অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেই জুলাই গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
সোমবার (১৩ জুলাই) বিকেলে নারায়ণগঞ্জে জুলাই গণঅভ্যুত্থনে শহীদদের স্মরণে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
জুলাই গণহত্যা নিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমাদের লোকদের এমনভাবে হত্যা করা হলো, অঙ্গহানি করা হলো—এর বিচার কোথায়? আমি দৃঢ়ভাবে জানাতে চাই, বিচার এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সরকারের শাসন আমলেই জুলাই গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সম্পন্ন করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাইরেও নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশে জুলাই অপরাধের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোর চার্জশিট ৫ আগস্টের মধ্যে দাখিল এবং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাগুলো নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলো।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা জুলাইয়ে বিজয়ী হয়েছিলাম, কারণ আমরা সকলে একটি পরিবারে পরিণত হয়েছিলাম। আমাদের এ ঐক্য ধরে রাখতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের মতো চাঁদাবাজ-লুটেরাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রশাসন সহায়তা করবে।’
এর আগে নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জে নতুন সড়কের পাশে জুলাই শহীদদের স্মরণে দেশের প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পাঁচজন উপদেষ্টা। উদ্বোধনের আগে উপদেষ্টারা শহীদ পরিবার ও আহতদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এবং তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
এ সময় আইন উপদেষ্টা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহিদুল ইসলাম মিঞা ও পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার প্রমুখ।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘একটা সু-নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে নারায়ণগঞ্জে ৫৬ জন শহীদ হয়েছেন। তাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা স্বৈরাচারমুক্ত, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ পেয়েছি। তাদের পরিবার অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। তাদের সম্মানেই প্রথমবারের মতো নারায়ণগঞ্জে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন শুরু হলো। তারা বন্দুকের মুখে নির্ভীকভাবে দাঁড়িয়ে না থাকলে আজকের স্বাধীনতা সম্ভব হতো না। তারা জীবন দিয়েছেন প্রকৃত গণতন্ত্রের জন্য।’
উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামে অনেকে নিপীড়ন, গুম, আয়না ঘরে বন্দি হয়েছি। ২৪-এর জুলাইয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সারা দেশের মানুষকে জাগ্রত করেছিল। আপনারা অগ্নিসময়ের সন্তান। দেশে কোনো আধিপত্যশক্তি আসার চেষ্টা করলে দেশের মানুষই তা দমন করবে।’
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতরা, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনেরা। সবশেষে উপদেষ্টারা স্মৃতিস্তম্ভের পাশে বৃক্ষরোপণ করেন।