ডিমের উৎপাদন খরচ বাড়লেও পাইকারি বাজারে দাম কমে যাওয়ায় মারাত্মক সংকটে পড়েছেন সোনাগাজী উপজেলার মুরগি খামারিরা। খামারিদের নীরব কান্না দেখার যেন কেউ নেই। প্রতি ডিম উৎপাদনে যেখানে খরচ পড়ছে প্রায় ৯ টাকা, সেখানে পাইকারি বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে ৭ টাকা ৫০ পয়সায়। ফলে প্রতিটি ডিমেই লোকসান গুনছেন খামারি। খাবারের দাম বৃদ্ধি, ওষুধের দাম বৃদ্ধি, বড় কোম্পানির আধিপত্য এবং উৎপাদন খরচ অনুযায়ী দাম না পাওয়ায় অনেকেই লোকসানের শিকার হয়ে খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন, যা প্রান্তিক খামারিদের অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছে এবং কর্মসংস্থানও হারাচ্ছে।
ডিমের পাইকারি মূল্য কমে গেলেও খুচরা বাজারে এখনো প্রতিটি ডিম ৯ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে খামারিরা লোকসানে থাকলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা তুলনামূলকভাবে বেশি লাভ করছেন। পাইকারিতে ৭ টাকা ৫০ পয়সায় কেনা ডিম কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে খুচরায় ৯-১০ টাকায় বিক্রি হওয়ায় বাজারে অযৌক্তিক মূল্যবৈষম্য স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
খামারিরা লোকসানে দিন কাটাচ্ছেন, অথচ বাজারে সেই কষ্টের প্রতিফলন নেই- বরং খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। একদিকে খামারিদের ক্ষতি, অন্যদিকে ক্রেতার বোঝা- উভয় পক্ষের উপরেই চাপ বাড়ছে, কিন্তু লাভের জায়গাটি থেকে যাচ্ছে শুধু খুচরা বিক্রেতাদের হাতে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, ডিম উৎপাদন করে এমন মুরগির খামারের সংখ্যা আছে ২৬০টি। যদিও খামারিরা বলছেন উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের তালিকাভুক্ত খামারের বাইরে অনেক বেশি খামার রয়েছে এই উপজেলায়।
সাতবাড়িয়া গ্রামের মো. ইসমাইল হোসাইন সোহাগ নামের এক খামারি জানান, প্রতিটির উৎপাদন খরচ প্রায় ৯ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ৭ টাকা ৫০ পয়সা দরে। প্রতিদিন ক্ষতি ২২ হাজার টাকার উপরে। মাসে ক্ষতি প্রায় ৭ লাখ টাকা।
তিনি আরও জানান, শীতকালে ডিমের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। কিন্তু এ বছর তার উল্টো। সামনে রমজান মাস আসছে ডিমের দাম আরও কমে যাবে। কিন্তু এই ক্ষতি দেখার কেউ নেই।
সাহেবের হাট এলাকার প্রান্তিক খামারি মো. নুরনবী জানান, পাইকারিতে দাম কম হওয়ায় প্রতিটি ডিমে লোকসান গুনতে বাধ্য হচ্ছি। খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে, ওষুধের খরচও বাড়ছে। তার ওপর মুরগির রোগবালাই লেগেই আছে। এ অবস্থায় অনেক খামারি খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন। আমরা টিকে থাকতে চাই, কিন্তু অবস্থাটা খুবই কঠিন। আমরা চাই, আমাদের খামার বাঁচুক, উৎপাদিত ডিমের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত হোক।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিআইএ) ফেনী জেলা শাখার সভাপতি আরিফুর রহমান বলেন, পাইকারিতে ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে, কিন্তু খুচরা বাজারে এখনো সাধারণ ক্রেতাকে ১০টাকা দিয়ে ডিম কিনতে হচ্ছে- খামারিরা প্রতিটি ডিমে লোকসান দিচ্ছে, আর খুচরা ব্যবসায়ীরা তুলনামূলকভাবে বেশি লাভ করছে। খাদ্য, ওষুধসহ সব খরচই অনেক বেশি। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাবে, হাজারো পরিবার কর্মহীন হয়ে পড়বে। আমরা চাই পোল্ট্রি খাতটি বাঁচাতে দ্রুত বাজার পর্যবেক্ষণ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা হোক। খামারিরা ন্যায্য দাম পাক, আর ক্রেতারা ন্যায্য দামে ডিম কিনতে পারুক।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নেবু লাল দত্ত বলেন, খামারিরা বর্তমানে খুব কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। প্রতিটি ডিম উৎপাদন খরচের তুলনায় কম দামে পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে, ফলে প্রান্তিক খামারিরা প্রতিদিনই লোকসান করছেন। যদিও পাইকারি বাজারে দাম কম, খুচরা বাজারে ডিমের দাম অনেক বেশি, যা অযৌক্তিক। আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং চালাবো, যাতে এই ব্যবধান কমানো যায়।


