ঢাকা বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫

আ. লীগ ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না: জিএম কাদের

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২৫, ০৮:৫৩ পিএম
জাতীয় পার্টির ঢাকা জেলা শাখার মতবিনিমিয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জিএম কাদের। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) বলেছেন, আওয়ামী লীগ যখন জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, আমি তার প্রতিবাদ করেছি। একইভাবে এখন বলছি, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

বুধবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয় মিলনায়তনে দলটির ঢাকা জেলা শাখার মতবিনিমিয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি ।

জিএম কাদের বলেন, ‘জুলাই গণহত্যায় অনেক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমার এবং আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মিথ্যা হত্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। মিথ্যা মামলায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না।’

তিনি আইন উপদেষ্টা ও আইজিপিকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘অনেক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, তাহলে যাদের আটক করা হয়েছে তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না কেন? আইনের কথা হচ্ছে, একজন নিরপরাধকে বাঁচাতে প্রয়োজনে দশজন দোষীকে ছেড়ে দাও। কিন্তু এখন কী হচ্ছে? একজন দোষীকে শাস্তি দিতে দশজন নিরপরাধ মানুষকে শাস্তি দিচ্ছে।’

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাড়িঘর ও অফিসে আগুন দিয়ে, মামলা হামলা করে আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা বর্তমান সরকারের অপকর্মের বিরোধিতা করছি, ঝুঁকি নিয়ে জনগণের পক্ষে কথা বলছি। সরকারের জুলুম-নির্যাতনের ভয়ে আমরা থেমে যাব না। এ জন্যই জনগণ আমাদের সাথে আছে। আমাদের লাঙল অন্য কাউকে দিতে চাইলে আমরা রাজপথে আন্দোলন করব। যারা ভুমিকা রাখতে পারবে তারাই জাতীয় পার্টির প্রকৃত নেতা।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টির পরিষ্কার কোনো রাজনীতি ছিল না। জাতীয় পার্টি কী করতে চায় তা নিয়ে নেতাকর্মী ও জনমনে বিভ্রান্তি ছিল। এখন থেকে আমরা জনগণের পক্ষের রাজনীতি করব। এতদিন জনগণ ভোট দিতে পারে নাই, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আমি সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলাম।’

জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতা বলেন, ‘মানুষের ভোটের অধিকারের জন্য যে আন্দোলন হয়েছে, আমরা সর্বাত্মকভাবে তার সাথে ছিলাম। ছাত্ররা যখন কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে, আমি তাকে বলেছিলাম বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন। ছাত্রদের ওপর যখন জুলুম-নির্যাতন শুরু হয়েছিল, তখন সকল স্তরের মানুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নেয়। এখন যদি বলে শুধু তারাই আন্দোলন করেছে, তা সঠিক নয়।’

তিনি বলেন, ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করেছিল, কিন্ত সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে সেই আন্দোলন সফলতা পেয়েছে। যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্ররা জীবন দিয়েছে, এখন সারা দেশে সকল স্তরে বৈষম্য চলছে। দোসর অপবাদ দিয়ে মানুষের ঘরবাড়ি ও কলকারখানায় আগুন দেওয়া হয়েছে।’

জিএম কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার আইনের মারপ্যাঁচে আমার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, এখন এই সরকারও আইনের মারপ্যাঁচে আমাকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশীয় রাজনীতিবিদ ও বিদেশি কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে একটি সফল সম্মেলনে আমাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়েছে। চেয়ারম্যান হিসেবে আমি যাকে নিয়োগ দিয়েছি, তাকে বাদ দেওয়ার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ক্ষমতাও আছে।’

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার যা করেছে, বর্তমান সরকারও তাই করছে, পরিবর্তন কী হলো? আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচার বলা হয়, একই কাজ যদি বর্তমান সরকারও করে তাকে কী বলবেন? আমাদের দলীয় প্রতীক অন্যদের দেওয়া হবে এমন ভয় দেখিয়ে আমাদের ব্ল্যাক মেইল করেছিল আওয়ামী লীগ, এখন আবার সেই খেলা শুরু হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির জনসমর্থন বেশি, তাই শেখ হাসিনা আরেকটি দল সাজিয়ে তাদের ধানের শীষ প্রতীক দেওয়ার সাহস করে নাই। বিএনপি মজলুম দল ছিল তাই সাধারণ মানুষ তাদের সমর্থন করেছে। এখন আমরাও মজলুম, আমরাও জনগণের সমর্থন অর্জন করতে পারব। এখন জাতীয় পার্টি ছাড়া সব দলই সরকারি দলের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে, সরকারি দলের দোষত্রুটি তাদের ঘাড়ে নাই। অপর দিকে সরকার আমাদের পিছে লেগে রয়েছে, সুবিধা তো দূরের কথা, আমরা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করতে পারি না।  জনগণের চোখে এখন আমরাই মজলুম।’

জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে আজ ঢাকা জেলার এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাড. মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, ইঞ্জিঃ ইকবাল হোসেন তাপস, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মোঃ খলিলুর রহমান খলিল, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাদুর ইসলাম ইমতিয়াজ, রমজান আলী ভূঁইয়া, ঢাকা জেলা নেতা আশরাফুজ্জামান আশু, মোঃ মশিউর রহমান তাপস, লাইজুল ইসলাম, মোঃ ইউসুফ, শাহজাদা।

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা একেএম নুরুজ্জামান জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল খায়ের, দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম, এনজিওবিষয়ক সম্পাদক মোড়ল জিয়াউর রহমান, যুগ্ম সাংগঠনিক শেখ সরোয়ার, যুগ্ম দপ্তর সমরেশ মন্ডল মানিক।