জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তিন ভাগে বাস্তবায়নযোগ্য এই সুপারিশের মধ্যে নির্বাহী আদেশে সরকার ৯টি সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারবেন বলে জানিয়েছে কমিশন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার হাতে জুলাই জাতীয় সনদের সুপারিশ জমা দেয় কমিশন। পরে রাজধানীর বেইলী রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।
নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলো হলো-
১. উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণ: যে সকল উপজেলা জেলা সদরে অবস্থিত (সদর উপজেলা), সে সকল উপজেলা আদালতসমূহ জেলা জজ কোর্টের সঙ্গে সংযুক্ত রেখে সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। বিদ্যমান চৌকি আদালত, দ্বীপাঞ্চল ও ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত উপজেলা আদালতসমূহ বহাল রেখে এর প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।
জেলা সদরের কাছাকাছি উপজেলাগুলোতে নতুন আদালত স্থাপনের প্রয়োজন নেই (প্রয়োজনীয় জরিপ পরিচালনা সমাপ্ত করে)। অবশিষ্ট উপজেলাগুলোর জনসংখ্যার ঘনত্ব, ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য, যাতায়াত ব্যবস্থা, দূরত্ব, অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে পর্যায়ক্রমে আদালত স্থাপন করা হবে।
অধস্তন আদালতের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা এবং আইনগত সহায়তা কার্যক্রম উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হবে।
২. বিচার বিভাগের জনবল বৃদ্ধি: বিচার বিভাগের সকল স্তরে বিচারক ও সহায়ক জনবল বৃদ্ধি এবং বিশেষায়িত আদালত স্থাপন করা হবে।
৩. আদালত ব্যবস্থাপনা সংস্কার ও ডিজিটালাইজ করা: মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও হয়রানি নিরসন, স্বচ্ছতা আনয়ন, মামলার খরচ হ্রাস ও বিচারপ্রাপ্তি সহজলভ্য করার জন্য বিভিন্ন বিধি প্রণয়ন, সংশোধন ও সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক নির্দেশনা জারির মাধ্যমে আদালত ব্যবস্থাপনার সংস্কার ও ডিজিটালাইজ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৪. আইনজীবীদের আচরণবিধি: আইনজীবীদের আচরণবিধি যুগোপযোগীকরণ, জেলা পর্যায়ে বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল স্থাপন এবং এর প্রধান হিসেবে একজন বিচারককে দায়িত্ব প্রদান করা হবে। অপরদিকে আদালত প্রাঙ্গণে দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হবে।
৫. গণহত্যা ও ভোট জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠন: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে গণহত্যা ও নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত এবং ভোট জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের চিহ্নিতকরণ এবং তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে।
৬. কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে দুইটি প্রশাসনিক বিভাগ গঠন: ভৌগোলিক অবস্থান ও যাতায়াতের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে ২ (দুই)টি প্রশাসনিক বিভাগ গঠন করা হবে।
৭. দুর্নীতিবিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়ন: রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের পরিবর্তে একটি দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন করে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবিরোধী দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করা হবে। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ন্যায়পাল নিয়োগ করে ন্যায়পালের কার্যালয়কে এই কৌশলপত্র বাস্তবায়নের সঙ্গে কার্যকরভাবে যুক্ত করা হবে।
৮. পরিষেবা খাতের কার্যক্রম ও তথ্য অটোমেশন করা: সেবা প্রদানকারী সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিশেষত, থানা, রেজিস্ট্রি অফিস, রাজস্ব অফিস, পাসপোর্ট অফিস এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সকল সেবা-পরিষেবা খাতের সেবা কার্যক্রম ও তথ্য-ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ (এন্ড-টু-এন্ড) অটোমেশনের আওতায় আনা হবে।
৯. ওপেন গভর্নমেন্ট পার্টনারশিপের পক্ষভুক্ত হওয়া: বাংলাদেশকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ওপেন গভর্নমেন্ট পার্টনারশিপের পক্ষভুক্ত হতে হবে।

