বর্তমানে ডিজিটাল নিরাপত্তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট, আর্থিক তথ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইমেইল বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অনলাইন সেবার ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা স্তর। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, অনেকেই এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন যা সহজেই অনুমানযোগ্য বা হ্যাকযোগ্য। এই প্রতিবেদনে আমরা বিস্তারিতভাবে জানবো কোন ধরনের পাসওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি হ্যাক হয়, এবং কীভাবে আপনি আপনার অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন।
সাধারণত হ্যাক হওয়া পাসওয়ার্ডগুলোর ধরন
সহজ ও অনুমানযোগ্য পাসওয়ার্ড
অনেকেই ‘123456’, ‘password’, ‘12345678’, ‘qwerty’, ‘abc123’, অথবা নিজের নাম, জন্মতারিখ বা ফোন নাম্বারের মতো সহজ তথ্য পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। এই ধরনের পাসওয়ার্ড সহজেই অনুমানযোগ্য, তাই হ্যাকাররা প্রথমেই এই ধরণের কম্বিনেশন দিয়ে অ্যাকাউন্টে ঢোকার চেষ্টা করে।
একাধিক অ্যাকাউন্টে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার
অনেকেই একটি পাসওয়ার্ড দিয়ে সব ধরনের অ্যাকাউন্ট চালান ইমেইল, ব্যাংকিং, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, শপিং অ্যাকাউন্ট ইত্যাদি। এতে করে একটি অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলেই হ্যাকার অন্যান্য অ্যাকাউন্টেও প্রবেশ করতে পারে।
ছোট দৈর্ঘ্যের পাসওয়ার্ড
কম দৈর্ঘ্যের পাসওয়ার্ড যেমন ৬ অক্ষরের নিচে বা শুধুমাত্র সংখ্যা নিয়ে তৈরি পাসওয়ার্ড brute-force attack এর মাধ্যমে খুব সহজে হ্যাক করা যায়।
সাধারণ শব্দ বা ডিকশনারি ওয়ার্ড
হ্যাকাররা অনেক সময় 'dictionary attack' নামক এক ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করে। এখানে কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারণ শব্দ, নাম, বাক্যাংশ, জনপ্রিয় শব্দ ইত্যাদি ব্যবহার করে পাসওয়ার্ড অনুমান করা হয়।
পাসওয়ার্ড হ্যাক হওয়ার পদ্ধতি
ফিশিং (Phishing)
ইমেইল বা লিংকের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের প্রতারিত করে তাদের পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নেওয়া হয়। ফেক লগইন পেইজ তৈরি করে হ্যাকাররা পাসওয়ার্ড চুরি করে।
ব্রুট ফোর্স অ্যাটাক (Brute-force attack)
হ্যাকাররা একের পর এক পাসওয়ার্ড অনুমান করে এমন অ্যালগরিদম ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার চেষ্টা করে।
কীলগার (Keylogger)
কোনো সফটওয়্যারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর টাইপ করা প্রতিটি কী (Key) রেকর্ড করে নেওয়া হয়, যার ফলে পাসওয়ার্ডসহ যাবতীয় তথ্য হ্যাকার পেয়ে যায়।
পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার
অসুরক্ষিত বা হ্যাকযোগ্য পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করে অনেক সময় হ্যাকাররা পাসওয়ার্ড চুরি করে নেয়।
নিরাপদ পাসওয়ার্ড তৈরির কৌশল
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন
কমপক্ষে ১২–১৬ অক্ষরের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন যাতে বড় হাতের অক্ষর (A-Z), ছোট হাতের অক্ষর (a-z), সংখ্যা (0-9), এবং বিশেষ অক্ষর (!@#%^&*) থাকে।
একাধিক অ্যাকাউন্টে ভিন্ন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন
একটি পাসওয়ার্ড সব অ্যাকাউন্টে ব্যবহার না করে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা এবং জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করুন
'Bitwarden', 'LastPass', '1Password', কিংবা 'Google Password Manager' ব্যবহার করে বিভিন্ন পাসওয়ার্ড নিরাপদে সংরক্ষণ ও পরিচালনা করা যেতে পারে।
টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করুন
Google Authenticator বা SMS ভেরিফিকেশন ব্যবহার করে অতিরিক্ত নিরাপত্তা স্তর তৈরি করুন।
নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন
বিশেষ করে যদি সন্দেহ হয় যে কোনো অ্যাকাউন্ট কমপ্রোমাইজ হয়েছে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফেলুন।
কোন ধরনের পাসওয়ার্ড সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ?
- 123456, 111111, password ইত্যাদি
- নিজের নাম বা জন্মতারিখ ভিত্তিক পাসওয়ার্ড
- ‘abc123’, ‘admin’, ‘user’, ‘test’
- Bangladesh2024 এর মতো সহজ দেশভিত্তিক কম্বিনেশন
- কোনো জনপ্রিয় ফুটবল দল বা সেলিব্রেটির নাম
বাস্তব উদাহরণ
বিশ্বের অনেক নামকরা সংস্থা যেমন LinkedIn, Yahoo, Dropbox এর ডেটাবেইস একাধিকবার হ্যাক হয়েছে এবং কোটি কোটি পাসওয়ার্ড ফাঁস হয়েছে। পরবর্তীতে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ব্যবহারকারীর পাসওয়ার্ডই ছিল সহজ ও অনুমানযোগ্য।
ইন্টারনেটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে পাসওয়ার্ড হতে হবে প্রথম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা। আপনার যদি একটি দুর্বল পাসওয়ার্ড থাকে, তাহলে আপনি হ্যাকারদের হাতে নিজেই চাবি তুলে দিচ্ছেন। তাই আজই আপনার পাসওয়ার্ডগুলো পর্যালোচনা করুন, প্রয়োজনে পরিবর্তন করুন এবং নিরাপদ ডিজিটাল জীবন নিশ্চিত করুন।