শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মেহেদী হাসান

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৪, ০৫:০৮ পিএম

মহাখালী সেতু ও দুর্যোগ ভবন

জুনায়েদ-নায়েব আলীর নেতৃত্বে দেওয়া হয় আগুন, অন্যরা কারা!

মেহেদী হাসান

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৪, ০৫:০৮ পিএম

জুনায়েদ-নায়েব আলীর নেতৃত্বে দেওয়া হয় আগুন, অন্যরা কারা!

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: মহাখালী সেতু ভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে আগুন দেওয়ার ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর (কমিশনার) মো. নাছির। তিনি মূলত কালা নাসির কমিশনার হিসেবে বেশি পরিচিত।

এই নাছির বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দেন। সম্প্রতি এক অনুসন্ধান ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।

সূত্র বলছে, নাসির এসব অপকর্মের জন্য কড়াইল বস্তির আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের বেশ কিছু নেতাকর্মীকে ব্যবহার করেছে। চুরি, ডাকাতি, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নৈরাজ্য ও ভাঙচুর চালাতে দলীয় সন্ত্রাসীদের নিয়ে বেশ কয়েকবার বৈঠক করেন নাছির কমিশনার।

তাদের দাবি- ওই সময় অপকর্ম করলে দোষ ছাত্র-জনতা ও বিএনপি জামায়াতের ঘাড়ে পড়বে। এজন্য এসব অপকর্মে কাজে লাগান কড়াইল বস্তির বেলতলা ইউনিটের ২০ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি জুনায়েদ মনির ও নায়েব আলী শামীমকে। এরা ওই এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মানুষের ঘরবাড়ি দখল অরাজকতা, জ্বালাপোড়াও নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছিল তারা।

এই চক্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন- আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের বেশ কিছু নেতাকর্মী। তারা হলেন- মো. সোহাগ আকন্দ, মো. সানোয়ার, মো. মিজান, মো. রাজু, আল আনাস, মোহন, ফরহাদ, জুয়েল, কাঞ্চন, মো. সাইফুল, মো. রাজু, মো. সাজুসহ অনেকেই।

বাঁ থেকে ২০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নাছির, ২০ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি জুনায়েদ মনির ও আওয়ামী লীগ নেতা নায়েব আলী শামীম।

যদিও এসব সন্ত্রাসীরা রফিক কাজী নামের সাবেক এক বিএনপি নেতাকে দোষারোপ করছেন। এর আগে রফিক ওই ওয়ার্ডের বিএনপির নেতা ছিল। তবে বিএনপি করার অপরাধে তার বাড়ি দখল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ছেলে-মেয়েদের নির্যাতনসহ নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায়। পরে রফিককে জোর করে তাদের দলে নেন এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভাগ চান। এরপর এই চক্রটি রফিককে সেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে ওই ওয়ার্ডের সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ দেন। রফিকের অনুমতি ছাড়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের এমন পদ দেওয়াই সে তিন দিন পর পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পর রফিককে জামায়াত-বিএনপি করে বলে তার ওপর আবারও হামলা করে এলাকা থেকে বের করে দেয়।

জানতে চাইলে রফিক কাজী বলেন, আমাকে এই শীর্ষ সন্ত্রাসীরা অনেক নির্যাতন করেছে। নিজেরা আমাকে কমিটিতে রেখে আমার নামে পোস্টার করে অসৎ উদ্দ্যেশ্য হাসিল করতে চেয়েছিল। জোর করে ছবি তুলিয়েছে যাতে করে আমি বিএনপি থেকে বাদ পড়ি। তারপরও আমি নিজেকে বাঁচাতে ওদের সঙ্গে মিশলেও নিজ দলীয় নির্দেশনা মেনে কাজ করেছি।

এদিকে, মহাখালী এলাকা ও কড়াইল টিএন্ডটি বস্তিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এরা সবাই শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাদের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। দীর্ঘদিন লুটপাট, নারী নির্যাতন, শিশু পাচার, মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপকর্মের হাজার হাজার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

সূত্র জানায়, এরা মূলত নাছির কমিশনারের ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করত। ১০ বছর আগে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মহাখালী কাঁচাবাজার গলিতে নাছির কমিশনারের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার করায় বৈশাখে টেলিভিশন, নিউজ২৪ এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সংবাদ কর্মীদের গুলি করা হয়। এরপর থেকে এরা মহাখালী এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে আলোচনায় আসে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নায়েব আলী শামীম ও জুনায়েদ মনির ১৬ বছর ধরে নাছির কমিশনারের বিশ্বস্ত। এজন্য কড়াইল বেলতলা বস্তি নিয়ন্ত্রণ ও অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যে এদের নিয়োগ করে কমিশনার। তারা এই এলাকা থেকে চাঁদাসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছে। এলাকায় নাছির কমিশনার প্রভাবশালী হওয়ায় তার ভয়ে কেউ এদের বিরুদ্ধে এর আগে রুখে দাঁড়াতে পারিনি।

কড়াইল বেলতলা বস্তির (ছদ্মনাম) লায়লা নামের এক নারী জানান, ‘আমি দেখতে সুন্দর হওয়ায় নায়েব আলী আমার স্বামীকে মারধর করে এলাকা ছাড়া করে। এরপর সে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। আমি রাজি না হলে সে আমাকে জোর করে বিয়ে করে। এই ঘটনার পর আমি তার নামে একটি মামলা করেছি।’

লায়লা বলেন, আমার মতো অসংখ্য নারী ও সাধারণ মানুষের জীবন এরা ধ্বংস করেছে। কেউ বিচার পাইনি। পুলিশের কাছে বা কমিশনারের কাছে গেলে উল্টো আমাদের দোষারোপ করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

বনানী থানা পুলিশ সূত্র জানায়, গত ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে মহাখালী সেতুভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে একই সময়ে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এই আগুনে নেতৃত্বে ছিল নাছির কমিশনার ও তার সন্ত্রাসী দল। আগুনের ঘটনাটি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার উপর দায় চাপাতে এমন সিদ্ধান্ত নেয় নাছিররা।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, , ১৮ জুলাই ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে মহাখালী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন ও সেতুভবনে একই সময়ে আগুন লাগাতে নায়েব আলী, জুনায়েদ, সোহাগ ও সানোয়ারকে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজ করতে বলে নাছির। এর আগে তারা ১৫ এবং ১৬ জুলাই সন্ধার পর নাছির কমিশনারের নিজ অফিসে একটি বৈঠক করে। ওই বৈঠকে সেতুভবনে আগুন দেওয়ার জন্য সোহাগ ও সানোয়ারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর মহাখালী দুর্যোগ ভবনে আগুন দেওয়ার জন্য নায়েব আলী ও জোনায়েদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা পৃথকভাবে এসব দায়িত্ব পালন করে।

এসব বিষয়ে মহাখালী ২০ নং ওয়ার্ডে বসবাসরত একাধিক ব্যক্তি জানান, ৫ আগস্ট (সোমবার) যখন সরকার পদত্যাগ করে ঠিক সেই দিন রাতে নাছির কমিশনারের নেতৃত্বে মহাখালী এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় চুরি, ডাকাতি, লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এসবের নেতৃত্ব ছিল নাসির কমিশনারের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। তাদের দাবি- এই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

মহাখালী এলাকায় বসবাসরত ও তিতুমীর কলেজের ২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী রবিন হোসেন বলেন, ‘নায়েব আলী ও জুনায়েদ আমাদের চোখের সামনে মহাখালী সেতু ভবনে আগুন দিয়েছে। আমরা নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা থামেনি।’

মহাখালী টিএন্ডটি মহিলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলিশা বলেন, আমরা যখন ২৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বনানী চেয়ারম্যান বাড়ির রাস্তায় আন্দোলন করি। ঠিক সেই সময় আওয়ামী লীগ নেতা সোহাগ ও সানোয়ারকে দেখতে পায়। তারা জানান- তাদের ভাতিজা আন্দোলন করছে তাই খুঁজতে এসছে। এর একটু পরই সেতু ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এসময় তারা আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। অনেকেই ভেবেছে শিক্ষার্থীরা আগুন লাগিয়েছে কিন্তু সেটা না।

শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর আমাদের এলাকায় অধিকাংশ আওয়ামী লীগের লোক লুটপাট চুরি-ডাকাতি ও নৈরাজ্য চালিয়ে এলাকা ত্যাগ করে বলে জানান ওই শিক্ষার্থী।

অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. নাছিসের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। জানা যায়, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তাকে এলাকায় দেখা যায়নি। সেদিন দুপুরের পর থেকেই তিনি পালাতক রয়েছেন।

জানতে চাইলে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সরোয়ার বলেন, নাসির কমিশনার, জুনায়েদ মনির, সোহাগ আকন্দ, খোরশেদ আলম রাজু, নায়েব আলীসহ যারা সেতু ভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে আগুন লাগিয়ে লুটপাট ও অরাজকতা করছে তাদের আমরা খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।

আরবি/ এইচএম

Link copied!