ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

পাকিস্তানের প্রতিবাদ-ক্ষোভ

মাঠে হাত না মেলানোয় বিতর্কের মুখে ভারত

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫, ০২:২০ এএম

এশিয়া কাপের ম্যাচে গত রোববার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান। এ ম্যাচে সহজেই ৭ উইকেটের জয় তুলে নেয় ভারতীয়রা। তবে জয়-পরাজয় ছাপিয়ে মাঠে দুই দলের আচরণ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে ক্রিকেট-বিশে^। ম্যাচ শুরুর আগে টসের সময় সাধারণ দুই দলের অধিনায়ক একে অপরের সঙ্গে করমর্দন করে থাকেন। কিন্তু ভারত ও পাকিস্তানের অধিনায়কের মধ্যে এমন সৌজন্যমূলক আচরণ দেখা যায়নি। পুরো ম্যাচেও মাঠের মধ্যে দুই দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে কোনো কথা হয়নি। ম্যাচ শেষে ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য অপেক্ষায় ছিলেন পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা। কিন্তু জয় নিশ্চিত হওয়ার পর ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা সোজা ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন। এমনকি ড্রেসিংরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন তারা। যাতে পাকিস্তানের কেউই তাদের সঙ্গে কথা বলতে না পারেন। মাঠে ভারতীয় ক্রিকেটাররা হাত না মেলানোয় আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ করেছেন পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আগা। প্রতিবাদস্বরূপ তিনি পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে যাননি। খেলোয়াড়রা মাঠে সৌজন্য না দেখানোয় বিতর্কের মুখে পড়ল ভারত দল। এমন ঘটনায় পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটাররা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চেই ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব তুলে আনলেন পেহেলগাম হামলার প্রসঙ্গ। তারা জয় উৎসর্গ করলেন ভারতের সশস্ত্র বাহিনীকে। ভারতের অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানানো হয়েছে ম্যাচ রেফারিকেও। সব মিলিয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের ক্রিকেটীয় লড়াইয়ে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম হয়ে উঠল যেন যুদ্ধের ময়দান! গত এপ্রিলে কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর নানা ঘটনাপ্রবাহে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল দুই দেশের। সেই যুদ্ধ পরে থেমে গেলেও উত্তেজনার রেশ রয়েই যায়। সেটির জের ধরেই এবার এশিয়া কাপ নিয়ে ছিল অনিশ্চয়তা। ভারতের রাজনীতিবিদদের অনেকে ও বেশ কজন সাবেক ক্রিকেটার ভারতীয় বোর্ডের প্রতি আহ্বান জানান এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ না খেলতে। কিছুদিন আগে ইংল্যান্ডে সাবেকদের টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের সঙ্গে প্রাথমিক পর্বের ম্যাচ বর্জন করার পর সেমিফাইনালও বয়কট করে ভারত। এশিয়া কাপে শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি।

মাঠের ক্রিকেট এবার হলো বটে। পেহেলগাম হামলার পর দুই দল মুখোমুখি হলো প্রথমবার। তবে সেখানে লাগল যুদ্ধের আঁচ। ম্যাচ শেষে পাকিস্তানের কোচ মাইক হেসন পরে সংবাদ সম্মেলনে জানান, তার দল হাত মেলানোর জন্য অপেক্ষা করছিল, কিন্তু ভারতের কাছ থেকেই মেলেনি সাড়া। তিনি বলেন, ‘খেলা শেষে আমরা হাত মেলাতে তৈরি ছিলাম। অবশ্যই আমরা হতাশ যে আমাদের প্রতিপক্ষ দল সেটা করেনি। আমরা একরকম এগিয়েই গিয়েছিলাম হাত মেলাতে, কিন্তু তারা ততক্ষণে ড্রেসিংরুমে ঢুকে গেছে। ম্যাচের সেটি দুঃখজনক এক সমাপ্তি। আমরা যেভাবে খেলেছি, তাতে তো হতাশ ছিলামই, তবে অবশ্যই হাত মেলাতে চেয়েছিলাম।’

অন্যদিকে, সংবাদ সম্মেলনে ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেন, হাত না মেলানোর ব্যাপারটি তাদের পরিকল্পনারই অংশ ছিল। তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার ও বিসিসিআই (বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া)- আমরা আজকে একাত্ম ছিলাম। আমরা এখানে এসেছি এবং একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি (হাত না মেলানোর)। আমরা এখানে এসেছি স্রেফ খেলতে। আমার মনে হয়, উপযুক্ত জবাব আমরা দিয়েছি।’ সৌজন্যমূলক করমর্দন প্রত্যাখ্যান করা খেলাটির চেতনার পরিপন্থি কি না, এমন প্রশ্নে ভারতীয় অধিনায়কের সোজাসুজি জবাব, ‘জীবনে কিছু কিছু ব্যাপার খেলার চেতনাকেও ছাপিয়ে যায়।

পুরস্কার বিতরণীতেও এটা বলেছি, পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার শিকার সবাই ও তাদের পরিবারের পাশে আছি আমরা এবং আমাদের সংহতি প্রকাশ করছি।’ ম্যাচ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর বিবৃতি দিয়ে ভারতের পদক্ষেপকে খেলার চেতনার বিরোধী হিসেবে উল্লেখ করে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। সেখানেই জানানো হয়, ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানানোর কথাও। বলা হয়, ‘ম্যাচ রেফারির আচরণের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ম্যানেজার নাভিদ আকরাম চিমা।

টসের সময় ম্যাচ রেফারিই দুই অধিনায়ককে অনুরোধ করেছিলেন হাত না মেলাতে।’ ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক উত্তেজনার ছাপ বরাবরই ক্রিকেটে পড়েছে। রাজনৈতিক কারণেই প্রতিবেশী দুই দেশ ক্রিকেটের আঙিনাতেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। তবে হাত না মেলানোর ঘটনা ইতিহাসে নজিরবিহীন। দুই দেশের সম্পর্ক যেমনই থাকুক, মাঠের বাইরে দুই দলের ক্রিকেটারদের সম্পর্ক সব সময়ই উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। দুই দেশের ক্রিকেটারদের বন্ধুত্বের অনেক গল্প ক্রিকেটবিশে^ প্রচলিত আছে। এবারের মতো চিত্র আগে কখনো দেখা যায়নি।