শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান আরিফ

প্রকাশিত: মে ২৩, ২০২৫, ০৪:০৬ এএম

বাজেট ২০২৫-২৬ 

কম ঘাটতিতে কমবে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: মে ২৩, ২০২৫, ০৪:০৬ এএম

কম ঘাটতিতে কমবে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা

ছবি- সংগৃহীত

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করতে যাচ্ছে সরকার, যার মধ্যে ঘাটতি ধরা হতে পারে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। এ ঘাটতি অর্থায়ন করা হবে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে। যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা আর বৈদেশিক উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পদ বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাজেট ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি অর্থবছরেই জিডিপির ৫ শতাংশের আশপাশে রাখা হয়। কখনো ৫ শতাংশের একটু বেশি থাকে বাজেট ঘাটতি, কখনোবা ৫ শতাংশের কম। তবে আগামী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ রাখতে যাচ্ছে অর্থ বিভাগ। এ বাজেট ঘাটতি পূরণে অবশ্য বেশির ভাগ ঋণই নেওয়া হয় দেশীয় উৎস থেকে। যার সিংহ ভাগই নেওয়া হয় দেশের ব্যাংকব্যবস্থা থেকে। তবে ঘাটতি কমায় দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতাও কমে যাবে।

সূত্র জানায়, সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে যে ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে তার মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হতে যাচ্ছে ১ লাখ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরে প্রস্তাব করা হয়েছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা তবে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে করা হয়েছে ৯৯ হাজার কোটি টাকা। এই হিসেবে চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার কম লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হতে যাচ্ছে। আর সংশোধিত লক্ষ্য থেকে ১ হাজার কোটি টাকা বেশি হবে।

এ ছাড়া ননব্যাংক থেকে সরকার ২১ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছর যা আছে ২১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা সংশোধন করে করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা।

সরকার ননব্যাংকের মাধ্যমে যে ২১ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে যাচ্ছে তার মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা লক্ষ্য নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছর যা আছে ১৫ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধন করে করা হয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা। এবং অন্যান্য উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছর আছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধন করে করা হয়েছে চার হাজার কোটি টাকা।

সূত্র আরও জানায়, সরকার বিদেশি উৎস থেকে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্য নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। অনুদানের মধ্যে এক লাখ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নেওয়া হবে, যা চলতি অর্থবছর আছে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আর অনুদান হিসেবে সংগ্রহ করা হবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছর আছে ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটেও তাই আছে।  

অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের দেশি-বিদেশি ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত জুন শেষে অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ২০ হাজার ২০৫ কোটি টাকায়। ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এর পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ২৩ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা।

এ ছাড়া গত বছরের জুন শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ১২ হাজার ৭৭ কোটি টাকায়, চার বছর আগে যার পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে চার বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

জানতে চাইলে সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাদের মূল সমস্যা রাজস্ব আদায়ে। রাজস্ব আদায় বাড়ানো গেলে সরকারকে এত বেশি ঋণ নিতে হতো না। আর ঘাটতি কমে যাওয়ার মূল কারণ সরকার উন্নয়ন বাজেটে হাত দিয়েছে। এখানে ব্যয় কমিয়ে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যয় অনেকটাই কমেছে, ফলে ঘাটতিও কম হবে।’

অর্থনীতিরই সূত্র অনুযায়ী, বাজেট-ঘাটতি পূরণে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার দুভাবে ঋণ নেয়। একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে, অন্যটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমে যায় ব্যাংকগুলোর। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। তাতে ভোগান্তি বাড়ে সাধারণ মানুষের।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী গত এপ্রিলে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির জন্য ব্যাংকঋণ অন্যতম কারণ হলেও সরকারের হাতে তেমন বিকল্প নেই। তবে আশার কথা হচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রার পুরো সরকার ঋণ ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নেয় না।

উদাহরণস্বরূপ, চলতি অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সংশোধিত বাজেট তা কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের আট মাসে সরকার ব্যাংক খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার ১৭ শতাংশ ঋণ নিয়েছে।

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার, যা দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঘটতে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উন্নয়ন ব্যয় চলতি বছর প্রস্তাব করা হয়েছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধন করে করা হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। আর আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছোট হচ্ছে। ছোট হবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিও। কিন্তু প্রতি অর্থবছরে আদায়ে ব্যর্থ হওয়ার পরও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত মানতে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এ জন্য আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হতে পারে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটর তুলনায় ২৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা আর সংশোধিত লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দিক থেকে বাজেটে রাজস্ব বৃদ্ধির চাপ রয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহের হার ৮ শতাংশের কম। দেশে ডলার-সংকট দেখা দিলে ২০২২ সালে আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়ার উদ্যোগ নেয় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার।

সরকারের আবেদনে ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। ঋণ কর্মসূচি অনুমোদনের সময় আইএমএফ বলে দিয়েছিল, বাংলাদেশকে রাজস্ব-জিডিপির হার বছরে দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়াতে হবে। লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করার সময় আইএমএফের এ শর্তের কথাও বিবেচনায় রাখা হয়েছে বলে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান। 
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!