ঢাকা শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৫

শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে লাইজুর সফলতা

পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২৫, ১২:১৬ পিএম
লাইজু। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা লাইজুকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। চলৎ শক্তিহীন, বিকলাঙ্গ পা নিয়ে জন্ম নেয়া লাইজুর জীবন সংগ্রাম এবং সে যেভাবে জয় করে সফলতা অর্জন করেছে, তা এক অনন্য উদাহরণ।

লাইজুর জন্ম গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলায়। বাবার বাড়িতে অবহেলা ও কষ্টের মধ্যে বেড়ে ওঠা লাইজু ৮০’র দশকের মাঝামাঝি সময়ে একই এলাকার সাইকেল মেকার কোনা মিয়ার সঙ্গে বিয়ে করেন। কোনা মিয়া তার মৃত স্ত্রীর রেখে যাওয়া চার সন্তান লালন-পালনের জন্য লাইজুকে বিয়ে করেছিলেন।

প্রতিবন্ধী লাইজুর উপর স্বামীর আগের সন্তানদের দায়িত্ব ও জীবনযাপনের চাপ ছিল অতিরিক্ত কষ্টের। ৯০-এর দশকের শেষ ভাগে তারা জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার সীমান্তবর্তী বাগজানার চেঁচড়া চৌমুহনী মোড়ের কাছে একটি ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে বসবাস শুরু করেন। কোনা মিয়া সাইকেল মেরামতের কাজ করতেন, আর লাইজু প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে সংসারের আয় বাড়াতে নিজে কাজ শুরু করেন।

লাইজু সীমান্ত এলাকা থেকে রিক্সা ও ভ্যানে লবণ, চিনি, কসমেটিকস, শাড়ি এবং ছিট কাপড় নিয়ে পাঁচবিবি বাজার ও জয়পুরহাট শহরে বিক্রি করতে থাকেন। এই সময় লাইজুর দুই সন্তানও জন্ম নেন। দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি সন্তানদের লালন-পালন করে বড় করেন এবং প্রায় সবাইকে বিয়ে দিয়েছেন।

২০১৬ সালে স্বামী কোনা মিয়া মারা গেলে লাইজু দিশেহারা হলেও হাল ছাড়েননি। স্বামীর সামান্য সঞ্চয় এবং নিজের ব্যবসার আয় দিয়ে তিনি কয়েক শতক জমি কিনে তা সমানভাবে সন্তানদের মধ্যে বণ্টন করেন। বয়স বাড়লেও লাইজু বসে থাকেন না। আটাপাড়া বেলী ব্রীজের নীচে ছোট্ট একটি টঙ্গের দোকান চালিয়ে নিজের শক্তি ও মনোবল ধরে রেখেছেন তিনি।

সম্প্রতি স্থানীয় একজন তাকে হুইলচেয়ারও দিয়েছেন, যার মাধ্যমে লাইজুর চলাচল সহজ হয়েছে। বর্তমানে সতীনের ছেলের ঘরেই বসবাস করছেন লাইজু। সন্তানরা তাকে মায়ের মতো আদর করছেন, আর অতীতের দুর্বিষহ জীবনের কষ্ট অনেকটাই ভুলে গেছেন।

লাইজুর জীবন প্রমাণ করে, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কোনো বাধা নয়। দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি ও সাহস থাকলে যে কেউ প্রতিকূলতা জয় করতে পারে।