আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মানসিক, শারীরিক, আবেগগত, সামাজিক এবং আধ্যাত্মিক চাহিদা থাকে। স্ব-যত্ন হলো এই চাহিদাগুলোকে পূরণ করে আমাদের সামগ্রিক সুস্থতা বাড়ানোর প্রক্রিয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) মতে, স্ব-যত্ন হলো ব্যক্তি, পরিবার এবং সম্প্রদায়ের স্বাস্থ্য উন্নয়ন, রোগ প্রতিরোধ এবং অসুস্থতা ও অক্ষমতা পরিচালনার ক্ষমতা। এর গুরুত্ব অপরিসীম হলেও, অনেক সময় মানুষ এটিকে বিলাসিতা হিসেবে ভুলভাবে ধারণ করে। তবে কিছু সহজ পরিবর্তনের মাধ্যমে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে স্ব-যত্নের অভ্যাস তৈরি করা সম্ভব।
যে ৫ বিষয়ে যত্নশীলন হলে নিজেকে সামগ্রিক সুস্থ রাখা যাবে-
১. শারীরিক স্ব-যত্ন
শারীরিক সুস্থতা হলো সামগ্রিক সুস্থতার ভিত্তি। আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে মানসিক, আবেগগত এবং সামাজিক সুস্থতা বজায় রাখা সহজ হয়। শারীরিক স্ব-যত্নের জন্য কিছু সহজ অনুশীলন হল- নিয়মিত ব্যায়াম বা হাঁটা, পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং ছোট দূরত্বে গাড়ি চালানোর পরিবর্তে হাঁটা বা সাইক্লিং করা। এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলোও দীর্ঘমেয়াদে সুস্থতা বাড়াতে সাহায্য করে।
২. সামাজিক স্ব-যত্ন
সামাজিক সুস্থতা বজায় রাখতে আমাদের সম্পর্কগুলো লালন করা প্রয়োজন। বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, সপ্তাহে অন্তত একবার যোগাযোগ রাখা, দলগত কার্যকলাপে অংশ নেওয়া, সামাজিক ইভেন্টে উপস্থিত হওয়া এবং সম্পর্কের মধ্যে ছোট ছোট ভালোবাসার প্রকাশ করা সামাজিক স্ব-যত্নের সহজ উপায়। ব্যস্ত সময়সূচির মধ্যেও এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো আমাদের মানসিক ও আবেগগত সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৩. মানসিক স্ব-যত্ন
মানসিক স্ব-যত্ন আমাদের মনকে তীক্ষ্ণ ও সুস্থ রাখে। এটি প্রায়শই উপেক্ষিত হয়, কিন্তু মানসিক সুস্থতা সামগ্রিক সুস্থতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মানসিক স্ব-যত্নের জন্য পড়াশোনা, ধাঁধা সমাধান, ধ্যান বা মননশীলতা, চাপ ব্যবস্থাপনার ব্যায়াম এবং নতুন দক্ষতা শেখার মতো কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এই অভ্যাসগুলো আমাদের মনকে সতেজ রাখে এবং দৈনন্দিন জীবনের চাপ মোকাবিলা করতে সাহায্য করে।
৪. আবেগগত স্ব-যত্ন
আবেগকে স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ ও প্রক্রিয়া করা আবশ্যক। আবেগগত স্ব-যত্নের জন্য জার্নাল লেখা, থেরাপি বা কাউন্সেলিং নেওয়া, শিল্প বা সঙ্গীতের মাধ্যমে আবেগ প্রকাশ, বিশ্বাসী ব্যক্তির সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা এবং নিজের অনুভূতিকে স্বীকার করা সহায়ক। এই অভ্যাসগুলো আমাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
৫. আধ্যাত্মিক স্ব-যত্ন
আধ্যাত্মিক সুস্থতা আমাদের জীবনে অর্থ, উদ্দেশ্য এবং মহাবিশ্বের সঙ্গে সংযোগ অনুভব করায়। আধ্যাত্মিক স্ব-যত্নের জন্য ধ্যান বা প্রার্থনা, প্রকৃতিতে সময় কাটানো, কৃতজ্ঞতার অভ্যাস করা, ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক সেবায় অংশ নেওয়া এবং নিজের মূল্যবোধ ও লক্ষ্য নিয়ে চিন্তাভাবনা করা কার্যকর। এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।

