ঢাকা বুধবার, ২৮ মে, ২০২৫

ড. ইউনূসের ‘৩৬০ ডিগ্রি’ কূটনীতি ও বদলে যাওয়া বাংলাদেশ

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২৫, ১১:৫৮ পিএম
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর নোবেল-সম্মানিত ব্যক্তিত্ব, সুপরিচিত আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ও অভূতপূর্ব কৌশলী কূটনীতির মাধ্যমে রচনা করছেন নতুন বৈদেশিক সম্পর্কের অধ্যায়। ‘৩৬০ ডিগ্রি কূটনীতি’ নামে খ্যাত তাঁর বহুমুখী উদ্যোগ বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক সুষম ও দৃঢ় অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে।

আগের ভারতকেন্দ্রিক কূটনৈতিক বলয়ের বাইরে এসে ইউনূস প্রশাসন গড়ে তুলছে এক নতুন বাস্তবতা- যেখানে জাপান থেকে চীন, ওয়াশিংটন থেকে ব্রাসিলিয়া, রোম থেকে রিয়াদ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে তাঁর কূটনৈতিক হাতছানি। 

আজকের বাংলাদেশ আর নির্ভর করছে না কোনও একক মিত্রের ওপর, বরং সকলের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে এগোচ্ছে বহুমাত্রিক পথচলায়। ২০২৪ সালের আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ইউনূস কূটনীতির ময়দানে ছিলেন সরব ও দৃঢ়। 

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন হোক বা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ, তাঁর পদচারণায় লক্ষ্য একটাই- নতুন বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বসম্প্রদায়ের আস্থা ফিরিয়ে আনা। এই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই এসেছে কিছু উল্লেখযোগ্য সাফল্য।

তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রথম বড় অর্জন আসে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে, যেখানে বাংলাদেশি শ্রমিকদের মুক্তি এনে দেন সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন একে বলেন ‘অভূতপূর্ব’, যা নিঃসন্দেহে ইউনূসের ব্যক্তিগত মর্যাদা ও নীতিনির্ধারণী দক্ষতারই স্বীকৃতি।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অংশ নিয়ে নিউইয়র্কে বাইডেন ও ক্লিনটনের সঙ্গে বৈঠক, একই দিনে ১৬টি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ, এমনকি জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর পক্ষ থেকে দেওয়া শক্তিশালী বার্তা, সব মিলিয়ে তাঁর কূটনীতি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের জন্য এক মহাকৌশল।

এ ধারাবাহিকতায় তিনি এবার যাচ্ছেন জাপান সফরে, যেখানে টোকিওতে নিক্কেই ফোরামে বক্তব্য রাখার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবারের সঙ্গে। 

এর আগে চীন সফরের সূচিও রয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয়, বিশ্ব রাজনীতির উত্তেজনার মধ্যেও ইউনূস সরকার চাইছে ভারসাম্যের রাজনীতি।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের ঢাকা সফর কিংবা তিমুর লেস্তের প্রেসিডেন্টের বিজয় দিবস উদ্‌যাপনে অংশগ্রহণও এই কূটনৈতিক পুনর্গঠনের বড় নিদর্শন। 

আনোয়ার ইব্রাহিম যেমন বলেছেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে (ইউনূস) চিনি। আপনি মানুষের মর্যাদা রক্ষায় যে নিষ্ঠা দেখিয়েছেন, তা বিরল।’ তাঁর এই মন্তব্য ইউনূসের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার জোরালো প্রকাশ।

রোহিঙ্গা সংকট ও আসিয়ান প্রেক্ষাপটে মালয়েশিয়া এবং তিমুর লেস্তের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাংলাদেশের জন্য কৌশলগত সম্পদ হয়ে উঠছে। একই সঙ্গে জলবায়ু কূটনীতিতে ‘থ্রি জিরো’ তত্ত্ব দিয়ে ইউনূস আজকের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের কেন্দ্রবিন্দুতে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশকে।

সবমিলিয়ে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই ‘৩৬০ ডিগ্রি’ কূটনীতি কেবল বিশ্বসংযোগ নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে এক নতুন জাতীয় আত্মপরিচয়ের কূটনৈতিক প্রকাশ- যেখানে গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি ও ভারসাম্যের ভিত্তিতে গড়ে উঠছে ‘নতুন বাংলাদেশ’।