ঢাকা বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫

মার্কিনী বোমা কি পারবে ইরানের ফোর্দো পাহাড়ের তলদেশে পৌঁছাতে?

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২৫, ১১:০০ পিএম
মার্কিনী বোমা ‘বাঙ্কার বাস্টার’ । ছবি- সংগৃহীত

ইরানের গোপন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ফোর্দো পাহাড়ের গভীরে অবস্থিত এবং  সেটি পাথর দিয়ে সুরক্ষিত। এই কেন্দ্রে স্থাপন করা সেন্ট্রিফিউজগুলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির মূল ভিত্তি। ইসরায়েল বহুদিন ধরেই এই কর্মসূচি ধ্বংসের ঘোষণা দিয়ে আসছে, তবে বাস্তবে ফোর্দো ভেদ করার মতো শক্তিশালী বোমা কেবল আমেরিকার কাছেই রয়েছে- যা এখনো ইসরায়েলিদের হাতে নেই বলে জানিয়েছে বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকরা বলছে, ফোর্দো ভেদ করার মতো শক্তি একমাত্র বোমা হল একটি আমেরিকান ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা যা ইসরায়েলিদের কাছে এখনও নেই।

‘বাঙ্কার বাস্টার’ কী?

‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা এমনভাবে তৈরি যাতে এটি প্রথমে ভূ-পৃষ্ঠ ভেদ করে নির্দিষ্ট গভীরতায় প্রবেশ করে, তারপর দ্বিতীয়বার বিস্ফোরণের মাধ্যমে ভেতরের লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করে।

সাধারণত, এই ধরনের বোমা ব্যবহার করা হয়- ভূগর্ভস্থ সামরিক সদর দপ্তর, বাঙ্কার গোপন গবেষণা ও অস্ত্রাগার ধ্বংসে ব্যাবহার করা হয়।

সামরিক বিশেষজ্ঞ মাইকেল ক্লার্ক বলেন, ‘এই ‘বাঙ্কার বাস্টার’ গুলো বড় ও ভারী এবং ভেতরে প্রচুর বিস্ফোরক থাকে।’

ইসরায়েলের কাছে কিছু বাঙ্কার ধ্বংসকারী বোমা থাকলেও, আমেরিকার তৈরি গৰু-৫৭ ‘মাস্সিভে অর্ডন্যান্স পেনেট্রেটর’ নামে ১৪ টনের একটি বোমা তাদের হাতে নেই। এটি এত ভারী যে কেবল কি-২ স্টিলথ বোমারু বিমানের মাধ্যমেই তা ছোড়া সম্ভব।

গৰু-৫৭ বোমা ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০০ ফুট (৬১ মিটার) গভীরে প্রবেশ করে বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম। এটি একমাত্র বোমা যা ফোর্দোর মতো অতিসুরক্ষিত স্থাপনা ধ্বংস করতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করাই আমাদের লক্ষ্য।’

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছে, ইসরায়েল  ইরানের তিনটি কেন্দ্রকে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করছে। সেগুলো হলো- নাতানজ – ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, ইসফাহান – বৃহৎ পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র, ফোর্দো – ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র।

ইসরায়েল কী কী ধ্বংস করেছে ইরানের?

ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় নাতানজ কেন্দ্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা-এর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি জানিয়েছেন, ‘প্রায় ১৫,০০০ সেন্ট্রিফিউজ ধ্বংস হয়েছে। যদিও সরাসরি বোমা হামলা নয়, বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করেও এই ক্ষতি ঘটানো হয়েছে বলে ধারণা।’

এছাড়াও ইসফাহানে কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিন্তু ভূগর্ভস্থ অংশ অক্ষত রয়েছে।

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা জানিয়েছে, এ হামলায় ফোর্দো কেন্দ্রের কোনো দৃশ্যমান ক্ষতি হয়নি।

নেতানিয়াহু কী চান?

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানিয়েছে, ‘আমরা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করেছি। তাদের পুনর্নির্মাণে ৩০ বছর লেগে যাবে। তারা এখন অন্তত এক প্রজন্মের জন্য হুমকিস্বরূপ নয়।’