল চাবিকাঠি। মনে রাখবেন, ধৈর্য এবং পরিকল্পনাই কনটেন্ট সাফল্যের মূল।