ঢাকা শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৫

৮৩ কোটি নয় ঐকমত্য কমিশনের ব্যয় ৪৫ লাখ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২৫, ১১:২১ এএম
ছবি- সংগৃহীত

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ব্যয় সংক্রান্ত ভুয়া তথ্য ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে কমিশন। সম্প্রতি একটি মহল থেকে কমিশন আপ্যায়ন বাবদ ৮৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছে এমন দাবি করা হলেও, কমিশন একে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও পরিকল্পিত প্রোপাগান্ডা’ বলে অভিহিত করেছে।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাতে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলেন, এটি স্পষ্টতই উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার। অপপ্রচারকারীরা কমিশনের কোনো বক্তব্য নেননি বা তথ্য যাচাইয়ের জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগও করেননি।

কমিশনের তথ্যানুসারে, ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সর্বমোট বাজেট ছিল ৭ কোটি ২৩ লাখ ৩১ হাজার ২৬ টাকা। এর বিপরীতে ৩১ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মাত্র ১ কোটি ৭১ লাখ ৩১ হাজার ১২৬ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

এর মধ্যে আপ্যায়ন খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৩ লাখ টাকা, যার মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৪৫ লাখ ৭৭ হাজার ৬৮৫ টাকা। কমিশনের ব্যয়ের বেশিরভাগ অংশ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক ও আলোচনায় ব্যয় হয়েছে।

প্রথম পর্যায়ে (২০ মার্চ-১৯ মে ২০২৫) রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ৪৪টি বৈঠকে আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় হয়েছে ৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা। দ্বিতীয় পর্যায়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ২৩টি সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ব্যয় হয়েছে ২৮ লাখ ৮৩ হাজার ১০০ টাকা। প্রতিদিনের গড় ব্যয় ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকার কম। তৃতীয় পর্যায়ে ৭টি বৈঠকে ৩০টি দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন, এবং এই পর্বের মোট ব্যয় ছিল ৭ লাখ ৮ হাজার ৬০০ টাকা।

এর বাইরে কমিশনের ৫০টি অভ্যন্তরীণ সভায় ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৫২০ টাকা। রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠক এবং তিনটি সাংবাদিক সম্মেলনসহ ১৩টি সভায় ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৩৪০ টাকা। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ১৩টি বৈঠকে আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ৯৬০ টাকা। বিশেষজ্ঞগণ কোনো ভাতা বা সম্মানী গ্রহণ করেননি।

ঐকমত্য কমিশনের ভাষ্যমতে, উল্লিখিত বিস্তারিত হিসাব থেকেই প্রমাণিত যে ৮৩ কোটি টাকার ব্যয়ের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য। এটি কেবল মিথ্যাচার নয়, বরং কমিশন ও তার কার্যক্রমকে হেয় করার এক সংগঠিত প্রচেষ্টা।

কমিশন জানায়, দায়িত্বকালীন সময়ে তারা সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা বজায় রেখেছে। গণমাধ্যম কর্মীরা নিয়মিতভাবে কমিশনের কার্যক্রম কভার করার সুযোগ পেয়েছেন। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনাগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরাসরি টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে।

কমিশন আশা প্রকাশ করেছে, অপপ্রচারকারীরা তাদের ভুল স্বীকার করে অবিলম্বে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। একই সঙ্গে তারা দায়িত্বশীল গণমাধ্যমসমূহকে সঠিক তথ্য প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছে।