শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালায় না, পালাতে জানে না’—এই কথাগুলো জোর গলায় বলেও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ৫ আগস্ট দুপুরে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে দেশ ত্যাগ করেন তিনি।
তার এই আকস্মিক দেশত্যাগে হতবাক আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা। অনেকের দাবি, তিনি নিজ দলের শীর্ষ নেতাদেরও তার এই সিদ্ধান্তের কথা জানাননি।
গত বছর রোববার (৪ আগস্ট ২০২৪) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণার পর শেখ হাসিনা দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেছিলেন। এরপর সোমবার (৫ আগস্ট) বেলা আড়াইটার দিকে তিনি পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করেন ও সঙ্গে সঙ্গেই সামরিক হেলিকপ্টারে করে দেশ ত্যাগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনা একাধিকবার জোর দিয়ে বলেছিলেন, তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যাবেন না। চীন সফর শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ‘অনেকেই বলেছে, প্রধানমন্ত্রী পালিয়েছে, শেখ হাসিনা পালায় না।’ এরপর গত ১ আগস্টও রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন।
এর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘তীব্র গণজোয়ার শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ পালানোর পথ পাবে না।’ সেই বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না, পালিয়ে যায়নিও কখনো।’ কিন্তু তার সেই কথা ও আশ্বাস মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতারা হতবাক।
নির্বাচন বিশ্লেষক ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন একটি গণমাধ্যমে লিখেছেন, ‘দেশে আজকে যা ঘটল, এটাই হওয়ার কথা ছিল। গণঅভ্যুত্থান কখনো ঠেকানো যায় না। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন সহজেই সমাধান করা যেত। কিন্তু, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জেদের কারণে এত মানুষ মারা গেল।’
এম সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রাণহানির যে চিত্র উঠে এসেছে, বাস্তবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। আরও কত মরদেহ কোথায় পড়ে আছে, কত গণকবর হয়েছে, কত নিরীহ মানুষের প্রাণ ঝরেছে! তিনি তো চলে গেলেন। এখন এর জবাব দেবে কে?’
আপনার মতামত লিখুন :