রাশিয়ার কাছ থেকে কেনা দুটি হেলিকপ্টার আনতে গিয়ে জটিল সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কেনা হেলিকপ্টার দুটির দাম ৪০০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যই এর ২৯৮ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে হেলিকপ্টারগুলো দেশে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশ এখন কূটনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ৩১ জুলাই বিষয়টি নিয়ে তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও স্বরাষ্ট্রের চিঠি হাতে পাওয়ার পর আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, কেনা দুটি হেলিকপ্টার এমআই-১৭১ এ২ মডেলের, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জেএসসি রাশিয়ান হেলিকপ্টার্স।
গত ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিলে প্রতিষ্ঠানটি কার্গো বিমানে হেলিকপ্টার পাঠানোর প্রস্তুতি নিলেও যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ প্রক্রিয়া স্থগিত করে।
হেলিকপ্টার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল দুর্গম এলাকায় সন্ত্রাস দমনে পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে। ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ পুলিশ ও রাশিয়ান হেলিকপ্টার্সের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন তৎকালীন আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক আন্দ্রে আই ভোগেনিস্কি।
ওই বছরের ৬ অক্টোবর অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি প্রস্তাব অনুমোদন করে এবং ১৯ নভেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরে আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে তখন জানানো হয়েছিল, হেলিকপ্টার দুটি বেসামরিক কাজে ব্যবহৃত হবে এবং পুলিশের এয়ার উইং গঠন করা হবে।
তবে প্রশ্ন উঠেছে, ২০২১ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার কিছু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পরও কেন একই বছরের নভেম্বরে নিষেধাজ্ঞাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হলো এবং এত বড় অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করা হলো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এ চুক্তির কারণে এখন বর্তমান সরকার বিপাকে রয়েছে। কূটনৈতিক সমাধান ছাড়া বিকল্প নেই।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, হেলিকপ্টার দুটি বর্তমানে রাশিয়ার ওয়্যারহাউসে (গুদামে) রাখা আছে, এবং এর রক্ষণাবেক্ষণে বাড়তি খরচ হচ্ছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী হেলিকপ্টার গ্রহণ না করলে বাংলাদেশকে পুরো ব্যয় বহন করতে হতে পারে। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি মামলা করতে পারে, কারণ বিরোধ নিষ্পত্তির ধারা আন্তর্জাতিক আরবিট্রেশন সেন্টার (এসআইএসি)-এ পাঠানোর কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, তারা গত জুনে মতামত দিয়েছিল বাংলাদেশ হেলিকপ্টার আনলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝানো দরকার যে হেলিকপ্টার দুটি বেসামরিক প্রকৃতির এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ব্যবহার হবে। হেলিকপ্টার দুটি বাংলাদেশের জন্য তৈরি হওয়ায় অন্য কোনো দেশে পাঠানোও সম্ভব নয়।
এ প্রসঙ্গে ব্যাংকার ও মুদ্রাবাজার বিশেষজ্ঞ মামুন রশীদ বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞাভুক্ত দেশ বা প্রতিষ্ঠান থেকে সরঞ্জাম আনা ঝুঁকিপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের গভীর বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে, তাই এ ধরনের পদক্ষেপে সতর্ক থাকতে হবে। টিকফার (বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি) চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করে অনুমতি নেওয়া উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, সরকার চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রেয়াত চাইতে পারে। হেলিকপ্টার দুটি বেসামরিক কাজে ব্যবহারের বিষয়টি এবং আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি ব্যাখ্যা করলে যুক্তরাষ্ট্র বাস্তবতা বুঝে অনুমতি দিতে পারে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন