দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত ও নিরাপত্তা-নির্ভর স্থান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সেই বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজেই হঠাৎ দাউদাউ করে আগুন, ধোঁয়ায় ঢেকে যায় পুরো এলাকা। সাত ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও নেভেনি বিতর্ক। অভিযোগ উঠেছে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে ছিল ফায়ার সার্ভিসের প্রবেশের অনুমতি।
আগুন লাগার পরপরই বিমানবন্দরের নিজস্ব ফায়ার ফাইটার ও আনসার সদস্যরা নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। তবে ঢাকার কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অভিযোগ করেছে, ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও তাদের যথাসময়ে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সংগঠনটির মতে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং অনুমতির অপেক্ষায় থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে আরও ভয়াবহ আকার নেয়।
রোববার (১৯ অক্টোবর) ঢাকা কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মিজানুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো আগেই এসে পৌঁছেছিল, কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও অনুমতির অভাবে তারা ঢুকতে পারেনি। আগেই যদি আগুনে অংশ নিতে পারত তাহলে হয়তো এত বড় ক্ষতি হতো না। অনেকেই বলছেন, ঘটনাটি পরিকল্পিত হতে পারে। এটাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সরকারকে বিষয়টি মাথায় রেখে গভীরভাবে তদন্ত করতে হবে।’
তার মতে, কার্গো ভিলেজে থাকা বিপুল পরিমাণ আমদানি-রপ্তানির মালামাল ও আন্তর্জাতিক চালানের নথি এই অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়, বাণিজ্যিক আস্থায়ও বড় ধাক্কা লাগতে পারে।
অন্যদিকে, বেসামরিক বিমান উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবন্দরের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ইউনিট সময়মতোই কাজ শুরু করে। তিনি জানান, ‘৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই আমাদের নিজস্ব ফায়ার ইউনিট আগুনে সাড়া দিয়েছে। বাইরে থেকে ফায়ার সার্ভিসও দ্রুত যোগ দেয়। তারপরও যত অভিযোগ এসেছে সবই আমলে নিয়ে আজকের আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় আলোচনা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগুন লাগার শুরুতে মালামাল সরানোর মতো অবস্থা ছিল না। চারদিক ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছিল। অনেক দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে। তারপরও এখন সব সংস্থা মিলে কাজ করছে। তদন্তে বেরিয়ে আসবে কী কারণে আগুন নেভাতে এত সময় লেগেছে।’
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, কার্গো ভিলেজে থাকা প্যাকেটজাত ও দাহ্য মালামাল আগুনের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়। জায়গাটি তুলনামূলক বদ্ধ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগেছে।
এদিকে, আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে ইতোমধ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটি আগুন লাগার উৎস, নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিষয়ে আলাদা প্রতিবেদন দেবে।
সরকারি সূত্র জানায়, রোববার সকালে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এলে ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাব ও তদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে, যাতে খুব দ্রুত কার্গো ভিলেজ আবার চালু করা যায়। তবে নিরাপত্তা ও তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ঝুঁকি নেওয়া হবে না।’
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তদন্তের সুপারিশ অনুযায়ী ভবিষ্যতে কার্গো এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা ও অগ্নিনির্বাপণ কাঠামো আরও শক্তিশালী করা হবে।