সারা দেশে গত ১০ মাসে দেড় লাখ অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এসব অপরাধ সংঘটিত হয়। অপরাধের মধ্যে রয়েছে ডাকাতি, দস্যুতা, খুন, দাঙ্গা, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, নারী ও শিশু নির্যাতন, সিঁধেল চুরি ও চুরি।
সোমবার (১৪ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি অপরাধ পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
অপরাধ পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গত ১০ মাসে (২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত) দেশে ডাকাতি হয়েছে ৬১০টি, দস্যুতা ১ হাজার ৫২৬টি, খুন ৩ হাজার ৫৫৪টি, দাঙ্গা ৯৭টি, ধর্ষণ ৪ হাজার ১০৫টি, এসিড নিক্ষেপ ৫টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১২ হাজার ৭২৬টি, অপহরণ ৮১৯টি, সিঁধেল চুরি ২ হাজার ৩০৪টি ও ৭ হাজার ৩১০টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ে রুজু হওয়া মামলার সংখ্যা ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯৫৫টি।
২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসের পরিসংখ্যানে জানানো হয়, এ সময় দেশে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৩৬৭টি, খুন হয়েছে ১ হাজার ৯৩৩টি এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ৭৪৪টি। এ সময়ে নারী নির্যাতন ৬ হাজার ১৪৪টি এবং শিশু নির্যাতন ঘটেছে ২ হাজার ১৫৯টি।
২০২৪ সালের পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়, এই বছরে ডাকাতি হয়েছিল ৪৯০টি, খুন ৪ হাজার ১১৪টি, ধর্ষণ ৪ হাজার ৩৯৪টি, নারী নির্যাতন ১০ হাজার ১৯৮টি এবং শিশু নির্যাতন হয় ২ হাজার ৯৬৪টি।
২০২৩ সালের পরিসংখ্যানে বলা হয়, ওই সময় ডাকাতি হয়েছিল ৩১৯টি, খুন ৩ হাজার ২৩টি, ধর্ষণ ৫ হাজার ১৯১টি, নারী নির্যাতন ১১ হাজার ২৭টি এবং শিশু নির্যাতন ঘটে ২, হাজার ১৩টি।
২০২২ সালের পরিসংখ্যা থেকে জানা যায়, ডাকাতি হয়েছিল ৪০৬টি, খুন ১ হাজার ১২৮টি, ধর্ষণ ৬ হাজার ৩২টি, নারী নির্যাতন ১২ হাজার ৫১৮টি এবং শিশু নির্যাতন ঘটে ৩ হাজার ২০৫টি।
২০২১ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তখন ডাকাতি হয়েছিল ৩০৮টি, খুন ৩ হাজার ২১৪টি, ধর্ষণ ৬ হাজার ৩৪১টি, নারী নির্যাতন ১২ হাজার ৮৫৫টি এবং শিশু নির্যাতন ঘটে ২ হাজার ৯২৮টি।
২০২০ সালে ডাকাতির সংখ্যা ছিল ৩০২টি, খুন ৩ হাজার ৫৩৯টি, ধর্ষণ ৬ হাজার ৫৫৫টি, নারী নির্যাতন ১৩ হাজার ৪৩১টি এবং শিশু নির্যাতন ২ হাজার ৫১৫টি।
মাসিক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে মোট মামলা হয়েছে ১২ হাজার ৫৪৫টি। এর মধ্যে ডাকাতি ৫৭, দস্যুতা ১০৪, খুন ৫৮৩, দ্রুত বিচার ১২৮, দাঙ্গা ১৯, ধর্ষণ ৩৯০, নারী ও শিশু নির্যাতন ১১৮৮, অপহরণ ৬৫, পুলিশ আক্রান্ত ২৪, সিঁধেল চুরি ২৩৩, চুরি ৬০৫, অন্যান্য কারণে রুজুকৃত মামলা ৬৮৯৩, অস্ত্র আইনে মামলা ১৫০টি, বিস্ফোরকদ্রব্য ১২৮টি, মাদকদ্রব্য ১৮২৭ এবং চোরাচালান ১৫১টি।
অক্টোবর মাসে মোট মামলা হয়েছে ১২ হাজার ৫৪৫টি। এরমধ্যে ডাকাতি ৬৮, দস্যুতা ১৫৭, খুন ৩৯৯, দ্রুত বিচার ৯৩, দাঙ্গা ৫, ধর্ষণ ৩৮৪, নারী ও শিশু নির্যাতন ১১৭৪, অপহরণ ৯৬, পুলিশ আক্রান্ত ৩৪, সিঁধেল চুরি ২৪৮, চুরি ৭২২, অন্যান্য কারণে রুজুকৃত মামলা ৬২১৮, অস্ত্র আইনে মামলা ১২০টি, বিস্ফোরক দ্রব্য ৮৬টি, মাদকদ্রব্য ৩১৭২ এবং চোরাচালান ২৩৭টি।
নভেম্বর মাসে মোট মামলা হয়েছে ১৩ হাজার ৯৫৩টি। এর মধ্যে ডাকাতি ৪৭, দস্যুতা ১৩৩, খুন ৩৩৭, দ্রুত বিচার ৯১, দাঙ্গা ১১, ধর্ষণ ৩২১, নারী ও শিশু নির্যাতন ১১৩০, অপহরণ ৫৭, পুলিশ আক্রান্ত ৪৯, সিঁধেল চুরি ২৩১, চুরি ৭১৬, অন্যান্য কারণে রুজুকৃত মামলা ৬৪৩২, অস্ত্র আইনে মামলা ১৫৯টি, বিস্ফোরকদ্রব্য ৫৬টি, মাদকদ্রব্য ৩৯৭৮ এবং চোরাচালান ১৯৪টি।
ডিসেম্বর মাসে মোট মামলা হয়েছে ১৩ হাজার ৭০৪টি। এর মধ্যে ডাকাতি ৭১, দস্যুতা ১৬০, খুন ৩০২, দ্রুত বিচার ৯০, দাঙ্গা ৯, ধর্ষণ ২৬৬, নারী ও শিশু নির্যাতন ৯৩২, অপহরণ ৭৪, পুলিশ আক্রান্ত ৪৩, সিঁধেল চুরি ২৩৭, চুরি ৭২৭, অন্যান্য কারণে রুজুকৃত মামলা অস্ত্র আইনে মামলা ১০৫টি, বিস্ফোরকদ্রব্য ৩৫টি, মাদকদ্রব্য ৪১৪৬ এবং চোরাচালান ১৮৩টি।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মোট মামলা হয়েছে ১৪ হাজার ৫৭২টি। এরমধ্যে ডাকাতি ৭১, দস্যুতা ১৭১, খুন ২৯৪, দ্রুত বিচার ৯১, দাঙ্গা ৮, ধর্ষণ ৩৯২, নারী ও শিশু নির্যাতন ১০৪৮, অপহরণ ১০৫, পুলিশ আক্রান্ত ৩৮, সিঁধেল চুরি ২৬২, চুরি ৭৯৭, অন্যান্য কারণে রুজুকৃত মামলা ৬৬০৩, অস্ত্র আইনে মামলা ১২৯টি, বিস্ফোরকদ্রব্য ৩৫টি, মাদকদ্রব্য ৪৩৮৬ এবং চোরাচালান ১৪২টি।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মোট মামলা হয়েছে ১৫ হাজার ১৬৭টি। এরমধ্যে ডাকাতি ৪৯টি, দস্যুতা ১৫১টি, খুন ৩৪৪টি, দ্রুত বিচার ৮৩টি, দাঙ্গা ১০টি, ধর্ষণ ৩৩৭টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১০৯১টি, অপহরণ ৭৮টি, অন্যান্য কারণে রুজুকৃত মামলা ৬০৫৯টি, অস্ত্র আইনে মামলা ১০১টি।
চলতি বছরের মার্চ মাসে মোট মামলা হয়েছে ১৬ হাজার ৪৫টি। এরমধ্যে ডাকাতি ৬৭টি, দস্যুতা ১৭৭টি, খুন ৩৪১টি, দ্রুত বিচার ৯০টি, দাঙ্গা ১৬টি, ধর্ষণ ৪৮৩টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১৫৭১টি, অপহরণ ৮৩টি, অন্যান্য কারণে রুজুকৃত মামলা ৭৮৪৯টি, অস্ত্র আইনে মামলা ১৩১টি।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মোট মামলা হয়েছে ১৬ হাজার ৩১২টি। এরমধ্যে ডাকাতি ৪৬টি, দস্যুতা ১৪৯টি, খুন ৩৩৮টি, দ্রুত বিচার ৮৮টি, দাঙ্গা ৩টি, ধর্ষণ ৫৩৭টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১৫৬৭টি, অপহরণ ৮৯টি, অন্যান্য কারণে রুজুকৃত মামলা ৭৮৫৭টি, অস্ত্র আইনে মামলা ১৪০টি।
চলতি বছরের মে মাসে মোট মামলা হয়েছে ১৩ হাজার দুটি। এরমধ্যে ডাকাতি ৬০টি, দস্যুতা ১৭১টি, খুন ৩৪১টি, দ্রুত বিচার ৮০টি, দাঙ্গা ৮টি, ধর্ষণ ৫০৩টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১৫৮৪টি, অপহরণ ৮২টি, অন্যান্য কারণে রুজুকৃত মামলা ৭২৯১টি, অস্ত্র আইনে মামলা ১৯৮টি।
চলতি বছরের জুন মাসে মোট মামলা হয়েছে ১৩ হাজার দুটি। এর মধ্যে ডাকিতি ৭৪টি, দস্যুতা ১৫৩টি, খুন ৩৪৪টি, দ্রুত বিচার ৬৪টি, দাঙ্গা ৮টি, ধর্ষণ ৪৯২টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১৪৪১টি, অপহরণ ৮০টি, অন্যান্য কারণে রুজুকৃত মামলা ৭০৫১টি, অস্ত্র আইনে মামলা ২০৩টি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরাধ বেড়েই চলছে। বিচার নিশ্চিত না করা গেলে এরকম হবে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা ও রাজনৈতিক প্রশ্রয়কে দায়ী করছেন। নিরাপত্তা নেই উল্লেখ করে তারা বলছেন, প্রতিবাদ করলে মানুষ নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। ফলে মানুষ স্বেচ্ছায় মামলার সাক্ষীও হতে চায়না। একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। এতে অপরাধীরা সাহস পাচ্ছে।
এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং ‘চলতি বছর দেশে অপরাধের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে’—গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া এমন খবর সঠিক নয় বলে জানিয়েছে। প্রেস উইং মনে করে এমন খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় জনমনে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে।
প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে গুরুতর অপরাধের প্রবণতা স্থিতিশীল রয়েছে। বড় ধরনের অপরাধ দ্রুত বেড়ছে—এমন কোনো লক্ষণ নেই। বরং বেশির ভাগ গুরুতর অপরাধের হার কমছে বা একই পর্যায়ে রয়েছে। কিছু নির্দিষ্ট অপরাধে সামান্য বাড়তি প্রবণতা দেখা গেলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
প্রেস উইং নাগরিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর আস্থা রাখতে হবে। অপরাধ পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে এবং নিয়ন্ত্রণে আছে।’