চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ, যাকে ঘিরে মানুষের কল্পনা ও কৌতূহলের শেষ নেই। কখনো সে হয় ধবধবে সাদা, কখনো রক্তিম, আবার কখনো ধারণ করে স্ট্রবেরি বা নীলচে আভা। প্রশ্ন জাগে, আসলে চাঁদের রং কেন এবং কীভাবে বদলায়?
প্রথমেই জানা দরকার, চাঁদ নিজে কোনো আলো তৈরি করে না। এটি সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে আলোকিত হয়। অনেকটা আয়নার মতো, সূর্যের আলো চাঁদের পৃষ্ঠে পড়ে এবং সেখান থেকে প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে পৌঁছায়। চাঁদের পৃষ্ঠ মূলত অ্যানোরথোসাইট নামক ধূসর শিলা দিয়ে গঠিত। এ কারণেই সাধারণ অবস্থায় চাঁদকে ধূসর-সাদা দেখায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির গবেষণায় জানা যায়, চাঁদের পৃষ্ঠের গঠন ও রাসায়নিক উপাদানই এর মৌলিক রঙ নির্ধারণ করে।
আমরা চাঁদকে যে রঙে দেখি, তা অনেকাংশেই নির্ভর করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অবস্থার ওপর।
চাঁদ যখন আকাশের উচ্চস্থানে থাকে, তখন আলোর ভ্রমণপথ ছোট হয়। সূর্যের আলো প্রায় অপরিবর্তিত অবস্থায় চাঁদ থেকে প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে পৌঁছে। তাই এ সময় চাঁদকে সাধারণত ধূসর-সাদা বা সিলভার রঙে দেখা যায়।
চাঁদ যখন দিগন্তের কাছে থাকে, তখন তার আলো বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে। এ সময় ধুলিকণা, জলীয় বাষ্প ও অন্যান্য কণার সঙ্গে সংঘর্ষে আলো বিচ্ছুরিত হয়। নীল ও বেগুনি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো ছড়িয়ে পড়ে, আর চোখে পৌঁছায় মূলত লাল-কমলা আলো। ফলে চাঁদকে লালচে বা কমলা দেখায়।
চাঁদের রঙের সবচেয়ে নাটকীয় রূপ দেখা যায় পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণে, যাকে ‘ব্লাড মুন’ বলা হয়। এ সময় পৃথিবী সূর্য ও চাঁদের মাঝখানে চলে আসে এবং পৃথিবীর ছায়া পড়ে চাঁদের ওপর। সরাসরি সূর্যের আলো না পৌঁছালেও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে সূর্যের কিছু আলো চাঁদের পৃষ্ঠে পৌঁছে যায়।
এই আলো মূলত লাল ও কমলা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের হয়, কারণ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল নীল ও ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো শোষণ ও বিচ্ছুরণ করে দেয়। সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সময় যেমন আকাশ লালচে দেখায়, ঠিক তেমনই চন্দ্রগ্রহণেও চাঁদের রং হয় গাঢ় লাল বা তামাটে।
চাঁদের প্রকৃত রং ধূসর হলেও আমরা চাঁদকে বিভিন্ন রঙে দেখি মূলত পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থার কারণে। প্রতিবার চাঁদের রঙের পরিবর্তন আমাদের আকাশের ভিন্ন আবহ ও সৌন্দর্য প্রকাশ করে।
আপনার মতামত লিখুন :