গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পার হয়েছে। এরই মধ্যে বেজে গেছে নির্বাচনের ঢামাঢোল। সরকারের সব মহল থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনায় আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকারের সব মহল। ব্যতিক্রম নেই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ও। তবে যেহেতু এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ট সংবাদ কীভাবে প্রকাশ হয় তা নিশ্চিত করা, সেহেতু কাজটি কিছুটা কঠিন। আর তাই নির্বাচনকালীন সংবাদমাধ্যমগুলোকে—বিশেষ করে নির্বাচনের আগে, চলাকালে ও পরে—তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। আর তাই তিনি বলেছেন, গণমাধ্যমের এ সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন নির্বিঘ্নে যাতে হয় সে ব্যপারে সবধরনের সহায়তা করা হবে।
রোববার (০৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর তথ্য ভবনে ‘নির্বাচনে গণমাধ্যমের ভূমিকা’-বিষয়ক মতবিনিময়সভায় এ কথা বলেন তিনি।
সভায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রকাশক, সম্পাদক ও সাংবাদিকরা অংশ নেন। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে অতীতের দুঃসহ অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তারা ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে নির্বাচনকালে সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।
এ সময় উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, গত ১৫ বছর দেশ একটা স্বৈরশাসনের অধীনে ছিল। তাই এ সময়টায় গণমাধ্যম আস্থা হারিয়েছে। সেই আস্থা পুনরুদ্ধারে নির্বাচনকালীন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করতে হবে।
তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে। জনগণ ভোট দিতে গিয়ে সহিংসতার শিকার হবে না, সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। আশা করছি, দেশের গণমাধ্যমগুলোও এ চিন্তার বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যদি কোনো সহিংসতা ঘটে, তবে গণমাধ্যম যেন এর মূল কারণ ও দায়দায়িত্ব খুঁজে বের করে প্রকাশ করে সেই আহ্বানও জানান উপদেষ্টা।
এ সময় তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে, চলাকালীন ও পরে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমকে কোনো ধরনের বাধা দেওয়া হবে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সহিংসতামুক্ত হবে সরকার সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে সরকার। ভোট দিতে গিয়ে কেউ যেন সহিংসতার শিকার না হয়, এটাই আমাদের অঙ্গীকার।’
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম আরও বলেন, যদি কোনো সহিংসতা ঘটে, গণমাধ্যমকে অবশ্যই তার মূল কারণ ও দায়দায়িত্ব বিশ্লেষণ করে প্রকাশ করতে হবে। সত্য জানানো এবং জনস্বার্থে অবস্থান নেওয়াই গণমাধ্যমের প্রধান দায়িত্ব।
তিনি বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে একটি তথ্যনির্ভর নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।’
মাহফুজ আলম বলেন, এবারে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তরুণ ভোটারদের মধ্যে আস্থা তৈরিতে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এবারের নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভোট দেবেন। কোন রাজনৈতিক দল কী ভূমিকা পালন করছে, তা প্রবাসীদের নিকট পৌঁছাতে গণমাধ্যমকে কাজ করতে হবে।
নির্বাচনের সময় তথ্যের অবাধ প্রবাহ সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, নির্বাচনের মাঠে কী ঘটছে, কী ধরনের দুর্নীতি ও সহিংসতা হচ্ছে, সবকিছু জনগণকে জানাতে হবে। ইতিপূর্বে নির্বাচনের সময় গণমাধ্যমে ওপর বাধা ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণমাধ্যমের ওপর কোনো বাধা থাকবে না।
নির্বাচনের সময় সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে উল্লেখ করে মাহফুজ আলম বলেন, নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোনো অসংগতিপূর্ণ বিধি-নিষেধ থাকলে তা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
একই দিন অপর এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই নির্বাচন ঠেকানোর।
তিনি বলেন, আজকের উপদেষ্টামণ্ডলির বৈঠক থেকে যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে স্থানীয় প্রশাসনকে আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করার কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয় সে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার বক্তব্যে তা স্পষ্ট হলো।
মতবিনিময় সভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা, অতিরিক্ত সচিব মো. কাউসার আহাম্মদ, মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর-সংস্থার প্রধান এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, প্রকাশক ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। সভাটি সঞ্চালনা করেন প্রধান তথ্য অফিসার মো. নিজামূল কবীর।