ঢাকা বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫

দশম গ্রেডে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা পাবেন যেসব সুবিধা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৫, ০৫:১৬ পিএম
প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল দশম গ্রেডে উন্নীত করায় সরকারের খরচ বাড়বে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা। ছবি- সংগৃহীত

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল দশম গ্রেডে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে প্রতি বছর সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা। শিক্ষা প্রশাসনের ভাষ্য, এটি শুধু একটি অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা ও সম্মানের প্রকাশ।

বর্তমানে কর্মরত প্রায় ৩১ হাজার প্রধান শিক্ষকের মধ্যে কেউ ১২তম, কেউ ১১তম গ্রেডে ছিলেন। এখন দশম গ্রেডে উন্নীত হওয়ায় তাদের মূল বেতন ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত বাড়বে। বাড়িভাড়া, উৎসব, নববর্ষ এবং বিশেষ ভাতাও বেড়েছে।

ফলে বেতন-ভাতা মিলিয়ে ১,১৫৪ জনের জন্য বছরে ১০ কোটি ৯৪ লাখ এবং ১৩,৮৫৪ জনের জন্য ৯৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বাড়তি খরচ হবে।

এ ছাড়া প্রধান শিক্ষক পদে আরও ৩৪ হাজার ১০৬টি শূন্যপদ রয়েছে। এর মধ্যে ৩১ হাজার ৪৫৯টি পদ পদোন্নতিযোগ্য এবং ২,৬৪৭টি সরাসরি নিয়োগযোগ্য। সব পদ পূরণ হলে সরকারের ব্যয় আরও বাড়বে প্রায় ২৪২ কোটি টাকা।

শিক্ষক নেতারা এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড, শতভাগ পদোন্নতি এবং উচ্চতর গ্রেড প্রদানসহ কয়েকটি দাবি বাস্তবায়নের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। এসব দাবি পূরণ না হলে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে লাগাতার অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

কে কতটা সুবিধা পাবেন

১২তম গ্রেড থেকে দশম গ্রেডে উন্নীত শিক্ষকরা

বর্তমানে ১,১৫৪ জন প্রধান শিক্ষক ১২তম গ্রেডে রয়েছেন। তারা দশম গ্রেডে উন্নীত হলে যেসব সুবিধা পাবেন:

  • মূল বেতন বাড়বে ৪,৭০০ টাকা
  • বাড়িভাড়া ভাতা (গড়ে ৪২%) ১,৬৩৫ টাকা
  • বিশেষ ভাতা ৭০৫ টাকা
  • উৎসব ভাতা ৪,৭০০ টাকা
  • নববর্ষ ভাতা ৯৪০ টাকা
  • মোট বার্ষিক ব্যয় বৃদ্ধি প্রায় ১০.৯৪ কোটি টাকা

১১ তম গ্রেড থেকে দশম গ্রেডে উন্নীত শিক্ষকরা

দেশে আরও ১৩,৮৫৪ জন প্রধান শিক্ষক আছেন যারা ১১তম গ্রেডে ছিলেন। তারা দশম গ্রেডে উন্নীত হলে যেসব সুবিধা পাবেন।

  • মূল বেতন বেশি পাবেন ৩,৫০০ টাকা
  • বাড়িভাড়া ভাতা ১,০৯৫ টাকা
  • বিশেষ ভাতা ৫২৫ টাকা
  • উৎসব ভাতা ৩,৫০০ টাকা
  • নববর্ষ ভাতা ৭০০ টাকা
  • মোট বার্ষিক ব্যয় বৃদ্ধি ৯৫.৭৮ কোটি টাকা

উচ্চতর গ্রেডপ্রাপ্ত ১৬,৩৮৮ জন শিক্ষক

এদের মধ্যে অনেকেই আগেই ১০ম বা তার চেয়ে উচ্চতর গ্রেডে পৌঁছেছেন। ফলে তাদের বেতন-ভাতায় কোনো পরিবর্তন হবে না।

শূন্যপদ পূরণেও ব্যয় বাড়বে

বর্তমানে ৩৪ হাজার ১০৬টি প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে:

  • ৩১,৪৫৯টি পদ পদোন্নতির যোগ্য
  • ২,৬৪৭টি পদ সরাসরি নিয়োগযোগ্য

পদোন্নতি বা নিয়োগের মাধ্যমে এ পদগুলো পূরণ করা হলে সরকারের ব্যয় বাড়বে আরও ২৪২.৬০ কোটি টাকা।

মূলত হাইকোর্টে রিট এবং শিক্ষকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত আসে। আদালতের নির্দেশে ৪৫ জন প্রধান শিক্ষককে দশম গ্রেডে উন্নীত করার রায় হয়। এরপর শিক্ষকরা দাবি তোলেন সকল প্রধান শিক্ষককে একযোগে এই সুবিধা দিতে হবে। বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রস্তাব পাঠায় এবং অর্থ মন্ত্রণালয় তা অনুমোদন করে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হলো। এটি তাদের আর্থিক নিরাপত্তা এবং সামাজিক মর্যাদা বাড়াবে। পাশাপাশি তারা আরও উদ্যম নিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করবেন।’

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, ‘সরকারকে সাধুবাদ জানাই। তবে সহকারী শিক্ষকরা এখনো ১১তম গ্রেডে উন্নীত হননি। আমরা তাদের উন্নয়নসহ আরও তিন দফা দাবি জানিয়েছি। ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন না হলে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে লাগাতার অনশন কর্মসূচিতে যাব।’