ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে ফলের নাম বিলিম্বি। এটি নবীনগরের একটি ঐতিহ্যবাহী টক ফল। রসালো ও মুখরোচক এই ফল তরকারিতে অপূর্ব স্বাদ যোগ করে। দেশের অন্য কোথাও বিলিম্বি সাধারণত চোখে পড়ে না, তবে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় সীমিত পরিমাণে এ ফলের চাষ হয়।
ফলটি দেখতে অনেকটা লম্বা টমেটোর মতো, রং হালকা সবুজ, তবে পাকলে হলুদ বর্ণ ধারণ করে। তেঁতুলের মতো খুব কড়া টক নয়। এই ফল মূলত মাছের তরকারি ও ডালে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া আচারও করা যায়। বিলিম্বি বারোমাসি ফল দেয় এবং গাছ ১২-১৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। গাছের ডালে সমাহার চিরল পাতার।
একটি গাছ প্রায় ১৫-২০ বছর পর্যন্ত একনাগাড়ে ফল দেয়। প্রতিটি ডালে প্রচুর ফল ধরে। একটি গাছ বর্ষাকালে ১০০ কেজি এবং শীতকালে ৫০ কেজি ফলন দিতে পারে। গোড়ায় পানি জমলে গাছ মারা যায়। বিলিম্বির চারা বীজ থেকে জন্মায় এবং ৩ বছরে ফল দেয়। ফুল থেকে ফল হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হয়।
গাছ থেকে ফল পাড়ার দুই-তিন দিন পরে এটি পচে যায়। স্থানীয়রা পাছা চেটে দিলে ফলন বেশি হয়। স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি বিলিম্বি ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
নবীনগরে বিলিম্বি গাছ সংগ্রহের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। প্রায় শত বছর আগে নবীনগরের তৎকালীন পোস্ট মাস্টার ইয়াকুব আলী চৌধুরী তার ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য এই গাছের চারা সংগ্রহ করেন। স্থানীয় আদালতের চাপরাশি নরেন্দ্র চন্দ্র মোদি এই চারা উপহার দেন।
বর্তমানে এখানকার বেশকিছু বাড়িতেই বিলিম্বি গাছ রয়েছে। শুধু তাই নয়, এলাকার বিলিম্বি চারা অনেকেই শখ করে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে গেছেন। ওখানে এই ফলের স্থানীয় নাম জানা যায়নি, তবে বাংলাদেশে এটি বিলিম্বি নামে পরিচিত।
কৃষি বিভাগের উদ্যোগে নবীনগরে এই ঐতিহ্যবাহী ফলের পুষ্টিগুণ নির্ণয় করা এবং বাণিজ্যিকভাবে আচার ও তরকারি হিসেবে সম্ভাবনা যাচাই করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম লিটন বলেন, বিলিম্বি একটি টক জাতীয় ফল। ডাল এবং মাছের সঙ্গে অল্প পরিমাণে লম্বালম্বি কেটে রান্না করলে খাওয়া যায়। এটি মূলত থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার ফল।
সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা অঞ্চলে বেশি উৎপাদিত হয়, তবে ধীরে ধীরে দেশের অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। উপজেলা কৃষি অফিসও চারা রোপণের বিষয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে।


