যুক্তরাজ্যের নতুন কড়াকড়ি ভিসা নীতি এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তিতে সরাসরি প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী গ্রহণে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে দেশটির বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। ভিসার অপব্যবহার ও শিক্ষার্থীভিত্তিক অভিবাসন বেড়ে যাওয়ায় এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের অন্তত নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশকে ‘উচ্চ ঝুঁকির’ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করে নতুন করে ভর্তিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ভিসা আবেদন বাতিল এবং শিক্ষার্থীদের আশ্রয় প্রার্থনার প্রবণতা বাড়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও কঠোরভাবে যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দিয়েছে হোম অফিস। দেশটির সীমান্ত নিরাপত্তামন্ত্রী ডেম অ্যাঞ্জেলা ইগল বলেন, যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হওয়ার জন্য শিক্ষার্থী ভিসাকে ‘পেছনের দরজা’ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে কড়াকড়ি এনেছে
- ইউনিভার্সিটি অব চেস্টার: ২০২৫ সালের শরৎকাল পর্যন্ত পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের ভর্তি স্থগিত
- ইউনিভার্সিটি অব উলভারহ্যাম্পটন: বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে স্নাতক ভর্তি বন্ধ
- ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট লন্ডন: পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের ভর্তি স্থগিত
- লন্ডন মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ
- সান্ডারল্যান্ড ও কভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়: বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আবেদন স্থগিত
- হার্টফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়: ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উভয় দেশের ভর্তি বন্ধ
এ ছাড়া অক্সফোর্ড ব্রুকস, বিপিপি এবং আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সিএএস লেটার পাচ্ছেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দাবি, ছাত্র ভিসায় ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার ৫ শতাংশের বেশি হলে তাদের স্পনসর লাইসেন্স ঝুঁকির মুখে পড়ে। আগে এই সীমা ছিল ১০ শতাংশ। নতুন নীতিতে তাদের আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সতর্ক হতে হচ্ছে।
ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার উদ্বেগজনক
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, শুধু এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ২২ শতাংশ এবং পাকিস্তান থেকে ১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ভিসা নাকচ হয়েছে—যা নতুন সীমার তুলনায় অনেক বেশি। হোম অফিস যে ২৩ হাজার ৩৬টি ভিসা আবেদন বাতিল করেছে, এর প্রায় অর্ধেকই এই দুই দেশের শিক্ষার্থীর।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নাগরিকদের আশ্রয় প্রার্থনার আবেদনও বেড়েছে, যাঁদের অনেকেই ছাত্র বা কর্ম ভিসায় যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল অ্যাডমিশনস-এর জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী কোর্স শেষ না করে ভিসা ক্যাটাগরি পরিবর্তন বা আশ্রয় চেয়ে ঝুঁকি তৈরি করছেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর ঝুঁকি নিতে চাইছে না।
তিনি পরামর্শ দেন, শিক্ষার্থীদের উচিত ভিসা নিয়ম কঠোরভাবে মেনে পড়াশোনাকে প্রাধান্য দেওয়া।
যুক্তরাজ্যের এসব পদক্ষেপে বাংলাদেশের হাজারো শিক্ষার্থী এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন