গত বছর আন্দোলনের সময় ছাদে খেলছিল শিশু রিয়া গোপ। হঠাৎ গুলির শব্দ, আর এই গুলিতেই প্রাণ হারায় ৬ বছরের রিয়া। ১৯ জুলাই দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি এলাকায় আন্দোলনকারী ও পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি দেখতে বাড়ির ছাদে গিয়েছিলেন রিয়ার পরিবার। কিছুক্ষণ পর খাবারের জন্য সবাই নিচে নেমে এলেও রিয়া একা আবার ছাদে ফিরে যায় খেলতে। হঠাৎ গুলির শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাবা দীপক কুমার গোপ দৌড়ে ছাদে গিয়ে মেয়েকে কোলে তোলার মুহূর্তেই একটি গুলি এসে রিয়ার মাথায় আঘাত করে। রক্তাক্ত রিয়াকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
সেদিন রাতেই সফল অস্ত্রোপচার করা হয় এবং রিয়াকে আইসিইউতে রাখা হয়। প্রথম কয়েকদিন আঙুল নাড়ানোর মতো সাড়া দিলেও ২৪ জুলাই সকালে সব সাড়া থেমে যায়। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে পরপারে পাড়ি জমায় ছোট্ট রিয়া।
ঢামেক হাসপাতালের প্রতিবেদনে রিয়ার মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়েছে, ‘গানশট ইনজুরি’।
রিয়া ছিল দীপক ও বিউটি গোপ দম্পতির একমাত্র সন্তান। বিয়ের পাঁচ বছর পর ২০১৯ সালে তাদের ঘর আলোকিত করে রিয়ার আগমন। শহরের নয়ামাটি এলাকার দ্বীনবন্ধু মার্কেটের পঞ্চমতলায় পরিবার নিয়ে থাকতেন তারা। রিয়া স্থানীয় নয়ামাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ত।
জানা গেছে, ছাদ থেকে গুলশান সিনেমা হল এলাকায় সরাসরি দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, সেখান থেকেই ছোড়া গুলি রিয়ার মাথায় বিদ্ধ হয়।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরিবারের কেউই তখন ভাবতে পারেননি, ঘরের ছাদই হতে পারে তাদের শিশুর জন্য মরণফাঁদ। ঘটনার পর থেকে দীপক ও বিউটি গোপ মিডিয়া ও লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছেন। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, তারা এখন আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করছেন।
রিয়ার এক আত্মীয় বলেন, ‘লিখে আর কী হবে। সব তো শেষ। আমরা এ বিষয়ে কিছু বলব না। নিজের বাসায়ই তো মানুষ নিরাপদ নয়। ভাইয়ের সব শেষ হয়ে গেছে।’
তিনি আরও জানান, ‘রিয়ার মা বিউটি গোপ মেয়ের কথা উঠলেই বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। চিকিৎসকের পরামর্শেই তারা মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলা থেকে বিরত রয়েছেন।’
রিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এ ঘটনায় মামলা করতে চান না।
রিয়ার চাচা বলেন, ‘মামলা করলেই কি রিয়া ফিরে আসবে? রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা আমাদের পরিবারের নেই। আর্থিক সামর্থ্যও নেই। আজ মামলা করবো, কিন্তু সারা জীবন আমাদের নিরাপত্তা দেবে কে?’
আপনার মতামত লিখুন :