ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ জুলাই, ২০২৫

ধর্ষণে কী শাস্তি আছে দেশের আইনে?

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০২৫, ০৯:৪৮ এএম
ধর্ষণের ঘটনায় দেশের আইনে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রয়েছে। প্রতীকী ছবি

দেশে দিন দিন নানা মাত্রায় বাড়ছে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন নারী ও শিশুরা। দেশের কোথাও যেন নারীর নিরাপত্তা নেই। এ নিয়ে সরকার বিভিন্ন সময় কড়া বার্তা দিলেও অপরাধীদের লাগাম টানা যাচ্ছে না।

চলতি বছরের মার্চ মাসে মাগুরায় নিজের বড় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে তার বোনের শ্বশুর এবং স্বামীর দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় ৮ বছরের শিশু আছিয়া। ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে একসময় হার মানে আছিয়া। এ ঘটনার পরই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রকাশ্যে আসতে থাকে ধর্ষণের খবর। বিশেষ করে পরিবারের বায়োজ্যেষ্ঠদের দ্বারা কয়েকদিনের ব্যবধানে বেশ কয়েকজন শিশুর ধর্ষণের খবর সামনে আসে তখন। 

সম্প্রতি কুমিল্লার মুরাদনগরে এক গৃহবধূকে তার ঘরে ঢুকে ধর্ষণ এবং বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণকাণ্ডে আবারও আলোচনায় এসেছে নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি। কেউ কেউ ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন খোদ নিজের স্বজনদের কাছেই। প্রশ্ন উঠেছে, ঘরে-বাইরে কোথায় নিরাপদ নারীদের জীবন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক পরিসংখ্যান বলছে, দেশজুড়ে শুধু মে মাসেই ধর্ষণ এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৮৪ নারী ও শিশু। কিন্তু আইনের মারপ্যাঁচে দোষীরা সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছেন। এমন চলতে থাকলে নারীদের এগিয়ে যাওয়া চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

ধর্ষণ ও নারী নিপীড়ন ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষিত হওয়ার পর কুমিল্লার মুরাদনগরের ঘটনায় উদ্বেগ জানানো হয়েছে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে। আছিয়া কাণ্ডে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মামলার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন পরিবর্তন করার কথা জানায় অন্তর্বর্তী সরকার। মামলার তদন্তের সময় ৩০ থেকে কমিয়ে ১৫ দিন করা কথাও বলা হয়। ধর্ষণের মামলায় ৯০ দিনের মধ্যে বিচার করার বাধ্যবাধ্যকতা রাখার কথা বলা হয়। অংশীজনদের সঙ্গে কিছু পরামর্শ করে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানানো হয়।

বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ধর্ষণের শাস্তি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি আরও কঠোর করা হয়েছে। ধর্ষণসহ যেকোনো ধরনের নারী নির্যাতনের বিচারের জন্য ২০০০ সালে পাস হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন। ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টার মামলা প্রমাণিত হলে এ আইনে বিভিন্ন রকম শাস্তির বিধান রয়েছে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের  ৯(এক) ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন তাহলে তিনি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এতে বলা হয়েছে, যদি কোনো পুরুষ বিয়ে ছাড়া ১৬ বছরের বেশি বয়সি কোনো নারীর সঙ্গে তার সম্মতি ছাড়া বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে সম্মতি আদায় করে অথবা ১৬ বছরের কম বয়সি কোনো নারীর সঙ্গে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ছাড়াই যৌনসঙ্গম করেন তবে তিনি ওই নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবে।

৯ (দুই)  ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তির ধর্ষণ বা ধর্ষণ পরবর্তী কর্মকাণ্ডের কারণে ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হয় তবে ওই ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এর অতিরিক্ত অন্যূন এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।

৯ (তিন) নম্বর ধারায় বলা হয়েছে- যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ফলে ওই নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তাহা হলে ওই দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যূন এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।

৯ (চার) ধারার এর ‘ক’ অংশে বলা হয়েছে- যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন। অর্থাৎ ধর্ষণের পর ভুক্তভোগীকে হত্যার চেষ্টা করলেও আসামিকে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

৯ (চার) ধারার ‘খ’ অংশে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি অনধিক দশ বছর কিন্তু অন্যূন পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হইবেন।

অর্থাৎ, ধর্ষণ সংঘটিত হয়নি, কিন্তু আসামি শারীরিকভাবে ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন এমনটি প্রমাণিত হলে সর্বনিম্ন পাঁচ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত সাজা পেতে পারেন।