ঢাকা বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫

ইসলামী ব্যাংক নিয়ে জামায়াত-শিবির মব সৃষ্টি করে : নয়ন

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২৫, ০৯:৪৯ পিএম
রবিউল ইসলাম নয়ন। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ঢাকা দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন বলেছেন, বেশ কিছুদিন আগে ইসলামী ব্যাংক দখল নিয়ে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে একটা মব সৃষ্টি করেছিল।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে এক আলোচনায় যুবদলের এই নেতা বলেন, ‘জামায়াত শিবির ৫ আগস্টের পর ইসলামী ব্যাংক দখল করেছে এবং সেটাকে হালাল করার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে একটা মব সৃষ্টি করে দিয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ করছি, যদি ইসলামী ব্যাংক দখলের সঙ্গে মিনিমাম কোনো সম্পৃক্ততা আমাদের থাকে, তাহলে জাতি যে শাস্তি দেবে আমি মাথা পেতে নেব।’

রবিউল ইসলাম নয়ন বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকের ঘটনাটা নিয়ে তিনি খুবই বিব্রত। আমি আপনাদের মাধ্যমে জাতির কাছে অনুরোধ করছি যে ইসলামি ব্যাংকের ঘটনার সঙ্গে আমি বা আমাদের কেউ কোনোভাবে জড়িত কিনা আপনারা জাস্টিফাই করেন। গত বছরের ১১ আগস্ট আমরা নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে মিছিল করেছি, সেই মিছিলের ভিডিও আছে। সারা বাংলাদেশে যখন নৈরাজ্য হচ্ছে সেই মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছি আমি। সেদিন জনতা ব্যাংকের মোড় থেকে মিছিল শুরু করে বক চত্ত্বরে আসার পর হঠাৎ করে দেখলাম একটা গ্রুপ আমাদের উপর অতর্কিতভাবে হামলা চালাচ্ছে। সেখানে তারা বোতল, ইট,পাটকেল মারা শুরু করে। আমার কাছে মনে হয় কেউ কেউ গুলিও করছে। সেদিন আমরা জানান দিচ্ছিলাম সন্ত্রাসী চাঁদাবাজরা নির্মূল হয়ে যাও।

তিনি বলেন, হঠাৎ করে হামলার পর আমরা সেই স্থান ত্যাগ করে চলে আসি। সেখান থেকে আসার পর দেখলাম আমাকে নিয়ে নিউজ হইছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্যসচিব ব্যাংক দখল করতে গিয়েছে। আপনাদের মাধ্যম দিয়ে জাতির কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, ব্যাংক কী কখনো মিছিল নিয়ে গিয়ে দখল করা যায়? এটা তো কাগজ-কলমের একটা ব্যাপার। ওই ব্যাংক থেকে আমার মিছিলের কমপক্ষে ৫০০ মিটারের দূরত্ব ছিল। এতো দূর থেকে কেউ যদি বলে দখল করতে আসছে এটা কী হবে? এটা মেনে নেওয়া যায় না।’

নয়ন বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকের গেটের সামনে পর্যন্ত সিসি ক্যামেরা রয়েছে, দেখেন আমাদের কোনো ছবি আছে কিনা? মতিঝিল এলাকা তো অনেক সিসি ক্যামেরা রয়েছে, দেখেন তো ওই এলাকায় আমার কোনো সম্পৃক্ততা আছে কিনা? ইসলামী ব্যাংকে আমার কোনো অ্যাকাউন্টই তো নাই, সেখানকার কোনো কর্মকর্তা ল-কর্মচারীর সঙ্গে কোনো পরিচয় নেই। এটা আমি কীভাবে দখল করব?’

বিগত আন্দোলনে সংগ্রামে ভয়াবহ পুলিশি নির্যাতনের প্রসঙ্গে মহানগর দক্ষিণ যুবদলের এ সদস্য সচিব বলেন, ‘পুলিশ আমাকে গুলি করার পর মৃত ভেবে ঢাকা মেডিকেল নিয়ে যায়। আমি বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি সেটা কনফার্ম হওয়ার জন্য আরও এক রাউন্ড গুলি করে। আল্লাহ রহমতে তখন আমার আর জ্ঞান ফেরে নাই। মৃত ভেবে যখন ঢাকা মেডিকেলে পোস্টমর্টেম করতে যায় তখন ডাক্তাররা পালস চেক করে বুঝতে পারে আমি জীবিত আছি। একটা পর্যায়ে আমার জ্ঞান ফেরে। সেই সময়ে সাংবাদিকরা আমাকে অনেক সহায়তা করেছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেই সময় ঢাকা মেডিকেল থেকে আমাকে অন্য কোথাও নিয়ে গিয়ে পুলিশ আবারও ক্রসফায়ার দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তখন সাংবাদিক ও ডাক্তারদের ভূমিকার কারণে পুলিশ আর সেটা করতে পারেনি। ডাক্তাররা পুলিশকে বন্ড সই দিয়ে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যেতে বলেছিল। আমার পা কেটে ফেলা বা ইনজেকশন নিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল পুলিশ। সেই সময়ে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হস্তক্ষেপ ও সহযোগিতায় আমি বেঁচে আছি। প্রয়াত আইনজীবী খন্দকার মাহবুব রিটের কারণেই আমাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করেছিল পুলিশ। অথচ এর আগে পুলিশ আমাকে থানায় ‘নো এন্ট্রি’তে পাহারায় রেখেছিল।’

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর জামায়াত ও এনসিপির ভিন্ন প্রতিক্রিয়া বিষয়ে রবিউল ইসলাম নয়ন বলেন, 'জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সরকার কোন কারণে কথা বলবে। জামায়াত-এনসিপিকে যে এতোদিন ডাকছে এটাই তো ঠিক না। তাদের তো কোনো নিবন্ধনই নাই। তাদেরকে কীসের ভিত্তিতে ডাকবে? এতোদিন যে ডাকছে সেটাও করুণা। জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। কোর্ট বারবার তাদের নিবন্ধন বাতিল করে দিয়েছে। তাদেরকে কেন ডাকতে হবে? যারা এতো দিন ধরে এই সরকারের ঘাড়ের ওপর বসে লুটেপুটে খাওয়ার চিন্তা করেছে, লুটেপুটে খেয়েছে তাদের এখন চিন্তাধারা চলে এসেছে নারে প্রধান উপদেষ্টা যদি সঠিক রাস্তায় হাটে, যদি জনগণের রাস্তায় হাটে, জনগণের চিন্তাধারা নিয়ে একটা নির্বাচন দিয়ে দেয় তাহলে তো আমরা আর লুটপাট করে খেতে পারবো না। এই জন্য এনসিপি আর জামায়াতের আবোল-তাবোল বলতেছে।’

এসময় নয়ন মিডিয়াকে অনুরোধ করে বলেন, সবসময় বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও সঠিক তথ্য তুলে ধরতে সকলের কাছে অনুরোধ। এবং যারা সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন অপপ্রচার করেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আপনারা সঠিক ঘটনা জেনে তারপর প্রচার বা অপপ্রচার করবেন। যাতে করে কেউ কোন সংগঠনবা কোন মিডিয়ার দ্বারা মব সৃষ্টির শিকার না হয়।