শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


জামাল হোসেন, বেনাপোল

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫, ০৮:৫১ এএম

বেনাপোল চেকপোস্টে নেই যাত্রীর চাপ

জামাল হোসেন, বেনাপোল

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫, ০৮:৫১ এএম

বেনাপোল চেকপোস্টে নেই যাত্রীর চাপ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট এলাকা এখন কোলাহলমুক্ত, নেই যাত্রীর চাপ। প্রতিদিন অলস সময় কাটাচ্ছেন এখানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে ভারত সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করায় কমেছে দুদেশের মধ্যে যাত্রী পারাপার। এতে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। আগে প্রতিদিন যেখানে ৭ থেকে ৯ হাজার যাত্রী পারপার হতো, এখন সেখানে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছে দেড় থেকে দুই হাজার যাত্রী। 

রাজনৈতিক পট পরিবর্তন পরবর্তী সময়ে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ রেখেছে ভারত। এতে কমে গেছে যাত্রী যাতায়াত। ভিসা বন্ধ থাকায় দুই দেশের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন নাগরিকরা। বেনাপোল বন্দর থেকে ভারতের কলকাতা শহরের দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। ভ্রমণ, ব্যবসা চিকিৎসা বা অন্যান্য কাজে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতকারীদের বড় অংশ ব্যবহার করেন বেনাপোল-পেট্রাপোল রুট। 

ইমিগ্রেশন সূত্র জানিয়েছে, ২০ থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ভারতে গেছে ১০ হাজার ৯৮৯ জন আর ভারত থেকে এসেছে ১০ হাজার ৪৬০ জন পাসপোর্টযাত্রী। ১১ দিনে পারাপার হয়েছে মোট ২১ হাজার ৪৪৯ জন যাত্রী। তবে এদের মধ্যে ভারতীয় পাসপোর্টযাত্রী আসা ও যাওয়া অনেকাংশে বেড়েছে। এই ১১ দিনে ভারত থেকে এসেছে ৪ হাজার ৭৬৪ জন ও ভারতে ফিরে গেছে ৫ হাজার ৩৮২ জন ভারতীয় যাত্রী। এদের মধ্যে ভারত থেকে বিজনেস ভিসা নিয়ে আসা লাগেজ পার্টি যাত্রীর সংখ্যা বেশি। যাত্রী পারাপার কমে যাওয়ায় ‘ভ্রমণকর’ বাবদ রাজস্ব আদায়ও কমে যাচ্ছে। ৫ আগস্টের পর থেকে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। 

কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, বছরে এ বন্দরে ভ্রমণ কর থেকে রাজস্ব আদায় হয় ১৮২ কোটি টাকা। ৫ আগস্টের আগে প্রতি মাসে গড়ে ১৫ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হতো। বর্তমানে রাজস্ব আদায় হচ্ছে মাসে ৩ কোটি টাকা। 

ইমিগ্রেশন সূত্র জানিয়েছে, বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে ২০ জানুয়ারি ১৭৮০ জন যাত্রী পারাপার হয়েছে, এর মধ্যে ভারতে গেছে ১০৬৭ জন, এসেছে ৭১৩ জন। ২১ জানুয়ারি ৩০৩২ জন যাত্রী পারাপার হয়েছে, এর মধ্যে ভারতে গেছে ১৫৭০ জন, এসেছে ১৪৬২ জন। ২২ জানুয়ারি পারাপার হয়েছে ১৮২৪ জন, এর মধ্যে ভারতে গেছে ৯৭৩ জন, এসেছে ৮৫১ জন। 

২৩ জানুয়ারি পারাপার হয়েছে ১৮২৮ জন, এর মধ্যে ভারতে গেছে ৯৩৭ জন, এসেছে ৮৯১ জন। ২৪ জানুয়ারি পারাপার হয়েছে ১৮৪৭ জন, এর মধ্যে ভারতে গেছে ৯৫৪ জন, এসেছে ৮৯৩ জন। ২৫ জানুয়ারি পারাপার হয়েছে ১৫১৩ জন, এর মধ্যে ভারতে গেছে ৬৬৮ জন, এসেছে ৮৪৫ জন। ২৬ জানুয়ারি পারাপার হয়েছে ১৮১১ জন, এর মধ্যে ভারতে গেছে ৮৭০ জন, এসেছে ৯৪১ জন। 

২৭ জানুয়ারি পারাপার হয়েছে ১৯৭১ জন, এর মধ্যে ভারতে গেছে ১০৭৪  জন, এসেছে ৮৯৭ জন। ২৮ জানুয়ারি পারাপার হয়েছে ১৯৪৩ জন, এর মধ্যে ভারতে গেছে ৯৮২ জন, এসেছে ৯৬১ জন। ২৯ জানুয়ারি পারাপার হয়েছে ২২৮১ জন, এর মধ্যে ভারতে গেছে ১১২১  জন, এসেছে ১০৬০ জন ও ৩০ জানুয়ারি পারাপার হয়েছে ১৬১৯ জন, এর মধ্যে ভারতে গেছে ৭৭৩ জন, এসেছে ৮৪৬ জন।

বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ওসি ইমতিয়াজ মো. আহসানুল কাদের ভূইয়া বলেন, বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে যায় কেবলমাত্র সেসব যাত্রী প্রত্যেকেই ‘ভ্রমণ কর’ বাবদ এক হাজার টাকা এবং ‘প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল’ ফি বাবদ ৫৫ টাকা দিয়ে থাকেন। ফেরত আসা যাত্রীরা এই করের আওতামুক্ত। স্বাভাবিক সময়ে বেনাপোল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৪ হাজার থেকে পাঁচ হাজার যাত্রী ভারতে যেত। এখন সেটা কমে গড়ে ৮০০ থেকে এক হাজারে এসে দাঁড়িয়েছে।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি মো. রফিউজ্জামান বলেন, বাংলাদেশিদের বিদেশ ভ্রমণ কমে গেছে মূলত ভিসাপ্রাপ্তি জটিল হওয়ার কারণে। বর্তমানে ভারত ভিসা দিচ্ছে না। গত কয়েক মাসে যারা ভারত ভ্রমণ করেছেন, তাদের বেশির ভাগের ভিসাই আগে ইস্যু করা। ভারতের ভিসা সীমিত থাকায় সামনের দিনগুলোয় বাংলাদেশি পর্যটকের বিদেশযাত্রা আরও কমবে। যার প্রভাব পড়েছে সরকারের ভ্রমণকর আদায়ের ক্ষেত্রে।

ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় নড়াউলের গণেশ সাহা, ঢাকার সোমেন শীল শনিবার ভারত থেকে ফিরেছেন। গণেশ সাহা বলেন, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছিল, তাই তড়িঘড়ি করে ভারতে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে একটু দেখা করে এলাম। তাদের সঙ্গে দেখা করাও হলো আবার বেড়ানোও হলো। সোমেন শীল বলেন, ভিসার মেয়াদ এ মাসেই শেষ, তাই ভারতে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম।

বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে বাংলাদেশে এসেছেন ভারতীয় নাগরিক আবুল কালাম। বেনাপোল চেকপোস্টে আবুল কালাম বলেন, অন্য সময় বেনাপোল চেকপোস্টে খুব ভিড় থাকত। এবার কোনো যাত্রীর ভিড় নেই। আল্লাহর রাস্তায় যাচ্ছি খুব ভালো লাগছে।

বেনাপোলের ফাইভ স্টার পরিবহনের ম্যানেজার আশাদুজ্জামান আশা বলেন, ভিসা বন্ধ থাকায় তাদের পরিবহন ব্যবসায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। একই কথা বলেন, আলম মানিচেঞ্জারের স্বত্বাধিকারী মশিয়ার রহমান। তিনি বলেন, ভারতে চিকিৎসা, ব্যবসায়ী, ছাত্রসহ বিভিন্ন কাজে এ পথে যেত আগে প্রায় ১০ হাজার লোকের উপরে যাত্রী। তাতে তাদের ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ডলার কেনা-বেচা হতো। এতে করে কর্মচারীসহ নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্যে কেটে যেত। বর্তমান যে অবস্থা, এতে অফিস চালানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

বেনাপোল গ্রিন লাইন পরিবহনের ম্যানেজার রবীন্দ্রনাথ বলেন, তাদের এসি গাড়ি। সামান্য কয়েকজন যাত্রী নিয়ে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্য যেতে হয়। এতে তাদের গাড়ির তেল খরচ হচ্ছে না। তিনি বলেন, এখানে থেকে যেসব পরিবহন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছেড়ে যায় তারা সবাই পড়েছে বিপাকে। ফলে পরিবহন স্টাফদের বেতন-ভাতা না দিতে পারায় তারা কাজ ছেড়ে দিতে হচ্ছে।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহ-সভাপতি ও যমুনা ট্রেডিং করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী আমিনুল হক বলেন, ভারত ভিসা বন্ধ রাখায় আমাদের ব্যাবসায়িক কাজেও সংকট দেখা দিয়েছে। আমদানি-রপ্তানির কাজে পণ্যের গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য ব্যবসায়ীদের ভারত যাতায়াত করা লাগে। বর্তমানে ভিসা না থাকায় তারা ভারত গমন করতে পারছেন না।

বাংলাদেশ ভারত চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক (ল্যান্ডপোর্ট) মতিয়ার রহমান বলেন, ভিসাকেন্দ্রগুলো এখন কেবল জরুরি মেডিকেল ও স্টুডেন্ট ভিসার জন্য সীমিত পরিসরে সøট দিচ্ছে। ব্যবসা ও ভ্রমণ ভিসার যাত্রীদের সংখ্যা নেই বললেই চলে। ভারত ভিসা সেবা বন্ধ রাখায় ভ্রমণ, চিকিৎসা, শিক্ষা কিংবা অন্যান্য কাজে বাংলাদেশিরা যেমন যেতে পারছেন না, তেমনি ক্ষতির মুখে পড়ছেন ভারতীয়রাও। 

বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, ভিসা জটিলতা না কাটলে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই যাত্রী পারাপার শূন্যের কোটায় এসে দাঁড়াবে। এখন যারা যাতায়াত করছে, এদের অধিকাংশের ভিসার মেয়াদ শেষের দিকে। বন্দরের রাজস্ব আয় অনেকটা কমে গেছে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!