ঢাকা শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫

‘পকেটের টাকায় সমাবেশে এসেছি, খাবার-পানিও নিজের ব্যবস্থায়’

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৫, ১২:৫৫ পিএম

দলীয় খরচে নয়, নিজেদের টাকায় ঢাকা এসেছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। খাবার, পানি, যাতায়াত সবই ব্যক্তিগত উদ্যোগে। কারো ব্যাগে রুটি-মুড়ি, কারও পিঠে ঝোলানো জায়নামাজ। কেউ লঞ্চে, কেউ বাসে বা ট্রেনে এসেছেন সমাবেশস্থলে। 

কুমিল্লা থেকে আসা আহমদ ইবনে আহসান বলেন, ‘আমরা গত রাতেই রওনা হয়েছিলাম। ফজরের আগেই ঢাকায় পৌঁছে গেছি। আলহামদুলিল্লাহ। সমাবেশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত থাকব, ইনশাআল্লাহ।’

শনিবার (১৯ জুলাই) ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশ। সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় আসছেন দলটির নেতাকর্মীরা। দুপুর ২টায় মূল পর্ব শুরু হলেও ভোর থেকেই নেতাকর্মীদের ঢল নামে রাজধানীতে।

সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের অনেকের সঙ্গেই কথা হয়। তারা জানান, প্রত্যেকেই নিজ খরচে এসেছেন। কেউ রুটি, মুড়ি, চিড়ে, গুড়, বিস্কুট ও পানি সঙ্গে এনেছেন। কেউ কেউ আবার বাস বা লঞ্চ ভাড়া দিয়ে অন্যদের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন, কিন্তু সংগঠনের কাছ থেকে কোনো সহায়তা নেননি।

ফরিদপুর জজ কোর্টের আইনজীবী মোসাদ্দেক আহমেদ বশির বলেন, ‘জামায়াত ব্যক্তিপূজাবিহীন একটি রাজনৈতিক দল। এত বড় সমাবেশে দলীয় প্রতীক ছাড়া কোনো নেতার ছবি নেই না প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদী, না গোলাম আযম, না বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমানের।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাস্তায় নেই কোনো বিশৃঙ্খলা, নেতাকর্মীদের মধ্যে নেই কোনো নেতৃত্ব দ্বন্দ্ব, এটি একটি শৃঙ্খলিত ও সুশৃঙ্খল আয়োজন। আশ্চর্য লাগছে, এত বড় জমায়েতে এতটা শৃঙ্খলা!’

ঝালকাঠি থেকে আসা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘লঞ্চে হাজারো কর্মী এসেছেন। প্রত্যেকে নিজের খাবার ও খরচ নিজে বহন করেছেন। কেউ সিগারেট খাচ্ছেন না, মাদক নেই, হইচই নেই—এটাই ইসলামী রাজনৈতিক আদর্শের সৌন্দর্য। ঘুমানোর জায়গা না পেয়ে কেউ জেগে বসে থেকেছেন, যাতে অন্য কেউ একটু বিশ্রাম নিতে পারে।’

সাংবাদিক মিজানুর রহমান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘নিজের টাকায়, নিজের খাবার নিয়ে সমাবেশে আসার মজাই আলাদা। এ অনুভব সবাই পায় না।’

এদিকে, সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট গেট ও চেকপোস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। মেডিকেল টিম, পানির ব্যবস্থা, ভলান্টিয়ার টিমসহ সমাবেশ পরিচালনায় একটি শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা গঠন করা হয়েছে বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে যখন তীব্র বিতর্ক চলছে, সে সময়ে জামায়াতে ইসলামী ঢাকায় বিশাল সমাবেশ করতে যাচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই সমাবেশে জামায়াত স্মরণকালের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চাইছে।

সমাবেশে আসা বিপুল পরিমাণ লোকের গাড়ি পার্কিং, অজু-নামাজের ব্যবস্থা এবং টয়লেট স্থাপন, মেডিকেল বুথ স্থাপনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটি।

জানা গেছে, এতদিন ঢাকার পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম, পল্টন ময়দানসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অতীতে অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কখনোই এককভাবে বড় সমাবেশ করেনি দলটি।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের মধ্যদিয়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠেন দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ‘জাতীয় সমাবেশ’ করার মাধ্যমে নিজেদের সাংগঠনিক সক্ষমতা জানান দিতে চাইছে দলটি। 

এই সমাবেশে ভিন্ন বা বিশেষ কিছু রয়েছে বলে জানান জামায়াতের নেতারা। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এই সমাবেশে ১০ লাখের বেশি মানুষের অংশগ্রহণের প্রত্যাশা করছে দলটি। সমাবেশ থেকে ‘জাতীয় ঐক্য’ ও ‘কল্যাণ রাষ্ট্র’ গঠনের ডাক দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।