জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী জুবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বর্ষা নামে এক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। পাশাপাশি ঘটনাস্থলের পাশের ভবনের একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে দেখা দিয়েছে রহস্য, চলছে বিশ্লেষণ। সন্দেহ করা হচ্ছে সিসি ফুটেজে দ্রুত চলে যেতে দেখা যাওয়া দুই তরুণের একজন বর্ষার প্রেমিক মাহির রহমান ও আরেকজন মাহিরের বন্ধু। পুলিশ ধারণা করছে, এ দুই তরুণ হত্যাকাণ্ডে জড়িত। প্রাথমিকভাবে তাদের শনাক্ত করে অভিযানও শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
বংশাল থানার ওসি রফিকুল ইসলাম আটক ছাত্রী বর্ষাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জানান, বর্ষার সঙ্গে মাহির রহমান নামে এক তরুণের ৯ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মাহির বোরহান উদ্দীন কলেজের ছাত্র। আর আর বর্ষা ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজের ছাত্রী। পাশাপাশি বাড়িতে বেড়ে ওঠায় তাদের মধ্যে ছিল প্রেমের সম্পর্ক। চতুর্থ শ্রেণি থেকে একে অপরকে পছন্দ করত।
ওসি বলেন, সম্প্রতি বর্ষা মাহিরকে জানায়, সে জুবায়েদকে পছন্দ করে। এরপর থেকে তাদের সম্পর্কে দেখা দেয় টানাপোড়েন। কিছুদিন আগে তাদের সম্পর্কও ভেঙে যায়। এ ক্ষোভ থেকে মাহির তার বন্ধুকে নিয়ে এ হত্যার ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।
ঘটনাস্থলের পাশের ভবনের ফুটেজে দেখা গেছে, দুজন যুবক দ্রুত দৌড়ে আসছে। একজনের গায়ে কালো টি-শার্ট, আরেকজনের গায়ে গোলাপী টি-শার্ট। ফুটেজটি অস্পষ্ট হওয়ায় তাদের মুখ স্পষ্টভাবে দেখা যায়নি। পুলিশ বলছে, দুই যুবকের একজন মাহির বলে ধারণা তাদের। অপরজন তার বন্ধু। এ দুজনকে ধরতে অভিযান চলছে।
বর্ষার মধ্যে কোনো হতাশা বা কান্নার ছাপ পাওয়া যায়নি জানিয়ে ওসি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তার মধ্যে কোনো নার্ভাসনেস ছিল না। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাকে চিন্তামুক্ত দেখা গেছে। আগের প্রেমিকের সঙ্গে ৯ বছরের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় তাকে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছেন।
আরও বিস্তারিত তদন্ত করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত জানানো হবে বলে ওসি রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, রোববার (১৯ অক্টোবর) আনুমানিক বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে ছাত্রীর বাসার তিন তলায় তিনি খুন হন। নিচ তলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত সিঁড়িতে রক্ত পাওয়া গেছে। তিন তলার সিঁড়িতে উপুর হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় তার লাশ। স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। হত্যার প্রায় ৫ ঘণ্টা পর লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় মিটফোর্ট হাসপাতালের মর্গে।
ঘটনার পরপরই আরমানিটোলার বাসাটি ঘিরে রাখেন জবি শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এরপর লালবাগ বিভাগের ডিসি, এসি ও বংশাল থানার ওসি ভবনের ৫ম তলায় থাকা ছাত্রী বর্ষার বাসায় পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে বর্ষাকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। এদিন রাতে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে বংশাল থানার সামনের সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
ভুক্তভোগী পরিবার ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিয়েছেন। ভুক্তভোগীর বড় ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এনায়েত হোসাইন সৈকত বলেন, ‘আমরা আগে ৬ জনের নামে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তারা হলেন, ছাত্রী, তার বাবা-মা-মামা, প্রেমিক মো. মাহির রহমান ও এক বন্ধু।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন