বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৫, ০৪:২৬ এএম

যাত্রাবাড়ী থেকে মিরপুর, আহাদের মৃত্যুর শোক এখনো জীবন্ত

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৫, ০৪:২৬ এএম

শহিদ আবদুল আহাদ। ছবি- সংগৃহীত

শহিদ আবদুল আহাদ। ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে সেই বাসাটি এখন শুধুই দুঃস্বপ্নের নাম। চার বছরের ছেলে আবদুল আহাদকে হারিয়ে সেই বাসা ছেড়ে মিরপুরের একটি সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারে উঠেছেন আহাদের বাবা-মা। তবু শোক পিছু ছাড়ছে না- ঘর বদলালেও বুকে বয়ে চলেছেন সন্তানহানির অসহ্য বেদনা।

গত বছর ১৯ জুলাই, ঢাকার রায়েরবাগে চলছিল বৈষম্যবিরোধীদের আন্দোলন। আর এই আন্দোলন দেখতে গিয়ে আহাদ গুলিবিদ্ধ হয়। পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে এই নিষ্পাপ শিশু।

বিশ্লেষণ অনুযায়ী, জুলাই বিপ্লবে শহীদদের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠ ছিল আহাদ।

আবদুল আহাদের বাবা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিনিয়র সহকারী আবুল হাসান, বিজয়নগরের অফিসে চোখেমুখে ক্লান্তি আর শোকের ছাপ নিয়ে বলেন, ‘ওর রক্তমাখা বীভৎস স্মৃতি বয়ে চলা সেই ফ্ল্যাটে আর থাকা সম্ভব ছিল না… তবে নতুন বাসায় এসেও কিছু ভুলতে পারছি না।’

স্মৃতিচারণ করতে করতে তিনি আরও বলেন, ‘সেদিন ছিল শুক্রবার, বিকেল সারে চারটার দিকে আহাদ ঘুম ভেঙে বারান্দায় ছুটে গিয়ে বলল, ‘বাবা, নিচে কী হচ্ছে?’ আমি আর ওর মা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াই।’

তিনি আরও বলেন, সে সময় নিচে চলছিল সংঘর্ষ। ‘একদিকে ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা, আরেক দিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের সদস্যরা। ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি, সাউন্ড গ্রেনেড, হট্টগোল- ততক্ষণে চারপাশ অস্থির। আর হঠাৎ একটি গুলি এসে সোজা আহাদের ডান চোখে বিদ্ধ হয়।

‘ও আমার সামনেই লুটিয়ে পড়ে... আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি, ওর মাথায় গুলি বিঁধে ছিল, আর কিছু করার ছিল না’’-কথা শেষ করতে পারেন না হাসান।

বিভীষিকাময় সেই মুহূর্তে আতঙ্ক ছাপিয়ে তারা ছেলেকে কোলে নিয়ে রিকশায় চড়ে ছুটে যান ঢামেক হাসপাতালে। আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয় আহাদকে। তবে তার মাথায় গুলি অবস্থান করায় স্ক্যান করাও সম্ভব হয়নি।

শহীদ আহাদের বাবা বলেন, ‘এক্স-রেতে দেখা গেল, গুলিটা মাথাতেই আটকে আছে। আর কিছুই করার ছিল না।’

পরে ২০ জুলাই রাত সাড়ে ৮টার দিকে ডাক্তাররা জানান, আহাদ আর নেই। পরদিন ২১ জুলাই ফরিদপুরের ভাঙ্গার পুকুরিয়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় ছোট্ট আহাদকে।

কারা ছুড়েছিল সেই গুলি- এ প্রশ্নের উত্তর এখনো মেলেনি। আবুল হাসান বলেন, ‘যেদিক থেকে গুলি এসেছিল, ওদিকেই ছিল ছাত্রলীগ, যুবলীগ আর শ্রমিক লীগের কর্মীদের অবস্থান।’

আহাদের মৃত্যুর ঠিক আগেই একই এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মেরাজনগরের বাসিন্দা মো. মাসুদ। আরটিভিতে সম্প্রচারিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, হেলমেট পরা যুবকেরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ছে।

আহাদকে হাফেজ বানানোর স্বপ্ন দেখতেন তার বাবা। বড় ছেলে দিহান পড়ে হাফেজি মাদ্রাসায়, আহাদও প্রতিদিন কোরআন শরিফ শিখত।

হাসান মোবাইল বের করে একটি ভিডিও দেখান-আহাদ সুর করে সূরা ইখলাস পড়ছে। হাসান বলেন, ‘এখনো রাতে যখন সূরা ফাতিহা শুনি, মনে হয় আহাদ আমার পাশেই শুয়ে আছে।’

আহাদের মা কোহিনূর আক্তার সুমি এখনো মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। সারা রাত জেগে ছোট ছেলের ছবি আর খেলনা বুকে জড়িয়ে কাঁদেন তিনি।

সন্তানের স্মৃতি ধরে রাখতে তিনি ফেসবুকে দুই ছেলের নামে একটি পেজ চালান- ‘দিহান এন্ড আবদুল আহাদ টু ব্রাদার্স’। সেখানে প্রতিদিন ছেলের ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেন।

এই শোকবিধুর পরিবারটির এখন একটাই দাবি- ‘সরকার চাইলে খুব সহজেই খুঁজে বের করতে পারবে কারা আহাদকে হত্যা করেছে। আমরা হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’

Shera Lather
Link copied!