জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মাসব্যাপী ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে সহিংসতা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে এনসিপি ‘জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করছে। এর অংশ হিসেবে ১৬ জুলাই বেলা ১১টা থেকে গোপালগঞ্জ পৌর উন্মুক্ত মঞ্চে জনসমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এতে অংশ নিতে বরিশাল থেকে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা রওনা দেন। নেতাদের মধ্যে ছিলেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ও শামান্তা শারমিন প্রমুখ।
সকাল সাড়ে ৯টায় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুর এলাকায় নিষিদ্ধঘোষিত একটি সংগঠনের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়ে একটি গাড়িতে আগুন দেয়। এতে এক পুলিশ পরিদর্শকসহ তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হন।
সকাল ১১টায় গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট সড়কের কংশুর বাসস্ট্যান্ডে ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা গাছ ফেলে, কাঠে আগুন জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে এবং ইউএনওর গাড়ি ভাঙচুর করে।
সাড়ে ১১টায় কোটালীপাড়া উপজেলার অবদার হাটে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা প্রায় তিন হাজার নেতাকর্মী নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। ১১টা ৪০ মিনিটে কাঠি বাজার এলাকায় ছাত্রলীগের শতাধিক কর্মী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে।
দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ৫০-৬০ জনের একটি দল ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গোপালগঞ্জ পৌরপার্কে জনসভাস্থলে হামলা চালায়। তারা মঞ্চে থাকা ব্যানার-চেয়ার ভাঙচুর করে।
দুপুর ২টা ১৫মিনিটে সাতপাড় বাজার এলাকায় ২টি ককটেল বিস্ফোরণ ও ২টি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। দুপুর ২টা ৫০মিনিটে সভা শেষে এনসিপি নেতৃবৃন্দ মাদারীপুরের উদ্দেশে রওনা দিলে লঞ্চঘাট এলাকায় আবারও হামলার শিকার হন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনী ও পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত রাখতে চেষ্টা করলেও হামলাকারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ এবং দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। এ সময় গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা করা হয়। সংঘর্ষে ৪ জন নিহত ও ৪৫ জন পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, পুলিশ ও সেনাবাহিনী এনসিপির নেতৃবৃন্দকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিরাপদে নিয়ে যায়। বিকেল ৪টা ৫৮মিনিটে তারা খুলনার উদ্দেশে রওনা দেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় নিহতদের মরদেহ জেলা হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক নিয়ে যান উচ্ছৃঙ্খল জনতা।
এখন পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলায় ১৫০৭ জন পুলিশ সদস্যসহ সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। কারফিউ জারি রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে ও শান্তিপূর্ণ রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :