ঢাকা শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারেনি: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৫, ১০:৩১ পিএম
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের লোগো। ছবি- সংগৃহীত

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এক বছরের মাথায়ও মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিশীল লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি বলে দাবি করছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। সংস্থাটি বলছে, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের দমনমূলক শাসনের অবসান ঘটানোর পর গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের যে আশার জন্ম হয়েছিল তা এখন অনেকটাই ম্লান।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। পরে বুধবার বিজ্ঞপ্তিটি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘যারা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে শেখ হাসিনার নিপীড়নমূলক শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের স্বপ্ন এখনো অপূর্ণ।’

তিনি অভিযোগ করেন, ইউনূস সরকারের প্রশাসন এখনো সংস্কারবিহীন নিরাপত্তা খাত, ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং প্রতিশোধপরায়ণ রাজনীতির মাঝে ভারসাম্য রক্ষায় ব্যস্ত।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যাপকহারে মামলা, বিচারবহির্ভূত আটক এবং নির্যাতন চলমান। ক্ষমতা ব্যবহার করে হাজার হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে, যাদের মধ্যে অধিকাংশ আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে মনে করা হচ্ছে।

আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯২ হাজার ৪৮৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগ হত্যা মামলা। প্রায় ৪০০ সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে ১ হাজার ১৭০টিরও বেশি মামলা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম বর্তমানে ৬৮টি হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলায় আটক, যার মধ্যে ৩৬টি মামলার ঘটনার সময় তিনি বিদেশে ছিলেন। অধিকাংশ মামলায় চার্জশিটও দাখিল করা হয়নি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইন, বিচারব্যবস্থা, পুলিশ এবং নারী অধিকারসহ নানা খাতে আইনি ও সাংবিধানিক সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি কমিশন গঠন করলেও এসব সুপারিশ এখনো বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একাধিক গুরুতর সংকটের মুখোমুখি, যার মধ্যে রয়েছে মব ভায়োলেন্স, রাজনৈতিক সংঘর্ষ এবং সংবাদকর্মীদের ওপর দমনপীড়ন। এ ছাড়াও রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় কট্টরপন্থিদের মতো অ-রাষ্ট্রীয় গোষ্ঠীগুলো নারীর অধিকারের প্রতি প্রকাশ্য বিরোধিতা দেখাচ্ছে, যা মানবাধিকার পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। গত ২৬ ও ২৭ জুলাই, রংপুর জেলায় হিন্দু সংখ্যালঘুদের অন্তত ১৪টি বাড়িঘরে হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা। এ ছাড়া, পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বার ওপর সহিংসতার ঘটনাও চলমান।

পুলিশ জানিয়েছে, ২০২৪ সালের সহিংসতায় অংশগ্রহণকারী কেবল ৬০ জন পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে, যদিও তখন ডজনখানেক সামরিক ও পুলিশ ইউনিট অভিযানে অংশ নেয়।

ইতোমধ্যে গঠিত গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন ১ হাজার ৮০০টির বেশি অভিযোগ পেয়েছে এবং অন্তর্বর্তী দুটি রিপোর্ট সম্পন্ন করেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, মানবাধিকারের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইউনূস সরকারকে সহায়তা করতে হবে, যার মধ্যে টার্গেটেড নিষেধাজ্ঞা, অভিযুক্তদের আন্তর্জাতিকভাবে বিচারের মুখোমুখি করা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের শর্ত হিসেবে জবাবদিহি নিশ্চিত করা অন্তর্ভুক্ত।

এসব বিষয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি আরও বলেন, ‘ইউনূস সরকারের সামনে বিশাল চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা নিয়ে কারও সন্দেহ নেই। তবে এখনই পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে স্থায়ী পরিবর্তন সম্ভব নয়।’

তিনি বলেন, ‘অতীতে নির্যাতিত রাজনৈতিক দলগুলোকেই এখন এগিয়ে আসতে হবে, যাতে আর কখনো এই ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের পুনরাবৃত্তি না হয়।’