ঢাকা রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫

জনতা ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ: দুদকে অধ্যাপক বারকাতকে জিজ্ঞাসাবাদ

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২৫, ০৫:০৫ পিএম
আদালত প্রাঙ্গণে আবুল বারকাত। ছবি- সংগৃহীত

জনতা ব্যাংকের ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারকাতকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার (২৭ জুলাই)  দুপুরে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আবুল বারকাতকে দুদকের সেগুনবাগিচা প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক শাহজাহান মিরাজের নেতৃত্বে একটি দল তাকে সেখানে হাজির করে। পরে তার প্রথম দিনের রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়।

এর আগে, বুধবার (২৩ জুলাই) আবুল বারকাতের তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে  আদালতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আজ জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জনতা ব্যাংক থেকে ২৯৭ কোটি টাকার বেশি ঋণ আত্মসাতের অভিযোগে ‘অ্যাননটেক্স’ গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এতে অধ্যাপক আবুল বারকাত ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানসহ মোট ২৩ জনকে আসামি করা হয়। এরপর ১০ জুলাই ধানমন্ডির বাসা থেকে আবুল বারকাতকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরে তাকে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয়। তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, অ্যাননটেক্স গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেড ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময় জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। তবে মূলত বড় অঙ্কের বিতরণ ঘটে ২০১৩-১৪ সময়কালে, যখন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি আবুল বারকাত জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক আবুল বারকাত প্রথম ওই দায়িত্ব পান ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন। একসময় ভালো ব্যাংকের কাতারে থাকা জনতা ব্যাংক বারকাতের অধীনে আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ রয়েছে।

মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন জনতা ব্যাংকের সাবেক পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ, মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন ও পরিচালক মো. আবু তালহা; জনতা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ও মহাব্যবস্থাপক (পরবর্তীতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও) আব্দুছ ছালাম আজাদ, সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক আজমুল হক, সাবেক সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) অজয় কুমার ঘোষ, সাবেক ব্যবস্থাপক (শিল্প ঋণ-১) মো. গোলাম আজম, এসএমই বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান, এসইও মো. এমদাদুল হক, সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. আব্দুল জব্বার, সাবেক মহাব্যবস্থাপক ও সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. গোলাম ফারুক, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক, এফসিএ মো. ইমদাদুল হক, নাগিবুল ইসলাম দীপু, আর এম দেবনাথ, মো. আবু নাসের, মিসেস সঙ্গীতা আহমেদ ও নিতাই চন্দ্র নাথ। এ ছাড়া আসামির তালিকায় আছেন অ্যাননটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইউনুছ বাদল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক সহকারী পরিচালক মোছাম্মৎ ইসমত আরা বেগম, সাবেক ডেপুটি গভর্নর-২ আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মিথ্যা রেকর্ড তৈরি করে জনতা পিএলসির ভবন শাখা (করপোরেট শাখা) থেকে ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৬ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে ঋণের অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জাল-জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে দ-বিধির ৪০৯ / ৪২০ / ৪৬৭ / ৪৬৮ / ৪৭১ / ১০৯ তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫ (২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে অ্যাননটেক্স গ্রুপের ২২টি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৩ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা ঋণ দেয় জনতা ব্যাংক। এ নিয়ে ২০১২ সালে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ২০২২ সালে ঋণ অনিয়ম অনুসন্ধান করে দুদক প্রমাণ না পাওয়ায় অভিযোগের পরিসমাপ্তি হয়। পরবর্তীকালে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আবার অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মামলা দায়ের করে দুদক।