যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ বাতিল করেছে। একই সঙ্গে বিদেশি শিক্ষার্থীদের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরের সুযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম বৃহস্পতিবার এক্স-এ (সাবেক টুইটার) পোস্টে বলেন, ‘আইন লঙ্ঘনের দায়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম সার্টিফিকেশন বাতিল করা হয়েছে। এটি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি সতর্কবার্তা।’
এর আগে গত এপ্রিলে ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের কাছে কিছু ভিসাধারী বিদেশি শিক্ষার্থীর তথ্য চেয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, তা না দিলে বিদেশি ভর্তি সুবিধা হারাতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়টি। মাস খানেকের মধ্যে সেই হুমকি কার্যকর করল প্রশাসন।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে, এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি একে ‘বেআইনি ও প্রতিশোধমূলক’ পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করে বলেছে, ‘১৪০টিরও বেশি দেশের শিক্ষার্থী ও পণ্ডিতদের অংশগ্রহণ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতিকে সমৃদ্ধ করে। এই বৈচিত্র্য ধরে রাখতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।’
বিশ্ববিদ্যালয়টি আরও জানায়, ‘এই পদক্ষেপ হার্ভার্ডের গবেষণা ও শিক্ষামূলক পরিবেশে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এরইমধ্যে আমরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার কাজ শুরু করেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত শিক্ষাবর্ষে হার্ভার্ডে প্রায় ৬,৭০০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি ছিলেন, যা মোট শিক্ষার্থীর ২৭ শতাংশ।
এ সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন চলমান শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। অস্ট্রেলীয় শিক্ষার্থী সারাহ ডেভিস, যিনি হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ককাসের প্রেসিডেন্ট, তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা স্নাতকের মাত্র পাঁচ দিন আগে জানতে পারলাম যে আমাদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।’
হার্ভার্ড ছাড়াও নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কেও ট্রাম্প প্রশাসনের টার্গেটে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে-ইহুদিবিদ্বেষী বক্তব্য এবং জাতিগত বৈষম্যের অভিযোগ।
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় জাতিগত পরিচয়কে প্রাধান্য দিয়ে ভর্তি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাধ্যমে ইহুদি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতায় ফেলছে।
এরইমধ্যে হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দ ৩০০ কোটি ডলারের ফেডারেল অনুদান জব্দ বা বাতিল করেছে প্রশাসন। সর্বশেষ সোমবার (২০ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত ৬ কোটি ডলারের স্বাস্থ্য ও মানব সেবা অনুদানও বাতিল করা হয়।
শিক্ষা ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা খাত এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থার ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।